:: সংক্ষিপ্ত স্কোর :: ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৫০/৫ (৮৪ ওভার)
শেষ সেশন ওয়েস্ট ইন্ডিজের: সকাল ও দুপুরের সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান যথাক্রমে ৫০ ও ৬৬। বিকেলের সেশনে ১৩৪। পুরো দিনের বর্ণনা করতে কী এতোটুকুই যথেষ্ট নয়? ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিনের দুই সেশনে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু দারুণ ‘কামব্যাকে’ শেষ সেশনটি নিজেদের করে নেয় তারা। লুইস ও আথানাজের দারুণ ফিফটিতে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করে তারা। এই সেশনে বাংলাদেশ ২ উইকেট তুলে দুজনকেই সেঞ্চুরি বঞ্চিত করে। কিন্তু ৪.৪৭ রান রেটে রান তুলে শেষ বিকেলটা রঙিন করে স্বাগতিকরা। ৫ উইকেটে ২৫০ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। দুই দল প্রথম দিনটি ভাগাভাগি করেছে। জাস্টিন গ্রেভস ১১ ও জশুয়া ডি সিলভা ১৪ রানে অপরাজিত রয়েছেন।
তাইজুলের হাত ধরে বাংলাদেশের আরেকটি সাফল্য: সঙ্গী হারানোর পর আথানেজও ফিরলেন সাজঘরে। তিনিও নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার। তাইজুলের বল সুইপ করতে গিয়ে হাওয়ায় ক্যাচ তোলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। লিটন সেই ক্যাচ নিয়ে তাকে ফেরার পথ দেখান। ৯০ রানে থেমে যায় তার ইনিংস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারাল পঞ্চম উইকেট। দ্রুত ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ আবার লড়াইয়ে ফিরল। ১৩০ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় আথানেজ ইনিংসটি সাজান।
মিরাজের পাপমোচন! ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির খুব কাছে দিয়েও পাওয়া হলো না লুইসের। ৯০ রানে মিরাজের হাতে জীবন পাওয়ার পরও পারলেন না ইনিংসটাকে তিন অঙ্কে নিয়ে যেতে। মিরাজকে উইকেট দিয়ে লুইস আউট হলেন ৯৭ রানে। মিরাজের বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়াতে চেয়েছিলেন লুইস। বলে টার্ণ ছিল। এর আগে প্রায় একই রকম ডেলিভারীতে ছক্কা উড়িয়েছিলেন লুইস। এবার সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে তেমন কিছুই চেয়েছিলেন। কিন্তু বল-ব্যাটে টাইমিং মেলেনি। বল ব্যাটের নিচের অংশে চুুমু খেয়ে যায় প্রথম স্লিপে জয়ের হাতে। ক্যাচটা হাতছাড়া করেননি জয়। একরাশ হতাশা নিয়ে লুইস মাঠ ছাড়েন সেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে থাকতে। ২১৮ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি। তার বিদায়ে চতুর্থ উইকেট জুটি ভেঙেছে ১৪০ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ চতুর্থ উইকেট হারাল ২২৪ রানে।
ক্যাচ ছাড়লেন মিরাজ: ৯১ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের। সেঞ্চুরির পথে থাকা ওপেনার লুইস ক্যাচ দিয়েছিলেন স্লিপে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিনায়ক মিরাজ বল তালুবন্দি করতে পারেননি। তাইজুলের ঘূর্ণিতে বল লুইসের ব্যাটে চুমু খেয়ে দ্রুত মিরাজের কাছে যায়। বল ভালো উচ্চতায় ছিল। মিরাজের হাতের মুঠোয় প্রায় জমেও গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অধিনায়ক বল জমিয়ে রাখতে পারেননি। ৯০ রানে জীবন পান লুইস। বাংলাদেশ আজকের দিনে প্রথম ক্যাচ মিস করল।
দ্রুত রান তুলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ: তৃতীয় সেশনের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ঘণ্টাতে ঢিলে বোলিংয়ে রান খরচ করেছেন বোলাররা। ১০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ সময়ে কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলেছে ৫৯ রান। বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি এসেছে অনায়েসে। সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশ উইকেটের খোঁজে। থিতু হয়ে যাওয়া এই জুটি থেকে পর্যন্ত এসেছে ৯১ রান। সেঞ্চুরির পথে আছেন ওপেনার লুইস, ৯০। আথানেজ তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে অপরাজিত আছেন ৪৯ রানে।
দ্বিতীয় সেশন: ৩১ ওভার, ৬৬ রান ও ১ উইকেট:
সকালের সেশনটা ছিল শুধুই বাংলাদেশের। বাংলাদেশের তিন পেসারের দাপটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশিদূর যায়নি। হারায় ৩ উইকেট। মধ্যাহ্ন বিরতির পর দ্বিতীয় সেশনটি অবশ্য দুই দল ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এই সেশনে মোট ৩১ ওভার খেলা হয়েছে। রান হয়েছে ৬৬। উইকেট গেছে ১টি। রান রেট ২.১৪।
তিন পেসার তাসকিন, শরিফুল ও হাসানের সঙ্গে দুই স্পিনার মিরাজ ও তাইজুল জমাট বোলিং করেছেন। আলগা বোলিং করে প্রতিপক্ষকে সহজেই রান নিতে দেননি। চাপে রাখছেন ব্যাটসম্যানদের। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার লুইস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট ফিফটি তুলে ৭১ রানে অপরাজিত আছেন। আলিক আথানেজ ব্যাটিং করছেন ১৩ রানে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তাদের সংগ্রহ ৩২ রান।
শতরান পেরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ: দলীয় পঞ্চাশ রান ২৩ ওভারে ছুঁয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের পঞ্চাশ রান তুলতেও তাদের লাগল ২৩ ওভার। উইকেটে ব্যাটিং করছেন ওপেনার লুইস ও আথানেজ। ২ উইকেট তুলে, রানের চাকা আটকে রেখে প্রথম সেশনটি বাংলাদেশ নিজেদের করে নিয়েছিল। দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশের সাফল্য এক উইকেট।
রান আউটে জুটি ভেঙে বাংলাদেশের তৃতীয় সাফল্য: মিরাজের বল ফাইন লেগে পাঠিয়ে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন হজ। সতীর্থ লুইস সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু ওখানে তাইজুল ছিলেন ক্ষীপ্র। এক হাতে বল তুলে নিখুঁত থ্রো করেন লিটনকে। স্টাম্প ঘেঁষে দাঁড়ানো লিটন বল পেয়ে উইকেট ভাঙতে দেরি করেননি। হজ ডাইভ দিয়ে উইকেট বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। রান আউটে ২৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ মধ্যাহ্ন বিরতির পর পেল প্রথম উইকেটের স্বাদ, সব মিলিয়ে তৃতীয়। ১৩০ বলে ৫৯ রানের জুটি গড়েছিলেন গজ ও লুইস। ৮৪ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারাল তৃতীয় উইকেট। লুইসের নতুন সঙ্গী আলিক আথানেজ।
লুইস-হজে উইন্ডিজের প্রতিরোধ: তাসকিনের টানা দুই ওভারে দুই উইকেট হারালেও দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নতুন ব্যাটার হজকে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছেন ওপেনার লুইস। ফিফটির খুব কাছে আছেন লুইস, অন্যপ্রান্তে হজ এগোচ্ছেন ধীরে ধীরে। দুজনের জুটি থেকে এখন পর্যন্ত আসে ৮২ বলে ৪০ রান।
দাপুটে বোলিংয়ের পর মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশ: সতর্ক শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম উইকেটের জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৪তম ওভার পর্যন্ত। এক ওভার বিরতি দিয়ে আরও একটি উইকেট নেয় লাল সবুজের দল। দুটি উইকেটই জমা হয় তাসকিনের ঝুলিতে। মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ মাত্র ৫০ রান, হারিয়েছে ২ উইকেট। বাংলাদেশের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে রানের পসরা সাজাতে পারেনি স্বাগতিক শিবির। ক্রিজে আছেন লুইস (৩৬) ও হজ (১০)। ২৩ ওভারের মধ্যে ২২টি করেছেন তিন পেসার। ১ ওভার করেন স্পিনার তাইজুল।
টানা দুই ওভারে তাসকিনের দুই উইকেট: ১৪তম ওভারে ফিরিয়েছেন ওপেনার ব্র্যাথওয়েটকে। ষোলোতম ওভারে এসে সাজঘরে পাঠান নতুন ব্যাটার কার্টিকে। মিডল ও লেগ স্ট্যাম্পের মাঝামাঝি লেন্থ বলে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন কার্টি। কিন্তু টাইমিংয়ে মেলেনি। বল চলে যায় মিড অনে দাঁড়ানো তাইজুলের হাতে। ৮ বল খেলে কোনো রানই করতে পারেননি এই ব্যাটার। ২৭ রানে ২ উইকেট হারালো উইন্ডিজ। তাসকিন ১৩ রানে নেন ২ উইকেট। ক্রিজে লুইসের সঙ্গী কাভিম হজ।
তাসকিনের তোপে অবশেষে মিলল উইকেটের দেখা: সতর্ক শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ওপেনার ব্র্যাথওয়েট-লুইস খেলছিলেন দেখেশুনে। ১৩ ওভার পার হয়ে গেলেও দুজনে কোনো সুযোগও দেননি। অবশেষে ১৪তম ওভারে তাসকিন তৈরি করেছেন সুযোগ। সাজঘরে পাঠিয়েছেন ব্র্যাথওয়েটকে। আউটসাইড অফে পড়ে বল ঢুকছিল ভেতরের দিকে। ব্র্যাথওয়েট ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাটে-বলে এক হয়নি। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি ব্র্যাথওয়েটের। ৩৮ বলে ৪ রান করেন তিনি। ২৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিক শিবির। ক্রিজে লুইসের সঙ্গী কেসি কার্টি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সতর্ক শুরু: হাসান মাহমুদের মেইডেন ওভারে শুরু হয় অ্যান্টিগা টেস্ট। ষষ্ঠ ওভার শেষেও স্কোরবোর্ডে দুই অঙ্কের মুখ দেখেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অন্য প্রান্তে আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও কৃপণ বোলিং করেন। সমান তিন ওভার করে দুজনে রান দিয়েছেন মাত্র ৯টি। তার মধ্যে হাসান ৭ ও শরিফুল দেন ২ রান। দুই ওপেনার ব্র্যাথওয়েট-লুইস নিচ্ছেন না কোনো ঝুঁকি।
তিন পেসার নিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে যারা: দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি বাংলাদেশ। অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছে লাল সবুজের দল। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় খেলাটি শুরু হবে।
বাংলাদেশ একাদশ: বাংলাদেশ একাদশ সাজিয়েছে তিন পেসার নিয়ে। তাসকিন আহমেদের সঙ্গী হাসান মাহমুদ-শরিফুল ইসলাম। স্পিনে তাইজুল ইসলাম-মেহেদি হাসান মিরাজ।
একদাশে যারা— মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হাসান, মুমিনুল হক, শাহাদাত হোসেন দিপু, লিটন দাস, জাকের আলী, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), মিকাইল লুইস, আলিক আথানেজ, কেসি কার্টি, জশুয়া ডি সিলভা, জাস্টিন গ্রিভস, কাভিম হজ, আলজারি জোসেফ, শামার জোসেফ, কেমার কোচ ও জেডন সিলস।
ফিফটির ম্যাচে মিরাজের নেতৃত্বের অভিষেক: এই ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে হবে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বের অভিষেক। তিনি হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ১৪তম টেস্ট অধিনায়ক। নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকায় সহ-অধিনায়ক মিরাজের কাঁধে উঠেছে নেতৃত্বের ভার। আফগানিস্তান সিরিজে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যান শান্ত।
বৈরি আবহাওয়া: অ্যান্টিগার আবহাওয়া বলছে ভিন্ন কথা। পূর্বাভাসে পাঁচ দিনেই আছে বৃষ্টি। টস জেতা একটা মুখ্য বিষয় হতে পারে। তবে মাঠের পারফরম্যান্সই আসল। কতক্ষণ খেলা মাঠে গড়ায় এটাই দেখার বিষয়।
কী বলছে পরিসংখ্যান: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাদা পোশাকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বলা যায় ধূসর। ২০ টেস্ট খেলে জয় মাত্র ৪টিতে। ২টিতে ড্র। বাকি ১৪ ম্যাচে মেনে নিতে হয়েছে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ। অ্যান্টিগায় সবশেষ ম্যাচে ২০২২ সালে বাংলাদেশ হেরেছে ৭ উইকেটে। সবশেষ বাংলাদেশ জয়ের দেখা পেয়েছিল মিরপুরে, ২০১৮ সালে।
অ্যান্টিগার দুঃসহ স্মৃতি: অ্যান্টিগায় ১০৩ ও ৪৩ রানে অলআউটের বাজে রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের। তবে এসব ভুলে সামনে এগোতে চাইছেন মিরাজ, “এর আগে আমরা অ্যান্টিগায় ভালো টেস্ট খেলিনি। আমরা খুব বাজেভাবে হেরেছি। এবার আমরা নতুনভাবে এসেছি”।
বাংলাদেশের লক্ষ্য জয়: জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে মিরাজ অ্যান্ড কোং, “আমাদের টার্গেট থাকবে অবশ্যই ভালো ক্রিকেট খেলার জন্য। কারণ এর আগে আমরা যখন এখানে খেলেছিলাম, টেস্ট ক্রিকেটে অতটা ভালো করতে পারিনি। বিশেষ করে একটাও জিততে পারিনি। শেষ চার বছরে যদি দেখি এখানে দুটো ম্যাচ খেলেছিলাম। আমাদের লক্ষ্য থাকবে জেতার জন্য এবং সবাই যেন পারফর্ম করে।”