পেসার আলজারি জোসেফ তখন ভয়ংকর রূপে। একের পর এক বাউন্সার দিয়ে যাচ্ছিলেন। ভুগছিলেন বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। হাসান মাহমুদ বিচক্ষণতা দেখালেন। মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন। ডানহাতি পেসারের হুট করে পাওয়া ফুলার লেন্থের বল পা এগিয়ে ড্রাইভ করলেন হাসান।
বাংলাদেশের স্কোর তখন ২৪৮। ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৪৫০ রানের জবাবে ফলোঅন এড়াতে ২৫০ রান পেরিয়ে যেতে হতো বাংলাদেশকে। হাসানের ওই শটে বাংলাদেশের পুঁজিতে যোগ হয় ৩ রান। ফলোঅন এড়ানোর স্বস্তি অতিথি শিবিরে। অ্যান্টিগার ড্রেসিংরুমের চিত্রটা তখন দেখানো হয়নি। তবে নিশ্চিতভাবে মিরাজ অ্যান্ড কোং হাফ ছেঁড়ে বেঁচেছেন। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে আরেকবার অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি।
বাংলাদেশ তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ৯ উইকেটে ২৬৯ রানে। ফলোঅন এড়ালেও বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এখনও বাংলাদেশ ১৮১ রানে পিছিয়ে। তাসকিন ১১, শরিফুল ৫ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান টপকে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জটা ছিল ফলো অন এড়ানোর। অ্যান্টিগায় সেই কাজটা করার জন্য অভিজ্ঞ মুমিনুল ও লিটনের ওপর দায়িত্ব ছিল বেশি। কিন্তু দুজনই থিতু হওয়ার পর উইকেট বিলিয়ে আসেন। এরপর মিরাজ ছিলেন বলে আশা ছিল। হাল ছেড়েছেন তিনিও। শেষ পর্যন্ত জাকের আলীর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিতে স্বস্তি ফেরে। তার ৫৩ এবং তাইজুলের ২৫ রানের ইনিংসে রক্ষা হয় বাংলাদেশের।
তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল সাবধানী। প্রথম ঘণ্টায় মুমিনুল ও শাহাদাত মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। তাতে রান কম আসলেও সকালের সেশনের শুরুর বিপদ ভালোভাবে কেটে যায়। আলজারি জোসেফ ও শামার জোসেফ শুরু ৬ ওভারে তাদের মনোযোগে চিড় ধরাতে পারেননি। তবে অভিজ্ঞ কেমার রোচ নিজের কারিশমা দেখিয়েছেন। বোলিংয়ে এসে নিজের চতুর্থ ওভারে তুলে নেন শাহাদাতের উইকেট। মনোযোগ দিয়ে ব্যাটিং করা শাহাদাত রোচের একটু সুইং করা ডেলিভারীতে পা বাড়িয়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ঠিকঠাক টাইমিং মেলেনি। ব্যাটের চুমু খেয়ে বল সোজা চলে যায় প্রথম স্লিজে হজের হাতে। দলে ফিরে ৭১ বলে ১ চারে ১৮ রান করেন শাহাদাত।
লিটন ও মুমিনুল এরপর দলের হাল ধরেন। দ্বিতীয় ঘণ্টা অনায়েসে খেলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান। এরপরও ফিরে দারুণ ব্যাটিং করছিলেন। মনে হচ্ছিল দুই সিনিয়র ক্রিকেটার দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করে বাংলাদেশকে বিপদমুক্ত করবেন। কিন্তু তাদের জুটির রান ৬২-এ পৌঁছানোর পরপরই মুমিনুল ফেরেন সাজঘরে। লিটন কিছুক্ষণ পরই তাকে অনুসরণ করেন।
মুমিনুল ২১তম ফিফটি তুলে মনোযোগ স্থির রাখতে পারেননি। পেসার জেডেন সিলসের মিডল স্টাম্পের বল অন সাইডে খেলার চেষ্টায় মিস করেন। স্বাগতিকদের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেন। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন মুমিনুল। তাতে কোনো লাভ হয়নি। ৩ চারে ১১৬ বলে ৫০ রান করেন মুমিনুল।
তাড়াহুড়োয় লিটনও উইকেট বিলিয়ে আসেন। দৃষ্টিনন্দন স্কোরিং শটে লিটন এগিয়ে যাচ্ছিলেন ভালোভাবেই। কিন্তু শামার জোসেফের বলে তাকে থামতে হয় ৪০ রানে। অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল পুল করতে চেয়ে স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন লিটন। ৭৬ বলে ৩ চারে সাজানো ইনিংসটি থেমে যায় সেখানে।
লিটন যখন সাজঘরে ফেরেন তখনও বাংলাদেশ ফলো অন এড়াতে প্রয়োজন ছিল ১০৬ রান। ভরসা ছিল অধিনায়ক মিরাজের উপর। কিন্তু জোসেফের বাউন্সারে কুপোকাত মিরাজও। চা-বিরতির পর ফিরে দ্বিতীয় ওভারে জোসেফের বাউন্সারে ব্যাট সরাতে পারেননি। ক্যাচ দেন লুইসের হাতে ২৩ রানে। ৩ চারে ৬৭ বলে সাজান ইনিংসটি।
সপ্তম উইকেটে জাকের ও তাইজুল ১১৫ বল কাটিয়ে দেন। দুই ঘণ্টার কাছাকাছি সময় ব্যাটিং করে ৬৮ রান যোগ করেন। বল পুরোনো হওয়ায় তাদের ব্যাটিং কিছুটা সহজ ছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল আক্রমণাত্মক। তারা ঠিকই উইকেট আদায় করে নেন। তাইজুল স্কোরবোর্ডে ২৫ রান করে জোসেফের বলে বোল্ড হন। জাকের নিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি করেছিলেন। এবারও কঠিন সময়ে হাল ধরে পেয়েছেন ফিফটির স্বাদ। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। ছক্কায় ফলোঅন এড়ানোর চেষ্টায় বড় খেলেছিলেন জাকের। জাস্টিন গ্রেভসের বল এগিয়ে এসে উড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সীমানায় দারুণ ক্যাচ দেন জেডেন সিলস। ৮৯ বলে চারটি চারে ৫৩ রান করে ফেরেন জাকের। সেখান থেকে হাসান, তাসকিন ও শরিফুলের ছোট ছোট অবদানে বাংলাদেশ দিনের খেলা শেষ করে ফলোঅন এড়ানোর স্বস্তি নিয়ে।
চতুর্থ দিনে ব্যবধান যতটা সম্ভব কমানোর দিকেই থাকবে দুই ব্যাটসম্যানের নজর।