খেলাধুলা

ধবলধোলাইয়ে সংক্রান্তি রাঙালো বাংলাদেশ

দারুণ এক জয় দিয়ে বছর শেষ করলো বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর, ২০২৪) সকালে সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর এই জয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অল্প অর্জনের শীর্ণ পাখায় কয়েকটি পালক যুক্ত করেছে। এই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করার কৃতিত্ব দেখালো বাংলাদেশ। ১২ বছর পর বিদেশের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে আরও একটি সিরিজ জিতলো টাইগাররা। আর ষষ্ঠবারের মতো কোনো দলকে ধবলধোলাই করলো।

এক ম্যাচ আগেই সিরিজ জেতা বাংলাদেশের এদিন শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। ৪.৩ বলেই পারভেজ হোসেন ইমন ও লিটন দাস তুলে ফেলেছিলেন ৪৪ রান। এই রানে লিটন সাজঘরে ফেরেন রোমারিও শেফার্ডের বলে শর্ট কাভারে ব্রান্ডন কিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে।

ইনজুরি আক্রান্ত সৌম্যর জায়গায় খেলতে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং করা ইমনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটন ফেরার পর। ৫৪ রানের মাথায় আলজারি জোসেফের বলে জাস্টিন গ্রেভেসের হাতে ধরা পড়েন ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রানের ইনিংস খেলে।

নতুন ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিম ব্যক্তিগত ৯ রানে গুদাকেশ তোমির শিকার হন। দলীয় রান তখন ৬৫। সেখান থেকে মেহেদী হাসান মিরাজ ও জাকের আলী অনিক দলীয় সংগ্রহকে টেনে নেন ১০২ রান পর্যন্ত। এ সময় হাত খুলে মারতে থাকা মিরাজ রোস্টন চেজের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে গ্রেভসের হাতে ধরা পড়েন। ২৩ বলে ৩ চারে ২৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

১১৪ রানের মাথায় ঘটে নাটকীয় ঘটনা। এ সময় জাকের আলী স্কয়ার লেগে বল ঠেলে দিয়ে দ্রুত দুই রান করার চেষ্টা করেন। এক রান হওয়ার পর দ্বিতীয় রান নিতে জাকের দৌড় দিলেও শামীম পাটোয়ারী সাড়া দেননি। তাতে দুজনই থাকেন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। চেস অপর প্রান্তের স্ট্যাম্প ভাঙেন। জাকের আউট হয়েছেন মনে করে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান রাগে গজগজ করতে করতে। কিন্তু আম্পায়াররা ভিডিও রিপ্লেতে দেখেন শামীমের আগে ক্রিজে ব্যাট রেখেছিলেন জাকের। অর্থাৎ ৪ বলে ২ রান করা শামীম আউট। জাকের আবার ড্রেসিং রুম থেকে ফিরে আসেন।

এই ফিরে আসাটা তিনি রাঙান ব্যাট হাতে ঝড় তুলে। যখন পুনরায় ফিরে আসেন তখন ১৯ বলে ১ ছক্কায় তার রান ছিল ১৮। এরপর ২২ বল মোকাবিলা করে ৫টি ছক্কা ও ৩টি চার মেরে ৫৪ রান তোলেন। ৪১ বলে ৩টি চার ও ৬ ছক্কায় ১৭৫ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস খেলেন জাকের। শেষ ওভারে জোসেফকে ৬ ছক্কা ও ১ চার মেরে ২৫ রান তোলেন। তাতে বাংলাদেশের রান ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৯ পর্যন্ত যায়।

বল হাতে রোমারিও শেফার্ড ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন। কিপ্টে বোলিং করেন চেস। তিনি ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ১টি উইকে ও মোতি ৩ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নেন ১টি উইকেট। সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিলেন জোসেফ। ৪ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন তিনি।

১৯০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় সংগ্রহে কোনো রান যোগ না করতেই উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাসকিন আহমেদের দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান কিং। সপ্তম রানের মাথায় মাহেদী হাসানও আঘাত করেন ক্যারিবিয়ান শিবিরে। তিনি ফেরান গ্রেভসকে (৬)।

সেখান থেকে জনসন চার্লস ও নিকোলাস পুরান ৩৮ রান যোগ করেন দলীয় সংগ্রহে। ৪৫ রানের মাথায় পুরানকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন মাহেদী। নতুন ব্যাটসম্যান চেসকে কোনো রান করতে না দিয়েই ফেরান হাসান মাহমুদ। স্বাগতিকদের রান তখন ৪ উইকেটে ৪৬। একই ওভারের পঞ্চম বলে চার্লসকে ফেরানো হয় রানআউট করে। ৪টি চারে ২৩ রান করেন তিনি।

এরপর শেফার্ড ও মোতি একটু চেষ্টা করেন। সপ্তম উইকেটে তারা দলীয় সংগ্রহে ৩৫ রান যোগ করেন। ততোক্ষণে জয়ের বন্দর থেকে ক্রমেই সরে যাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৯৫ রানের মাথায় মোতিকে ও ৯৭ রানের মাথায় জোসেফকে ফিরিয়ে জয়টা হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন রিশাদ হোসেন। এরপর ১০১ রানের মাথায় থিতু হওয়া শেফার্ডকে তানজিম সাকিব আউট করেন। আর ১০৯ রানের মাথায় ওবেদ ম্যাককয়কে বোল্ড করে তাসকিন ৮০ রানের জয় নিশ্চিত করেন।

রিশাদ ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। মাহেদী ৩ ওভারে ১৩ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। আর তাসকিন ৩.৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট।

ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন জাকের আলী। আর ৮ উইকেট ও ৩৭ রান করে সিরিজ সেরা হন মাহেদী।