“অধিনায়কত্বের বিষয়ে আমি বলব, বিসিবি যদি দেয়, করতে রাজি আছি। এই বিষয়ে দ্বিমত থাকার কোনো কথা না।’’ -ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্বাগতিকদের ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর নিজের মনের ভাবনা এভাবেই বলছিলেন লিটন কুমার দাস।
অথচ গত সপ্তাহেই তাকে নিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর ভাবনা ছিল এরকম, ‘‘যদি তার সাময়িক বিরতি প্রয়োজন হয়, সেজন্যও কোচরা আছেন।’’
গাজী আশরাফ হোসেন লিটনের ওয়ানডে পারফরম্যান্স নিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে তার পারফরম্যান্স একই ছকে আটকানো। ওয়ানডে ক্রিকেটে শেষ সাত ইনিংসে লিটন দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার রান ছিল, ২, ৪ ও শূন্য। টি-টোয়েন্টি সিরিজে রানগুলো যথাক্রমে শূন্য, ৩ ও ১৪। সীমিত পরিসরের ক্রিকেটের সঙ্গে লাল বলেও ভুগছেন লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে দুই টেস্টে চার ইনিংসে তার রান যথাক্রমে ৪০, ২২, ১ ও ২৫।
রান না পাওয়ার থেকে সবচেয়ে উদ্বেগের জায়গা তার আউট হওয়ার ধরন। একই ভুল বারবার করছেন। সঙ্গে রান না পাওয়া বাড়তি চাপে ঝুঁকি নিচ্ছেন। তাতে ফলাফল হচ্ছে আরো বাজে। দৃষ্টিকটু শট নির্বাচন করে উইকেট বিলিয়ে আসছেন প্রতিপক্ষকে। ক্রিকেটে লিটনের ধারাবাহিক ছন্দহীনতায় চিন্তার ভাজ প্রধান নির্বাচকের কপালে,‘‘আমরা তার আউট হওয়ার ধরন নিয়ে অবশ্যই চিন্তিত। ভবিষ্যতে যদি (ব্যাটিংয়ের) কিছু মেরামতের প্রয়োজন হয়, কোচরা আছেন।’’
পুরো বছরের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করলে বিশাল ঘাটতির দেখা মিলবে। সব মিলিয়ে ৩৫ ম্যাচে মাত্র ৭০৯ রান করেছেন। যেখানে তার ব্যাটিং গড় মাত্র ১৭.৭২। ১ সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি কেবল ২টি। ক্যারিয়ারের ২৩ ডাকের ৬টিই পেয়েছেন এ বছর। গত বছর ৪০ ম্যাচে ১১১৫ রান করেছেন ৩০.৯৭ গড়ে। কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও ৮ ফিফটি পেয়েছিলেন। অথচ ২০২২ সালে লিটন ৪২ ম্যাচে রান করেছিলেন ১৯২১। গড় ছিল ৪০.০২। ৩ সেঞ্চুরির সঙ্গে ছিল ১৩ ফিফটি।
পারফরম্যান্সের ঘাটতির কারণে এ বছর তাকে দল থেকে সরিয়েও রেখেছেন নির্বাচকরা। ফিরিয়ে এনেও সাদা বলের ক্রিকেটে তেমন সুফল মেলেনি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তার অধিনায়কত্ব প্রশংসা কুড়াচ্ছে। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর পুরো দলকে যেভাবে চাঙ্গা রেখেছেন, উজ্জীবিত রেখেছেন তা মাঠে বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। সঙ্গে বোলিং পরিবর্তন, মাঠ সাজানো, বোলারদের উদ্দেশ্যে তার অনুপ্রেরণামূলক কথা এবং চাপের মধ্যে মনোবল না হারানোর যে মনোভাব দেখা মিলিছে তা ছিল চোখে পড়ার মতো।
তাই-তো অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সহজ স্বীকারক্তি দিয়েছেন লিটন, ‘‘“অধিনায়কত্বের বিষয়ে আমি বলব, বিসিবি যদি দেয়, করতে রাজি আছি। এই বিষয়ে দ্বিমত থাকার কোনো কথা না। আমি এটা উপভোগ করছি। বোলাররা যদি খুব ভালো বল করে দেয়, উইকেটের পেছন থেকে আমার জন্য কাজটা খুব সহজ।”
নিজের ব্যাটিং নিয়ে উদ্বিগ্ন লিটন নিজেও। তবে শিগগিরিই ফর্মে ফিরতে আশাবাদী তিনি, ‘‘ব্যাটিং নিয়ে চেষ্টা করছি, যেহেতু তিন সংস্করণেই খেলেছি, লাগাতার খারাপ গেছে। চেষ্টা করছি, সালাহউদ্দিন স্যারের সঙ্গে কাজ করছি, তিনি অনেক সাহায্য করছেন। প্রত্যেকটা খেলোয়াড় স্যারের সঙ্গে ফ্রি, স্যার খুব ছোট থেকে সব খেলোয়াড়কে চেনেন। ব্যাক অফ মাইন্ডে এটা অনেক সাহায্য করছে। স্যারের সঙ্গে কথা বললে ক্রিকেট–বিষয়ক অনেক হেল্প হয়। আমিও স্যারের সঙ্গে কথা বলছি। মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি এটা থেকে বের হয়ে আসতে পারব।’’
গাজী আশরাফের আশা, জয়ী অধিনায়ক হিসেবে মাঠ ছাড়ার অনুপ্রেরণা সাহায্য করবে লিটনকেও, ‘‘তবে ইতিবাচক বিষয় আমি যেটা দেখি, ছন্দহীন একজন ব্যাটসম্যান যখন নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরও সেটা (ছন্দহীনতা) ধারাবাহিক রেখেছেন, তখন তার দল তাকে যে সমর্থন দিয়েছে বিজয়ী দলের অধিনায়ক করে, এটা হয়তো তাকে অনুপ্রাণিত করবে। আমি মনে করি, অধিনায়কের জন্য দারুণ কাজ করেছে দল।”