দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি কনাসর্ট আয়োজনে ধারাবাহিক উদারতা দেখিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সংগীত শিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানকে দিয়ে মাত্র একটি গান করাতে খরচ দিতে হয়েছিল দুই কোটি টাকা। আর এবার পাকিস্তানের জনপ্রিয় কাওয়ালি শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খানকে এক কনসার্টের জন্য দেওয়া হচ্ছে সাড়ে তিন কোটি টাকা।
ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্ট মাতিয়েছেন পাকিস্তানের সংগীত শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনামূল্যে পারফর্ম করেছেন বিখ্যাত এই শিল্পী। এ জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে বিপুল বাহবা কুড়িয়েছেন তিনি।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় যখন রাহাত ফতেহ আলী কাওয়ালিতে ঢাকা মাতাচ্ছেন তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বিপিএল মিউজিক ফেস্টের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা পারিশ্রমিক দেবে।
শনিবার আটজন পরিচালকের উপস্থিতিতে বোর্ড সভায় বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়ে দেন কনসার্টের জন্য ফতেহ আলীকে সাড়ে তিন কোটি টাকা দেওয়া হবে। দুজন পরিচালক জুমে মিটিংয়ে যুক্ত ছিলেন। সিদ্ধান্তের বিষয়টি সভায় উপস্থিত বিসিবির একজন পরিচালক রাইজিংবিডি ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
২৩ ডিসেম্বর সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মিউজিক্যাল ফেস্টে পারফর্ম করবেন উপমহাদেশের জনপ্রিয় কাওয়ালি শিল্পী ফতেহ আলী।
‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ ও ‘বিপিএল মিউজিক ফেস্ট’- এই দুটি কনসার্টের জন্য শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকায় আসেন ফতেহ আলী। সঙ্গে রয়েছেন তার দলের সদস্যরা।
শুক্রবার রাত পৌনে ১২টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন ফতেহ আলী খান। বিমানবন্দর থেকে রাত ১টার দিকে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ওঠেন। শনিবার রাতে সুরের ঝংকারে মাতিয়ে তোলেন আর্মি স্টেডিয়াম।
‘ইকোস অব রেভ্যুলেশন’ কনসার্ট থেকে আসা আয় দেওয়া হচ্ছে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে। ফতেহ আলীও কোনো পারিশ্রমিক নেননি। অথচ এক দিন বাদেই বিসিবির আয়োজেন মিউজিক ফেস্টে তিনি নিচ্ছে মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক। কিন্তু কেন এত টাকা নিচ্ছেন ফতেহ আলী খান? তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে কথাবার্তা।
করাচিভিত্তিক মিডিয়া ‘বোল নিউজ’ ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে জানায়, বিদেশে কনসার্টের জন্য ফতেহ আলী ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা নিয়ে থাকেন। হিসাবটি এক বছর আগের। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা বাড়তে পারে সেই অর্থমূল্য। এক বছর আগের এই মূল্য বর্তমানে হিসাব করলে সর্বোচ্চ দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টাকাই হতে পারে। তবে বিসিবি যে অর্থ দিচ্ছে, তা প্রায় চার গুণ।
বিবিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মোটা অঙ্কে বিসিবির কনসার্টে পারফর্মের শর্তেই ‘ইকোস অব রেভ্যুলেশন’ কনসার্টে বিনামূল্য পারফর্ম করেছেন রাহাত ফতেহ আলী।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বোর্ডে ব্যাপক রদবদল ঘটে অন্তর্বর্তী সরকারের চাওয়া অনুযায়ী। এবারের বিপিএলেও ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে জুলাই অভ্যুথানের নানা বিষয়।
সব মিলিয়ে বিসিবিও এই অর্থ খরচ করতে কার্পণ্য করছে না। সাড়া দিয়েছে পৃষ্ঠপোষক কোম্পানিও। মিউজিক্যাল ফেস্টের জন্য একটি ব্যাংক পৃষ্ঠপোষকতা করছে পাঁচ কোটি টাকা।
এক গানে পাপনের বোর্ড দেয় ২ কোটি টাকা নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডেও বড় খরচের নজির রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব হান্ড্রেড’ কনসার্টের আয়োজন করে বিসিবি। করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পর ২০২২ সালের মার্চে মিরপুরে পারফর্ম করেন ভারতের সংগীত শিল্পী এ আর রহমান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গীতিকার জুলফিকার রাসেলের কথায় ‘জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ’ গেয়ে শোনান এ আর রহমান। গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেন তিনি নিজেই। এটিই ছিল প্রথম কোনো বাংলা গান, যা তিনি নিজেই গেয়ে শোনান।
এই গানটি তৈরির জন্য বিসিবি এ আর রহমানকে ২ কোটি টাকা দেয়। তৎকালীন বোর্ডের নথি পর্যালোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে রাইজিংবিডি ডটকম। আর পুরো কনসার্টের জন্য বিসিবির ব্যয় ছিল প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা।