খেলাধুলা

বীরদর্পে আগমনের পর চূর্ণবিচূর্ণ ২২ গজ

দেশের ক্রিকেটের সফলতম ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার চূড়ান্তভাবেই শেষ। এর আগেও একবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছিলেন। কিন্তু নানা ঘটনার পর ফিরে এসেছিলেন। এবার ফেরার কোনো সম্ভাবনাই নেই। 

২০০৭ সাল থেকে ২০২৫,  লম্বা এই সময়ে ব্যাট হাতে অনবদ্য সাফল্যগাঁথায় অর্জনের ঝুলি পূর্ণ করেছেন তামিম। করেছেন দারুণ সব কীর্তি। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে পনের হাজারেরও বেশি রান, দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ২৫ সেঞ্চুরিসহ কত কিছু। 

সব অর্জনের ভেতরে গিয়ে তার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় ৫ মুহূর্ত খোঁজার চেষ্টা করেছে রাইজিংবিডির ক্রীড়া বিভাগ। 

‘ছোট মরিচের ঝাল বেশি’

তখন জহির খানকে ছক্কা মারা বড় কোনো বিষয় ছিল না। কিন্তু সতেরো পেরুনো একজনের জন্য বিরাট কিছু। আবার সেটা যদি হয় ডাউন দ্য উইকেটে এসে সপাটে ব্যাট চালিয়ে বল গ্যালারিতে আছড়ে ফেলা…২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের পেসার জহির খানকে এভাবেই পোর্ট অব স্পেনের গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেছিলেন তামিম। 

ওই শটের ব্যাখ্যায় ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ বলেছিলেন, “এটা দেখুন…১৭ বছরের ছেলের কাণ্ডটা দেখুন। তার চাইতে বড় একজনকে ন্যূনতম কোনো সম্মানটাই দেখাল না।’’ তামিমের ৫৩ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৫১ রানের ইনিংসটি দিয়ে বাংলাদেশ শুধু সেই ম্যাচে ভারতকে হারায়নি…বিশ্ব ক্রিকেটকেও জানান দেয়, তামিম এসে গেছে। এরপর থেকে ধারাবাহিকতার পথে হেঁটেছে তামিমের ব্যাট। উত্থান-পতন দেখেছেন। সব জয় করেই তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রান করেছেন। যা এমনি এমনি তো আর হয়নি।  

আমার নামটা লিখো…

দৌড়ে গিয়ে একটা লাফ দিলেন। এরপর কয়েকবার জার্সির পেছন দিকে হাত দিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে দেখালেন। বোঝাতে চাইলেন, লর্ডসের অনার্স বোর্ডে আমার নামটি লিখে ফেলো! ২০১০ সালে লর্ডসে সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবালের রাজকীয় উদযাপন আজও ক্রিকেটপ্রেমিদের চোখের সামনে ভেসে উঠে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ চার আর ২ ছয়ে মাত্র ৯৪ বলে সেঞ্চুরি। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র তিন অঙ্ক ছোঁয়া ইনিংস। ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে যখন টিম ব্রেসনানকে মিড অনের ওপর দিয়ে তুলে চার মারলেন, তামিমের নামটি উঠে গেল অনার্স বোর্ডে। বিনোদনে ঠাসা এক ইনিংস খেলে তামিম বাজিমাত করেন ইংলিশ কন্ডিশন।

এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ…

বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে তামিমের রয়েছে টানা পাঁচ ফিফটি। যার চারটিই এসেছিল ২০১২ এশিয়া কাপে। প্রাথমিক দল থেকে বাদ পড়া। বিতর্কের পর তাকে দলে নেওয়া। সব কিছুকে পেছনে ফেলে তামিম এশিয়া কাপের মঞ্চে হাঁকালেন টানা চার ফিফটি। এশিয়া কাপের ফাইনালে তামিমের চার ফিফটির উদযাপন করেছিলেন একে একে চার আঙুল তুলে। এশিয়া কাপের পর ঠিক পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফিফটির দেখা পান দেশের সেরা এই ওপেনার।

জোড়া ফিফটিও যেন সেঞ্চুরির চেয়ে বড়!

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরপুরে ২০১৭ সালের টেস্টে তামিম ছিলেন দুর্বার। জয় পাওয়া সেই ম্যাচে মিরপুরের ২২ গজে ব্যাটিং করা ছিল বিরুদ্ধ। প্রথম ইনিংসে ১৪৪ বলে ৭১ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৫ বলে ৭৮ রান করে ব্যাটিংয়ে তামিম ব্যবধান গড়ে দেন। নামের পাশে তামিমের রয়েছে ২৫ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। কিন্তু তার কাছে এই জোড়া ফিফটি সেঞ্চুরির চেয়েও অনেক বড়।

এক হাতে তামিম, পেছনে পুরো বাংলাদেশ

দুবাইতে ২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তামিম ইকবালের ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাট করতে নামার দৃশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই স্মরণীয় এক ছবি। তার এক হাতে ব্যান্ডেজ পড়ানো। আরেক হাতে ব্যাট-গ্লাভস। ওই মুহূর্তে এক হাতে এক বল খেলেছিলেন তামিম। সুরঙ্গা লাকমলের বাউন্সারে আঘাত পেয়ে তিন বল খেলেই উঠে গিয়েছিলেন এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে। পরবর্তীতে দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ফেরেন তখন তার হাতে ব্যান্ডেজ। 

৪৭তম ওভারে মোস্তাফিজ আউট না হলে হয়তো তার মাঠে নামা লাগত না। কিন্তু মুশফিক ক্রিজে থাকায় তামিম সাহসটা দেখিয়েছিলেন। এক বল খেলে মুশফিককে দিয়েছেন সঙ্গ। সেখান থেকে তাদের জুটি যোগ করে ১৬ বলে ৩২ রান। তাতে এক লাফে বাংলাদেশের স্কোর ২৬১।  

বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতেছিল ১৩৭ রানের বিরাট ব্যবধানে। পরবর্তীতে পাকিস্তান, আফগানিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ খেলেছিল ফাইনালও। ভাগ্যে না থাকায় সেবারও ফাইনাল জেতা হয়নি বাংলাদেশের।