‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ।’’
দূরত্ব না ঘোচানোর ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতি টেনেছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ও সফলতম ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। নামের পাশে পনের হাজারেরও বেশি রান, অর্জনের ঝুলিও ভরপুর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে চূড়ান্তভাবে ছেড়ে দেওয়া তামিম পরবর্তীতে কী করবেন সেটাই এখন টক অব দ্য টাউন। তামিমের পরবর্তী গন্তব্য কোথায়?
তামিমের জন্ম চট্টগ্রামের ক্রীড়া পরিবারে। বাবা-চাচা-ভাইরা প্রত্যেকেই ক্রীড়ামোদী। ক্রিকেট ছাড়ার পরও তারা প্রত্যেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে মিশে আছেন। তামিমের ক্ষেত্রেও তাই ব্যতিক্রম কিছু হবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়া তামিম বছরখানেক খেলতে পারেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট। এরপর ক্রিকেটকে একেবারেই বিদায় বলবেন। পরবর্তীতে ক্রিকেটেই যুক্ত থাকার পরিকল্পনা।
প্রশ্ন উঠছে, তামিম কিভাবে ক্রিকেটে যুক্ত হবেন। উপায় খোলা আছে একাধিক। এক, ক্রিকেট প্রশাসনে যুক্ত হওয়া। দুই, ধারাভাষ্যে যুক্ত হওয়া। তিন, ক্রিকেট কোচিংয়ে যুক্ত হওয়া।
জানিয়ে রাখা ভালো, ধারাভাষ্যে এরই মধ্যে অভিষেক হয়ে গেছে তামিমের। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের পর তামিমকে আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যেও দেখা গেছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও তামিম ধারাভাষ্য দিয়েছেন। এর আগে আইসিসি ইভেন্টে এক্সপার্ট প্যানেলে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব এসেছিল। নানা কারণে সেসব প্রস্তাব লুফে নেওয়া হয়নি তার। সামনেও নিশ্চিতভাবে তামিমের কাছে প্রস্তাব আসবে। হয়তো চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও দেখা যেতে পারে। ধারাভাষ্য তার প্যাশন হতে পারে। এজন্য ধারাভাষ্যের কোর্সও করেছেন অনলাইনে। বেছে বেছে করতে পারেন খেলার ফাঁকে ফাঁকে। তবে এটাকে পুরোপুরি পেশা হিসেবে নেবেন না তা মোটামুটি নিশ্চিত।
তামিমের পথ খোলা বাকি দুইটি গন্তব্যেও। কিন্তু ক্রিকেট কোচিং তার পছন্দের তালিকায় নেই। নেই বলে ক্রিকেট কোচিংয়ের কোর্স কখনো করেননি। ক্রিকেট কোচিংয়ের লেভেল ৩টি। টেস্ট ক্রিকেটারদের লেভেল ১ না করলেও চলে। লেভেল ২ এবং ৩ পরবর্তী ধাপ। সেসব সার্টিফিকেট পেতে নিয়মিত কোর্স, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসতে হয়। তামিমের সেসবে আগ্রহটা কম। মোদ্দাকথা, কোচ হিসেবে নিজেকে সেভাবে চিন্তা করতে পারেন না তিনি।
আরেকটা পথ ক্রিকেট প্রশাসন। যেখানে তামিমের আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বর্তমান বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদেরও চাওয়া একই রকম, ‘‘সে আমাদের একজন সাবেক অধিনায়ক, তার মানে তার মধ্যে নেতৃত্বগুণ আছে। খেলতে না পারলে ও যদি বোর্ডে সম্পৃক্ত হতে চায়, আমি খুবই খুশি হব। তাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, আমার ধারণা ও অনেক ভালো কিছু করতে পারবে।’’
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্রিকেট প্রশাসনেও আমূল পরিবর্তন আসে। মিরপুর শের–ই-বাংলায় ক্রীড়া উপদেষ্টার স্টেডিয়াম পরিদর্শনের দিনে তাকে সঙ্গ দিতে দেখা গেছে তামিমকে। সেই থেকে গুঞ্জন, তামিম নাকি বিসিবিতেও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে যাচ্ছেন! তখন সেটা গুঞ্জন থাকলেও এখন আলোচনার টেবিলে চলে গেছে বলে খবর।
তবে তামিম যদি সত্যিই ক্রিকেট প্রশাসনে আসতে চান তাহলে তাকে অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ অক্টোবর পর্যন্ত। নতুন বোর্ডে তাকে যুক্ত হতে হবে। কেননা পুরোনো পদে আসার কোনো সুযোগ নেই। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলো পুনর্গঠনের কাজ শেষ হয়নি। নির্বাচনের আগে শেষ হবার সম্ভাবনাও কম। গঠনতন্ত্র মেনে তাকে ক্রিকেট প্রশাসনে আসতে হলে অপেক্ষা করতে হবে।
ক্রিকেট প্রশাসনে তামিমের আসার জোর সম্ভাবনা। তার নিজেরও ইচ্ছা আছে দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। যার সর্বোত্তম উপায় প্রশাসনে যুক্ত হওয়া। সেটাও শীর্ষ পর্যায়ে। এজন্য তাকে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
যদিও আরো অনেক প্রশ্ন ডালপালা মেলা শুরু করেছে। তামিম ঘরোয়া ক্রিকেটই বা খেলবেন কতদিন? বিপিএলের পর তামিমের অখণ্ড অবসর। মার্চ এপ্রিলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়ার কথা আছে। গতবার প্রাইম ব্যাংকে খেলা তামিমের এবারের ঠিকানা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
এবার দলটাকে তামিম শুধু নেতৃত্বই দেবেন না, পুরো দলকে গুছিয়েছেন তিনি। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্যদের দলে ভিড়িয়েছেন। এরপর বছরের শেষ প্রান্তে রয়েছে বিপিএল। আরেকটি বিপিএলে তাকে দেখা যাবে কি না, তা সময়ের ওপরই নির্ভরশীল।