স্প্যানিশ ম্যানেজার পেপ গার্দিওলার ঘর ভেঙে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই এই খবরটা শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবেই সবাই ধরে নিয়েছিল তৃতীয় কোন পক্ষের কারণেই ম্যানচেস্টার সিটি কোচের ৩০ বছরের দাম্পত্যজীবনে ফাটল ধরেছে।
এদিকে, তাদের মেয়ে মারিয়া গার্দিওলা তার বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ্যের পর মুখ খুলেছেন। তিনি বিচ্ছেদের ব্যাপারে সরাসরি কোন প্রশ্নের উত্তর না দিলেও জানিয়েছেন, তাদের আয়েশি জীবনের জন্য সে বাবার ফুটবল ক্যারিয়ারের কাছে কৃতজ্ঞ।
অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গার্দিওলার এক বন্ধু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন, এই বিচ্ছেদের পেছনে নেই তৃতীয় কোন ব্যক্তি! তবে, বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ গার্দিওলার ‘নিজের কাজের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্যতা’।
সময়টা ১৯৯৪। সেই সময় মাঠ কাঁপানো ফুটবলার গার্দিওলার প্রেমে পড়েন সাংবাদিক ও লেখিকা ক্রিস্টিনা সেরার। তাদের পরিচয় হয়েছিল বার্সেলোনার বিখ্যাত ডিজাইনার আন্তোনিও মিরোর শপে মডেলিং করতে গিয়ে। এরপর একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন তারা। দীর্ঘ ২০ বছর পর ২০১৪ সালে এসে বার্সেলোনায় ক্রিস্টিনাকে সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন গার্দিওলা। ঠিক তার এক দশক পর তারা জীবনের আলাদা পথ বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গার্দিওলার সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর দাবি, “আমি মনে করি তারা একে অপর থেকে দূরে চলে গেছেন। ক্রিস্টিনা পাঁচ বছর আগে বার্সেলোনায় চলে গিয়েছিল। এটি সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলেছে। আর গার্দিওলা তো সম্পূর্ণ কাজপাগল এবং সে তাদের পারিবারিক ফ্যাশন ব্যবসায় একদমই যুক্ত না থাকার কারণে তাদের সম্পর্কে এই সমস্যা হতে পারে।”
এদিকে, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে মারিয়া পরিষ্কার করেননি কিছুই। তবে একটা ব্যাপার স্পষ্ট। এই বিচ্ছেদে পরকীয়ার রসালো কোন গল্প নেই। ২৪ বছর বয়সী মারিয়া তার বেড়ে ওঠাকে ‘বিশেষ তবে চ্যালেঞ্জিং’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘বাবার পেশাদার ক্যারিয়ারের জন্য তাদের পরিবারের সমগ্র ইউরোপেই ঘুরে বেড়াতে হয়েছে।’’
বর্তমানে লন্ডনে বসবাসরত মারিয়া অসম্ভব ফ্যাশন সচেতন। তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে আছে প্রায় এক মিলিয়ন অনুসারী। তার চাকচিক্যময় জীবন এবং ফ্যাশনের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ মিলে তার ইন্সটাগ্রামের। তার এই জীবন যাপনের জন্য সে তার বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলেননি।
মারিয়া বলেন, “বাবার ফুটবলই আমাদের জীবনের অনেক কিছু গড়তে সাহায্য করেছে। আমরা ভাই-বোনেরা এত সুযোগ সুবিধায় বড় হওয়ার জন্য বাবার কাছে ঋণী।”
মারিয়া বাবা-মার বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে এড়িয়ে গেলেও গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তটি সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে এবং কোনো বাইরের কেলেঙ্কারি ছিল না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে গার্দিওলার স্ত্রী ক্রিস্টিনা তাদের ছোট মেয়ে ভ্যালেন্তিনাকে নিয়ে বার্সেলোনায় ফিরে যান পরিবারের বুটিক ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য। তবে ইংল্যান্ডে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন তিনি। দুজনের সম্পর্কে ফ্যাকাসে হতে শুরু করে গত বছর সেপ্টেম্বরে। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ক্রিস্টিনা ম্যানচেস্টারে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এরপরও বড়দিনের ছুটিটা বার্সেলোনায় কাটিয়েছিলেন গার্দিওলা ও ক্রিস্টিনা। তবে, তাতেও ঘর টেকেনি।
গার্দিওলা বার্সেলোনার দায়িত্ব ছাড়ার পর ২০১৩ সালে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নেন। সেখানে থেকে ২০১৬ সালে চলে আসেন ইংল্যান্ডে। এই ৫৩ বছর বয়সী ম্যানেজার দীর্ঘদিন স্পেনের বাইরে থাকাটাই যে তার বৈবাহিক সমস্যার সূত্রপাত সেটা নিশ্চিত করেছে আরেকটি মাধ্যম।
স্পেনের দুই সাংবাদিক লোরেনা ভাসকেস ও লরা ফা একটি পডকাস্টে বলেন, গার্দিওলা ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ক্রিস্টিনা বিচ্ছেদের ব্যাপারে অগ্রসর হয়।
গার্দিওলা এবং ক্রিস্টিনার শারীরিক এবং মানসিক দূরত্ব তাদের সম্পর্কের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে এসবের পরও এই স্প্যানিশ ম্যানেজার সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেন। অতঃপর অনেকটা বাধ্য হয়ে ক্রিস্টিনা বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন।
এই বৈবাহিক সম্পর্কের টানাপোড়ন প্রভাব ফেলেছে গার্দিওয়াল ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি পারফরম্যান্সেও। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে লেস্টার সিটির বিরুদ্ধে ২-০ ব্যবধানে জয়ের আগে গার্দিওলার অধীনে কঠিন সময় পার করেছিল সিটি। আর আগের ১৩ ম্যাচে মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছিল তারা।