ভ্রমণ

একটি ধর্ষণ ঘটনা ও একজন সংবাদকর্মীর ইনটেনশন

রেজাউল করিম : কোনো একটা বিষয়ের সঙ্গে লেগে থাকলে তার একটা সফল পরিণতি যদি হয়, তবে তাকে সাফল্য ভাবতেই ইচ্ছে করে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো ইনটেনশন থাকতে নেই। এটা সাংবাদিকতার নীতিবহির্ভূত।

 

কিন্তু রাঙ্গুনিয়ার শিলক ইউনিয়নের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ১১ বছর বয়সি কন্যা সমাজপতি কর্তৃক ধর্ষিত হওয়ার পর ঘটনাটি যখন ধর্ষিতার ভাইয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে মূল ধর্ষককে রক্ষার চেষ্টা হয়েছে, তখন এই ঘটনার পেছনে ছুটতে গিয়ে একটা ইনটেনশন কাজ করেছেই।

 

সোজা কথায় যদি বলি, রাঙ্গুনিয়ার সাংবাদিক নামধারী তিন কুলাঙ্গার যখন ধর্ষিতার ভাইকেই ধর্ষক সাজিয়ে চট্টগ্রামের তিন দৈনিকে খবর প্রচার করল, তখনই প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে প্রকৃত ধর্ষক আর এই ধর্ষকের সহযোগীদের মুখোশ উন্মোচনের একটা চেষ্টা, উদ্দেশ্য বা ইনটেনশন নিয়েই আমার ছোটা।

 

নিজ অবস্থান থেকে হয়তো ছোট করে চেষ্টা চালিয়েছি। শিলক ইউনিয়নের দুঃসাহসী রাজনৈতিক কর্মী বাদশা যখন ধর্ষিতার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করছিলেন, তখন তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি নিজের অবস্থান থেকে। এককভাবে গণমাধ্যমে সত্য উদঘাটনে প্রথম এগিয়ে আসেন শ্রদ্ধেয় বড় ভাই ৭১ টেলিভিশনের আজাদ তালুকদার।

 

৭১ টেলিভিশনের পর ‘ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে ধর্ষিতার ভাইকে জেলে পাঠালো পুলিশ’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি ডট কম। এরপর আরো বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন বাংলামেইলের আলম দিদার। এই ধারাবাহিকতায় একে একে এটিএন নিউজ, যমুনা টেলিভিশন, যুগান্তর, সংবাদসহ আরো একাধিক গণমাধ্যম পুলিশ কর্তৃক ধর্ষককে রক্ষা করে ধর্ষিতার ভাইকেই ধর্ষক সাজিয়ে জেলে পাঠানোর খবর প্রকাশিত হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

 

এর পরের ঘটনা তো সবারই জানা। হাইকোর্টে রিট, দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও ধর্ষক শাহ আলমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও ধর্ষকের সহযোগী তিন কুলাঙ্গার সাংবাদিক নামধারী ভণ্ড চাঁদাবাজের মুখোশ উন্মোচন। সবকিছুই হয়েছে গত কয়েক দিনে। সর্বশেষ বুধবার রাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রকৃত ধর্ষণকারী শাহ আলম।

 

এই অর্জনকে যৌক্তিক পরিণতি ও সাফল্য হিসেবে দেখলে নিশ্চয়ই বাড়িয়ে বলা হবে না। ঘটনার পর থেকেই ধর্ষিতার পরিবারের পাশে রয়েছেন শিলকের রাজনৈতিক কর্মী বাদশা। একই দলের রাজনৈতিক কর্মী হওয়া সত্ত্বেও নানা রক্তচক্ষু, হুমকি, অর্থের লোভসহ সবকিছুকে উপেক্ষা করে আন্দোলন করে গেছেন বাদশা।

 

প্রকৃত ধর্ষক শাহ আলমকে গ্রেফতারের আন্দোলন থেকে বাদশাকে কেউ পিছু হটাতে পারেনি। বাদশা বিষয়টি সামনে এনেছেন বলেই বাদশার আন্দোলন আড়াল করতে অর্থলিপ্সু ধর্ষকের সহযোগী রাঙ্গুনিয়ার তিন সংবাদকর্মী ভাই কর্তৃক বোন ধর্ষণের মিথ্যা সাজানো সংবাদ পরিবেশন করে নিজেদের মুখোশ খুলে দিয়ে প্রমাণ করেছেন তারা কুলাঙ্গার। আর অন্য সাংবাদিকরাও প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে সবার সামনে ধর্ষক এবং ধর্ষকের সহযোগীদের মুখোর উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন।

 

এই ঘটনায় আগামী দু-এক দিনে আরো বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটতে পারে বলেই আমার ধারণা। এর মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারেন রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি হুমায়ুন কবীর ও এসআই মুজিব। গ্রেফতার হতে পারেন ধর্ষণ ঘটনার অন্য প্রভাবশালীরাও। এ ছাড়া শাস্তির আওতায় আসছে তিন কুলাঙ্গার সাংবাদিকও। (ইতিমধ্যে ওই তিন সাংবাদিকের মধ্যে দুজনকেই পত্রিকা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে)। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে ওই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগ দাখিল করবেন বলে আমাকে নিশ্চিত করে জানিয়েছেন ধর্ষণ মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এরশাদুর রহমান রিটু।

 

কিছু কাগজপত্রের ঘাটতি থাকায় তিন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা উপস্থাপন করা হয়নি জানিয়ে আইনজীবী রিটু বলেন, ‘মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

 

সব মিলিয়ে রাঙ্গুনিয়ার এই চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ঘটনাটি নানা ঘটনা-অঘটনের মধ্য দিয়ে একটি সফল ও যৌক্তির পরিণতির দিকে এগিয়েছে। এই মুহূর্তে অনুভূতিটা সত্যি অসাধারণ ভালো লাগার। চট্টগ্রাম আদালতে ধর্ষিত কিশোরী ও তার পরিবারটিকে দেখে চোখে পানি চলে আসে আমার।

 

প্রথমে ধর্ষণ করে অন্তঃসত্ত্বা করল। এরপর বিচার চাইতে গিয়ে পুলিশের নির্মম নির্যাতন সহ্য করল। বোন ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে জেলে যেতে হলো ভাইকে। এমন নির্যাতন তো আল্লাহ সহ্য করেন না। আল্লাহ তুমি এই ধর্ষক ও তার সহযোগীদের দুনিয়াতেও বিচার দেখিয়ে দাও। আখেরাতেও তাদের উপযুক্ত শাস্তি দাও।

 

সর্বশেষ প্রকৃত ধর্ষক শাহ আলম (৫৫) বর্তমানে তিন দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে অন্য অভিযুক্তদের ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনার অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ।

লেখক : সংবাদকর্মী

   

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/৩০ মে ২০১৫/রেজাউল/সনি/এএন