ভ্রমণ

সুতোয় বাঁধা শাপলা দেখতে পোড়াহারা বিলে 

যত দূর দৃষ্টি যায় ফুটে আছে লাল শাপলা। দিগন্তের নীল যেন মিশে গেছে লাল রঙে। তার উপর রোদ ঝলমলে দিন হলে তো কথাই নেই। রুপালি আলো ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। সঙ্গে শরতের সমীরণ।

এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। সেই মুগ্ধতার পরশ পেতে প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় করেন নীলেরপাড়ায়। গাজীপুর শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ছায়াঘেরা একটি গ্রাম নীলেরপাড়া। এ গ্রামের পাশেই রয়েছে ছোট-বড় অনেক বিল। এমনি একটি বিল হলো পোড়াহারা। পোড়াহারা বিল গ্রামের মানুষের কাছে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ।

পোড়াহারা বিলে বর্ষার পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠে শাপলা ফুল। ধীরে ধীরে অজস্র শাপলায় ভরে যায় বিল। পাশাপাশি এখানে দেখা মেলে সাদা শাপলার দুধরঙা শুভ্রতা। নীল শাপলাও চোখে পড়ে অনেক সময়। লাল না সাদা, নাকি নীল কোনটার সৌন্দর্য বেশি- অনেক দর্শনার্থীই মনেই তখন উঁকি দিতে পারে এই প্রশ্ন।

নীলেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গাজীপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাধবচন্দ্র বলেন, আমাদের গ্রামের মানুষ বিলটিকে পোড়াহারা নামে চেনে। এই বিলে বর্ষা মৌসুমে প্রচুর ছোট-বড় মাছও ধরা পড়ে। তবে এ বিলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় লাল শাপলা। তিন প্রজাতির শাপলা এখানে দেখা যায়।

গ্রামের বাসিন্দা বিজয়চন্দ্র মন্ডল। তিনি বিল থেকে শাপলা ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় তার কর্মযজ্ঞ। ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে চলে যান বিলের মাঝখানে। মাছ ধরে বা শাপলা তুলে বিক্রি করেন শহরের বাজারে।

শহর থেকে দূরত্ব কম থাকায়, শহরের যান্ত্রিকতা ভুলতে প্রতিদিন অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমী পোড়াহারা বিলে আসেন। উপভোগ করেন শাপলার সৌন্দর্য। বেড়াতে আসা গাজীপুর শহরের বাসিন্দা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘লোকমুখে শুনে বিলের শাপলা দেখতে এসেছি। শাপলা যেমন চোখের তৃপ্তি মেটায়, তেমনি রমণীর খোপায় শোভা পায়। বিলের লাল শাপলা আমাকে মোহিত করেছে।’

মুগ্ধ চোখে দিগন্তে তাকিয়ে অনেকেই এ সময় গেয়ে ওঠেন সুবীর নন্দী ও অনুপমা মুক্তির সেই গান: তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল, নাকি তোমার মন।