পাহাড় আমাকে খুব টানে; দেশে কিংবা বিদেশে। বিদেশ বলতে পার্শ্ববর্তী দেশটিই এ জন্য আমার প্রিয়। কারণ কম সময়, কম ব্যয় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। তারপরও তিনটি বিষয় একত্র করা আমার পক্ষে অনেক সময় কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। তবু সুযোগ পেলেই ছুটে যাই বারবার।
ফটোগ্রাফি বা ভ্রমণ যাই বলি দুটোই বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। এ দুটোই আমার ঘাড়ে চেপে বসে যখন-তখন। ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টিতে আমার পাশে বেশ ক’জন বন্ধুস্থানীয় মানুষ রয়েছেন তাদের সবার নাম উল্লেখ না করেও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা না প্রকাশ করলেই নয়। বিশেষ করে আমার সহকর্মীদের সহযোগিতা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে হয়। এবারের যাত্রাটি ছিল বেশ অ্যাডভেঞ্চারময়! অনেকগুলো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবু বলবো বিপদসংকুল পথ পেড়িয়ে অর্জনটা অনেক বড় ছিল।
এবার আমাকে শিলিগুড়ি যেতে হয় স্বাস্থ্যগত কারণে। সড়ক পথে হিলি থেকে রায়গঞ্জের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কি.মি.। আর রায়গঞ্জ থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব প্রায় ১৯০ কি.মি.। দীর্ঘযাত্রার ধকল থেকে দেহটাকে কিছুটা বিশ্রাম দেওয়ার জন্য রায়গঞ্জ নামতে হয়। শিলিগুড়ি চেংড়াবান্ধা বর্ডার দিয়েও যাওয়া যায়। বিমানে কলকাতা হয়ে শিলিগুড়ি বাগডোমরা বিমানবন্দরের মাধ্যমেও যাতায়াত করা যায়।
গত দুর্গাপূজার মধ্যেই রওয়ানা হই। এবার যাত্রার আগে কলকাতার বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার এবং বন্ধু প্রীতম ঘোষকে ফোন দেই। ফোনটা শুধু কুশলাদী জানার জন্য দিয়েছিলাম। কথার এক ফাঁকে ও আমাকে চমকপ্রদ একটা অফার ছুঁড়ে দেয়। যার জন্য আমি সত্যি প্রস্তুত ছিলাম না। বিষয়টি স্বপ্নের মতই লেগেছিল। এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে কয়েকদিন ভালোভাবে ঘুমও হয়নি। তার উপর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এ অবস্থাতেই রওয়ানা হলাম। যে কাজে যাচ্ছিলাম অর্থাৎ চিকিৎসার জন্য; চিকিৎসকের সঙ্গে যে দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল তার আগের দিন রাতে তিনি জানালেন ওই দিন দেখা হচ্ছে না। পাঁচদিন পর তিনি যেতে বললেন। আমার করার কিছু ছিল না। সেদিন রাতেই রায়গঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি রওয়ানা হই। সুপ্রিয় অভিজিৎ সাহা ও তার স্ত্রী সুনীতা সাহা যদিও বারবার বাধা দিচ্ছিল। পূজার কয়েকটা দিন ওদের সঙ্গে কাটানোর কথা বলছিল। কিন্তু আমি রওয়ানা হয়ে যাই। শিলিগুড়ি পৌঁছুতে রাত হয়ে যায়। রাতটা কাটিয়ে পরের দিন সকালে প্রীতমের সঙ্গে রওয়া হই।
খুব ভোরে যখন দেবাশীষ-জয়শ্রীদের কাছ থেকে বিদায় নেই তখনও কিছুটা অন্ধকার ছিল। বাসার গেইটে গাড়ি অপেক্ষা করছিল। প্রীতমকে তুলে নিয়ে সরাসরি বাগডোগড়া বিমানবন্দরে যাই। থাইল্যান্ড থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন আরো দুইজন। তাদের ইমিগ্রেশন শেষ করে বের হতে কিছুটা দেরি হওয়ায় বিমানবন্দরের ক্যান্টিনে আমরা সকালের নাস্তা পর্ব সেরে নেই। এর মধ্যে দুই বিদেশী (মা-ছেলে) অতিথি নাস্তা পর্ব সেরে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। আমাদের বহনকারী জীপ ছুটতে শুরু করে মানেভঞ্জনের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে সিংঘলিলিয়া।
যখন শিলিগুড়ি চা বাগানের ভেতরের রাস্তা দিয়ে জীপ ছুটছিল তখন গায়ে কিছুটা ঠান্ডা লাগছিল। প্রীতম বললো সামনে আরো ঠান্ডা লাগবে। ব্যাগ থেকে মাফলার আর পাতলা একটা জ্যাকেট বের করে রাখলাম। সামনে এগুচ্ছি আর ঠান্ডার তীব্রতা বাড়ছে। মিরিক থেকেই মোটামুটি পাহাড়ি রাস্তা শুরু। পথের দুই ধারে বিশাল পাইন বন। শুধু সবুজের সমারোহ। পাহাড় কেটে বানানো দুর্গম এবং আঁকাবাঁকা রাস্তার দুপাশের বিশাল পাইন গাছগুলো যেন সেইফ শিল্ড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । গাড়ির চালক একটু অন্যমনস্ক হলেই কয়েক হাজার ফুট নিচে। সকালে প্রীতম যখন জীপ পাঠিয়েছিল তখন একটু খটকা লেগেছিল। রাস্তায় বেড়িয়ে বুঝলাম এ পথে জীপের বিকল্প নেই।
এখানে প্রীতম সম্পর্কে একটু না লিখলে চলবে না। প্রীতম কলকাতা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিদ্যায় মাস্টার্স করার পর অনেকদিন একটি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পাশপাশি ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি চর্চা চালিয়ে গেছেন। এই দুটো এক সঙ্গে চালানো বেশ কষ্টকর ছিল। যে কোন একটা ছাড়তে হবে। দ্বীধায় পড়ে যান। যার নেশা ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি এবং বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ, তার পক্ষে ফটোগ্রাফি ছাড়া সম্ভব নয়। তিনি পদার্থ বিদ্যার শিক্ষকতাটাই ছেড়ে দেন। পাশে দাঁড়ান তার স্ত্রী। সংসারের বোঝা নিজ কাঁধে তুলে নেন। প্রীতম অনেকটা স্বাধীনভাবে তার শখের বিষয়টি চালিয়ে যান। পশ্চিমবঙ্গে যে সব বার্ড সেঞ্চুরিগুলো আছে সবই তার নখদর্পণে। একটি পর্যায়ে তার কাছে শখের বিষয়টি পেশা হিসেবে আবির্ভূত হয়। তার কাছে নতুন একটি উইন্ডো খুলে যায়। আর সেটা হচ্ছে বিশ্ব থেকে বিলুপ্তপ্রায় ‘লাল পান্ডা’ সংরক্ষণ!
প্রীতম ফটোগ্রাফি করতে সিংঘালিলিয়ায় বহুবার ভ্রমণ করেছেন। স্থানীয়দের কাছে লাল পান্ডা সম্পর্কে জেনেছেন, নিজে স্টাডি করেছেন। কিন্তু যে জায়গাটিতে লাল পান্ডার আবাস সেটি খুবই দুর্গম। তার চেয়ে বড় কথা জায়গাটি নেপালের ভূ-খণ্ডে। ভারতীয় ভূ-খণ্ডে থাকলেও ইন্ডিয়ান ফরেস্ট অ্যাক্টের কারণে তা এক্সপ্লোর করা দুরূহ। প্রীতম থেমে থাকার লোক নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে ভাবেই হোক লাল পান্ডার বিলুপ্তি ঠেকাতে হবে। তিনি ভারত-নেপাল সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেন। অতপর ‘কল অব ওয়াইল্ড উইংস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এটির তিনি প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং পার্টনার। নেপালের বনভূমি যেটি সংরক্ষিত বনভূমি নয়, এরকম একটি ১২০বর্গ কি.মি. জায়গায় নিজের কাজ শুরু করেন, সেখানকার নিকটবর্তী গ্রামের মানুষজনকে কাজে সামিল করে তাদের রেড পান্ডা খোঁজা, বনভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যেখানে ডিফোরেস্টেশন হয়েছে সেখানে আবার গাছ লাগানো ,জঙ্গলে কোনও পোচার ঢুকছে কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা ইত্যাদি নানাবিধ সংরক্ষণমূলক কাজে তাদের নিযুক্ত করা হয়, রেড পান্ডা ট্যুর থেকে যা আয় হয় তার ৪০ শতাংশ সরাসরি এই গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এখন দুর্গম এই গ্রামের মানুষদের আয়ের উৎস এটি।
শিলিগুড়ি থেকে মিরিক হয়ে মানেভঞ্জন পর্যন্ত দূরত্ব ৭৫ কি.মি.। সেখান থেকে আমাদের ক্যাম্প অর্থাৎ প্রীতমের প্রজেক্ট এরিয়া লামেধুরা ‘কল অব ওয়াইল্ড উইংস’ ক্যাম্পের দূরত্ব ৭ কি.মি.। পথে কয়েকটি চেকপোস্টে চেকিংয়ের কাজ সারতে হলো। নিরাপত্তার কারণেই এই ব্যবস্থা। গাড়ি থেকে কারো নামতে হয়নি। নিরাপত্তা কর্মীরা জীপের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেছেন। পুরোটাই প্রীতম সম্পন্ন করেছে। আর আমরা ফাঁকে ফাঁকে নেমে এদিক ওদিক ঘুরে দেখেছি আর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির তারিফ করেছি। লামেধুরা নেপাল সীমান্তের ভেতরে পড়ায় সেখানে ভারতীয় এবং নেপালী ছাড়া বিদেশীদের থাকায় বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে সন্ধ্যার আগেই আমাদের আবার মানেভঞ্জন ফিরতে হয়েছে। মানেভঞ্জনে আমাদের সঙ্গে যোগ হন আসামের আরো তিনজন। এছাড়া সঙ্গে যোগ দেন অস্ট্রিয়ার একজন মহিলা ট্রেকার, পেশায় ডাক্তার। অর্থাৎ আমাদের টিম দাঁড়ায় ৭জনে।
প্রথম রাত মানেভঞ্জনের এক হোম স্টেতে অবস্থান করি। রাতে ঠান্ডা একটু বেশি পড়ে। রুমে ফিরেই গোছল করে নেই। প্রতিটা রুমে গিজার লাগানো, ফলে গরম পানি দিয়ে গোছল করতে সমস্যা হয়নি। রাতের খাবার খেতে কিছু নিচে নেমে সবাই একসঙ্গে খাবার খেয়ে নেই। চমৎকার খাবার। কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা শেষে রুমে ফিরে আসি। সারাদিনের ক্লান্তির পর রাতে পরিষ্কার ঘুম হয়। ভোর ৫টায় আমাদের রিপোর্টিং টাইম। আমাদের গাইড এক কাপ গরম চা নিয়ে শুভ সকাল বলে হাজির। ব্রাশ করেই আবার ছুটে চলা একই পথে। সারা দিন লামেধুরার আশপাশ এলাকা থেকে পাখির ছবি তোলার চেষ্টা করেই সময় কাটাই। এদিনও কাঙ্ক্ষিত রেড পান্ডা খুঁজে পাইনি। তবে প্রীতমের মধ্যে কোন টেনশনের লক্ষণ দেখিনি। সে শুধু বারবার বলেছে, ‘দাদা সবাইকে অধৈর্য্য না হতে বলবেন। আমার বিশ্বাস অমরা নিরাশ হবো না।’ সেদিন ফিরে আসলাম। পরের দিন একই ভাবে দিনের যাত্রা শুরু। লামেধুরু ক্যাম্পে চা-নাস্তা শেষে আবার গাড়িতে ওঠা। একটা জায়গায় গিয়ে প্রীতমের গাড়ির পেছনে আমাদের গাড়িটাও থেকে যায়। অন্য সবাই প্রীতমকে ফলো করে ছুটে যায়। আমি গাড়ির আশপাশে পাখির ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পাড়। এর মধ্যে একজন স্বেচ্ছাসেবি খবর নিয়ে আসে রেড পান্ডার দেখা পাওয়া গেছে।
সবাই ততক্ষণে গাড়ির কাছে ফিরে এসেছে। সবাই নড়েচড়ে ওঠে। একসঙ্গে গাইডের পেছনে ছুটে চলি। প্রথমে কিছু মনে হয়নি। খাড়া পাহাড় ডিঙ্গিয়ে যত উপরে উঠছি পথ যেন শেষ হতে চায় না। চড়াই-উৎড়াই পেড়িয়ে আমরা একটা সময় স্পটে পৌঁছাই। কি ভয়ঙ্কর জায়গা! কিছু বাঁশ গাছ ছাড়া হাতের কাছে আর কোন গাছ নেই। পা পিছলিয়ে গেলেই কয়েক হাজার ফুট নিচে পড়তে হবে। এ অবস্থা চিন্তা করারও তখন সময় ছিল না। আমাদের ৫০ গজ দূরে বড় একটি গাছের পাতার আড়ালে লাল রংয়ের কিছু একটা নড়াচড়া দেখে বুঝতে পারলাম প্রত্যাশিত ‘লাল পান্ডা’! মুখটা তখনও দেখা হয়নি; গাছের পাতায় মুখ লুকিয়ে পাকা ফল খাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে সামান্য সময়ের জন্য মুখটা দেখা যায়। কিন্তু কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ধোঁয়াটে আবহাওয়ার জন্য ছবি তোলা যাচ্ছিল না। তবু সান্ত্বনা তুলতুলে লোমশ দেহের এই প্রাণীটির দেখা পেলাম। এটাই ছিল তখনকার বড় প্রাপ্তি।
লাল পান্ডা নিয়ে কয়েকটি কথা
‘লাল পান্ডা’ লালচে বাদামী, লম্বা লেজ, স্তন্যপায়ী প্রাণী। দেখতে অনেকটা গৃহপালিত বিড়ালের আকার, যা হিমালয়ের পাহাড়ি বনাঞ্চলে এবং পূর্ব এশিয়াসংলগ্ন উত্তর ভারত, তিব্বত, ভুটান এবং নেপালের পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা মেলে। সাধারণত বাঁশ এবং অন্যান্য গাছই এদের বিচরণ ক্ষেত্র। গাছপালা, বিশেষ ধরনের বাঁশের নরম খোল, পাহাড়ি ফল এবং পোকামাকড় এদের খাদ্য।
লাল পান্ডার নরম পুরু পশম রয়েছে। উপরে লালচে বাদামী এবং নীচে কালো। মুখ সাদা, প্রতিটি চোখ থেকে মুখের কোণে লাল-বাদামী ডোরাকাটা, এবং গুল্মবিশিষ্ট লেজটি অস্পষ্টভাবে আংটিযুক্ত। লাল পান্ডার মাথা এবং শরীরের দৈর্ঘ্য ৫০-৬৫ সেমি এবং লেজ ৩০-৫০ সেমি। ওজন ৩ থেকে ৬.২ কেজি এবং নখরগুলি অর্ধ-প্রতিরোধী।
লাল পান্ডা নিশাচর এবং একা, জোড়ায় বা পারিবারিক ভাবে থাকতে পছন্দ করে। মাতৃগর্ভে সাধারণত এক বা দুটি বাচ্চা থাকে যেগুলি প্রায় ১৩০ দিনের গর্ভধারণের পর বসন্তে জন্মগ্রহণ করে। এটি খুবই শান্ত প্রকৃতির প্রাণী সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে পোষ মানতে চায় না।
প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) রেড পান্ডাকে বিপন্ন হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে। বর্তমানে পুরো বিশ্বে রেড পান্ডার মোট সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম এবং দিন দিন এর সংখ্যা কমছে।
জানা গেছে সিংঘালিলায় এদের সংখ্যা খুব বেশি হলে ৮/১০টি। জলবায়ু পরিবর্তন, পাহাড় উজাড় হওয়া বন দস্যুদের কারণে এদের খাদ্য কমে যাওয়া এবং কোন কোন সময় পাহাড়ি হিংস্র প্রাণীদের ক্রমাগত আক্রমণে দিন দিন এদের সংখ্যা কমছে।
সিংঘলিলিয়া সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ থেকে ৩৭০০ মিটার উঁচু। প্রায় ৭৮.৬ কি.মি. জুড়ে দার্জিলিং জেলায় এই ন্যাশনাল পার্কের অবস্থান। মানেভঞ্জন হলো মজুয়াগ্রামে অবস্থিত একটি পরিবহন কেন্দ্র। এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি বিভাগের দার্জিলিং জেলার দার্জিলিং সদর মহকুমার দার্জিলিং পুলবাজার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত একটি অঞ্চল। দার্জিলিং শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে সিঙ্গলীলা জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বারে গ্রামাঞ্চল এটি। স্থানীয়দের আয়ের মূল উৎস পর্যটন। মূলত পর্বতারোহণ করতে আসা বিদেশীদের উপর নির্ভরশীল। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সান্দাকফু তথা সিংঘলিলিয়া আরোহণের প্রথম শিবির এটি। ১৯৬০ সাল থেকে সান্দাকফুতে যাওয়ার সমস্ত প্রয়োজনীয় বস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী মানেভঞ্জনেই সহজলভ্য। এখান থেকে পার্বত্যস্থানগুলিতে চার ঘণ্টার ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে।
দুই পাহাড়ের মাঝে ৬,৯৯০ ফুট উচচ্চতায় পাহাড়ের ঢালে বসতবাড়ি আর নানা দোকান নিয়ে এক জমজমাট বাজার মানেভঞ্জন। যার অর্ধেকটা নেপাল আর অর্ধেকটা ভারত। প্যাঁচানো পাহাড়ি পথ ধরে গাড়ি উপরে উঠছে। পিছনে বসায় নিচের দিকে তাকাতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে যাওয়ার অবস্থা। মানেভঞ্জন ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত। দুটি দেশ একটি সাঁকোর দ্বারা পৃথকীকৃত, একই সাঁকো সুকিয়াপোখরি থেকে দার্জিলিঙে যাতায়াতের পথ। মানেভঞ্জন এবং মজুয়া সংলগ্ন অন্যান্য গ্রামগুলিতে আশপাশ এলাকাগুলির চেয়ে কিছুটা ঘনবসতি। সিংঘলিলিয়া জাতীয় উদ্যানের কাছের বনগ্রাম এবং সীমান্ত অবস্থানের কারণে নিরাপত্তাপূর্ণ।