ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গোয়েন্দা গল্প || প্রাক-বৈশাখে গোয়েন্দা অলোকেশ

অরুণ কুমার বিশ্বাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১২ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গোয়েন্দা গল্প || প্রাক-বৈশাখে গোয়েন্দা অলোকেশ

|| অরুণ কুমার বিশ্বাস ||

সাত সকালে প্রাইভেট ডিটেকটিভ অলোকেশের ডেরায় সুকেশা সুবেশা একজন এসে হাজির। না না, ইনি কোনো মামুলি মক্কেল নন, ইনি তার বিশেষ সহযোগী, বন্ধুও বটে।

এ-কথা না বললেও চলে, গোয়েন্দা হলে তার সহযোগী চাই, চাই মনের কথা ভেঙে বলবার মতো বিশ্বস্ত একজন। বিশ্ববিশ্রুত কোনো কোনো গোয়েন্দা এদের রীতিমতো ছায়াসঙ্গী বানিয়ে ফেলেছেন। এই যেমন শার্লক হোমসের ডা. ওয়াটসন, ফেলুদার তোপসে। 

কে এলো ডিটেকটিভ অলোকেশের ঘরে? তাও আবার নববর্ষের এই প্রত্যুষে!

কে আবার? অলোকের বাগদত্তা উর্বী। উর্বী মানে পৃথিবী। সত্যিই উর্বীর চোখে তামাম দুনিয়া দেখেন অকৃতদার ডিটেকটিভ অলোকেশ রয়।

উর্বী আসা মানে অলোকের ‘লোকাল গার্জেন কাম পাচক’ বেচুরামের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া। উর্বী তো আর ঘরের কেউ নয়! আবার পরেরও নয়। বিয়ের পরে না হয় সে বরের কেউ হবে। আপাতত সে মেহমান। বেচুরাম তাই মেহমানদারিতে ব্যস্ত। এই সুযোগে অলোকেশ বলল, ‘উর্বী, একটা জিনিস দেখবে চলো।’

‘কী জিনিস? কী দেখাবে অলোক?’- স্বরে ও সুরে মধুর প্রলেপ মেখে উর্বী বলল।

বাঁ চোখে মৃদু ভ্রুভঙ্গি করে গোয়েন্দাপ্রবর বলল, ‘আহা, চলোই না। দেখতে পেলে আর কে শুনতে চায়?’

উর্বী কিছু বলল না। অলোকেশ তাকে ঘর ছেড়ে বাইরে নিয়ে এলো। বাইরে মানে ঠিক বাইরে নয়, বারান্দায়। সাহেবি ভাষায় ব্যালকনি। চমৎকার আবহাওয়া আজ! বসন্ত শেষে বৈশাখ এসেছে দুয়ারে। অথচ ঝড়ের পূর্বাভাস নেই, কেমন দিল-জুড়ানো ফুরফুরে কুড়মুড়ে হাওয়া।  

উর্বী বলল, ‘দারুণ! মন-মাতানো হাওয়া, দেখেছো অলোক, মন ভালো হয়ে যায়।’  

‘জি দেখেছি, মাই সুইট লেডি।’ অলোকেশ বলল। ওর হাতে একখানা দামি যন্ত্র আছে, যাকে বলে বাইনোকুলার। খাঁটি বাংলায় দূরবীক্ষণ যন্ত্র। ভুলেও যেন অনুবীক্ষণের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলবেন না। দূর-দেখা আর কাছে টেনে বড় করে দেখা এক জিনিস নয়। 

সেদিন বৃহস্পতিবার। ছুটির দিন নয়। অলোকের চোখে দ্রষ্টব্য যা, মানে যে দৃশ্য দেখাতে সে উর্বীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, নাটকের সেই কুশীলবের জন্য যেন একাদশে বৃহস্পতি।

উর্বীকে কাছে টেনে নিলো অলোকেশ। প্রথমে বেণী, তারপর মাথা। কে না জানে, কান কিংবা বেণী করা চুল টানলে মাথা আসে! অলোকের বারান্দা থেকে রাস্তার ওপারে যে ফ্ল্যাট দেখা যায়, সেখানে নতুন এক জুটি উঠেছে। নাকি কাকের বাসায় কোকিল!

অলোকই প্রথমে বাইনোকুলারে চোখ রাখল। বাহ্, কী মনোরম দেবদুর্লভ দৃশ্য! ভাগ্যিস অলোকের গোয়েন্দার চোখ দৃশ্যখানা আবিষ্কার করতে পেরেছিল।

‘কী দেখছো অমন করে, ডিটেকটিভ?’ চটুল সুরে উর্বী বলল। ও এখন অলোকেশের এতো কাছে যে চাইলেই...! না না, অলোকের অবশ্য এসবে তাড়া নেই। তিনি বিলক্ষণ জানেন, সবুরে মেওয়া ফলে। অকালে কাঁঠাল খেতে নেই। কিলিয়ে কাঁঠাল নরম হয় বটে, তবে পাকে না। সবকিছুতে তাড়াহুড়ো করতে নেই। তাতে দুধে ছানা কেটে যায়। উপাদেয় মিঠাইও তখন বিস্বাদ ঠেকে।  

‘ইশ! সরো তো। আমাকে দেখতে দাও।’ উর্বীর ধৈর্যের বাধ চুঁইয়ে পানি গড়ায়। সে অলোকের পিঠে আদুরে ঠোকর মারে। যার অর্থ দুটো- তুমি সরো, এবং আমাকে দেখতে দাও। বা চাইলে তুমি আমি একসঙ্গে দেখতে পারি। তাতে ছোঁয়াছুয়ি হয়, আবার উষ্ণতাও মেলে।

উর্বীর পরনে শাড়ি। শরীরে তার ফুল আর লতাগুল্মের অফুরান মাখামাখি। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে চোখ রাখলো উর্বী। কিন্তু কই, কিছু দেখা যাচ্ছে না তো!

অলোকেশ নব ঘুরিয়ে বাইনোকুলারের দৃষ্টিসীমা ঠিক করে দিলো। আর তাতেই বাধলো বিপত্তি। উর্বীর গায়ে ঘষা লাগলো। লাগবি তো লাগ জায়গামতো, মানে একেবারে মোক্ষম জায়গায়। অলোকেশ যতই বলছে- ‘আই’ম সরি। আই ডিডন্ট মিন দ্যাট। অসাবধানতাবশত লেগে গেছে।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! ফুঁসে উঠলো উর্বী। সবটাই নাকি অলোকেশের পোশাকি ভদ্রতা। আসলে সে গড়পড়তা পুরুষের মতো। মেয়ে দেখলেই ছোঁকছোঁক। অমনি হামলে পড়ে। একটুও লাজ-শরমের বালাই নেই। অসভ্য, ত্যাঁদোড় একটা। 

মজার ব্যাপার কী জানেন তো, উর্বী যে তাকে এতো কিছু বলল, অলোকের কিন্তু তাতে খুব একটা হেলদোল নেই। উর্বীর মুখে এতোগুলো গালাগাল শুনতে তার খারাপ তো লাগেই নি, বরং বেশ উপাদেয় লেগেছে। সত্যি বলতে, পুষ্টিকরও বটে।

তাতে হলো কি, ডিটেকটিভ অলোকেশের মনে বরং একখানা ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নিলো। নারী মানেই কি অসূর্যম্পশ্যা! পুরুষের যাতে প্রয়োজন বা ভালোলাগা, নারীর কি তাতে মোটেও সায় নেই? প্রিয়জন হলেও নয়?

সে যাক, উর্বী এখন মনোযোগ সহকারে লোলুপের মতো দৃশ্য দেখছে। মিনিট কয়েক এদিক-সেদিক দেখে শেষে বাইনোকুলারের ফোকাস জায়গামতো এলো। সেখানে দেখা যাচ্ছে একজোড়া নারী-পুরুষের চুম্বনদৃশ্য। পুরুষটা খুব খাচ্ছে। তাই দেখে কান গরম হচ্ছে উর্বীর। কিন্তু সে বাইনোকুলার ছাড়ছে না। লজ্জায় লাল হচ্ছে যেন বিলিতি বেগুন, সমানে ব্লাশ করছে উর্বী, যেন রুজপাউডার, কিন্তু তাও ফোকাস সরায় না সে।

তবে কি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লো খানিক আগে ভদ্রতা শেখানো এই ভদ্রমহিলা! দূরবীক্ষণের ডগায় দোদুল্যমান নারী-পুরুষ এখন অনেক বেশি সড়গড়, মানে স্বচ্ছন্দে হামি খাচ্ছে। পুরুষ ক্রমশ বেপরোয়া হয়। তার হাত দুটো এখন পূর্বের চেয়ে বেশি সঞ্চরণশীল। উপর-নিচ ওঠানামা করে, যেন অলোকের সেই বালকবেলায় দেখা জেলেদের ডোবা-পুকুর হাতড়ে টাকিমাছ ধরার মতো।

মিনিটখানেক যায়, উর্বী এবার রীতিমতো ঘামতে শুরু করে। নাহ্, তার পক্ষে আর মিলনদৃশ্যে আড়িপাতা সম্ভব নয়। রীতিমতো বিকর্ষিত হতে থাকে উর্বী! নিমিষে তার বিবমিষা পেয়ে বসে- ছিঃ মানুষ এমন উদোম হয়! অশালীন!

উর্বীর হাত থেকে যন্ত্রখানা কেড়ে নিয়ে চোখ রাখতে যায় অলোকেশ। উর্বী বাগড়া দেয়। হাত দিয়ে সরিয়ে দেয় যন্ত্রটা। 

‘কী! কী হলো! দেখতে নেই বুঝি?’

‘ছিঃ অলোক, তুমি এতো খারাপ!’ বলল উর্বী।

ভাবি-বউয়ের কথা শুনে বড্ড হাসি পায় অলোকের। অমনি তার মেয়েদের কলজে-কাঁপানো সেই কলেজকালের কথা মনে পড়ে। তখন বিটিভি’র একটি নাটকের পপুলার ডায়ালগ ছিল এরকম- ছি ছি ছি  তুমি এতো খারাপ! তখন তো আর ফেসবুক ছিল না, তাই ভাইরাল হয়নি। তবে ঠিকই ‘ব্যাক্টেরিয়াল’ হয়েছিল। বারবার কথাটি বলতে গিয়ে মাস্টারের কাছে ধমাধম ডাস্টারের মারও খেয়েছিল ডিটেকটিভ অলোকেশ। সেসব স্মৃতি কি আর ভোলা যায়! 

অলোকেশ দেখল সিনেমা বেশ জমে উঠেছে। পুরুষ এবার বেপরোয়া। সে কেবল উদোম নয়, রীতিমতো উদ্দাম। নারীটিও বেশ সঙ্গ দিচ্ছে তাকে, বা বলা যায় সঙ্গত। গানের সাথে ধাই-ধাপ্পা তবলা না হলে কি ‘লারে লাপ্পা’ জমে! কিন্তু উর্বী তাকে বেশিক্ষণ দূরবীক্ষণে চোখ রাখতে দিলো না। ওটা কেড়ে নিয়ে বলল, ‘অলোক, ইউ আর জাস্ট ফিনিশড। তুমি সত্যি বখে গেছ। নইলে তুমি কাজ-কাম ফেলে  অন্য কাপলের মিলনদৃশ্য দেখো! এ তো অনেকটা সেই লুকিয়ে নীলছবি দেখার মতোই ব্যাপার। তুমি এ-কাজ করতে পারলে! তোমাকে আমি কত সম্মান করি, শ্রদ্ধার চোখে দেখি!’

অলোকেশ উর্বীর কথায় মোটেও পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘তুমি জানো ওরা কারা?’

‘কারা আবার, নিউ কাপল!’ দু’চোখের পাতে মাশকারার বদলে অলোকের প্রতি আশকারা মেখে বলল উর্বী।

‘কাপল? ফু! ওরা কাপল নয়। এখানে রহস্য আছে। ওরা অন্য লোক।’

‘রহস্য মানে? কিসের মিস্ট্রি? নাকি তুমি টিকটিকি বলে যেখানে সেখানে কাহিনি খুঁজে বেড়াও। সত্যি বলছি অলোক, ইউ জাস্ট লস্ট ইওর ক্যারেক্টার। ইউ লস্ট এভরিথিং।’

উর্বীর কথা শুনে মিটমিটে হাসে ডিটেকটিভ অলোকেশ। মেয়েটা সত্যি এখনও কাঁচা। মেয়েটা অনেক লক্ষ্মী! এই জামানায় এমন নাকে ঘামজমা, কান গরম হওয়া মেয়ে তুমি কই পাবে অলোকেশ?- স্বগতোক্তি করে সে।

উর্বী কী যেন ভাবলো। তারপর বলল, ‘ওরা কাপল নয়?’

‘বলছি তো, তুমি যা ভাবছো ওরা তা নয়! তাহলে কী কাজকাম ফেলে রেখে অসময়ে এমন ঘামে নাকি?’

‘ছিঃ অলোক! অমন বিশ্রীভাবে ও ভাষায় একদম কথা বলবে না তুমি! ঘামে মানে কী, অ্যাঁ?’

‘ঘামে নাই বুঝি?’ ইচ্ছে করেই ভোঁদড়ের হাসি উপহার দেয় অলোকেশ। মেয়েটাকে একটু ম্যাচিওর করা দরকার।

তক্ষুণি বেচুরাম ঢুকে পড়ে বেরসিকের মতো। হাতে রেকাবিতে রাখা নানান পদের খানাদানা। উর্বী তার ভাষায় ‘ইচপেশাল গেশ্ট’। ভালোমন্দ কিছু না খাওয়ালে কি চলে!  

ডিটেকটিভ অলোকেশের চোখের ভাষা বেশ বুঝতে পারে বেচুরাম। বেচু বুঝলো, তার এখন মানে মানে কেটে পড়াই উত্তম। কারণ এখানে বিশেষ কোনো স্ক্রিপ্টের নাট্যায়োজন চলছে।

বেচু বুঝলেও উর্বী কিন্তু বোঝে নি। তখনও সে কাপল নাকি নট-কাপল-এ আটকা পড়ে আছে। অলোকের ঠোঁটে একদিকে পাখিতে খাওয়া থাই পেয়ারার মতো মিটমিটে হাসি ঝুলে আছে। তাতে তান নেই, তবে তত্ত্ব আছে।

‘কী হলো, ওরা কাপল কিনা বলো। না হলে কেন নয়?’

একবুক শ্বাস ছেড়ে অলোকেশ বলল, ‘দে আর নট কাপল, আই’ম ড্যাম শিওর, মাই ডিয়ার।’

‘কী করে বুঝলে?’

‘গোয়েন্দারা যেভাবে বোঝে। জাস্ট কমন সেন্স। চোখকান খোলা রাখো। মনে রেখ, চেয়ে থাকার নাম দেখা নয়। মগজ দিয়ে দেখো।’ 

‘কমন সেন্স! কিন্তু বেশির ভাগ কমন মানুষেরই কমন সেন্স থাকে না।’ উর্বী বলল। 

‘যেমন তোমার নেই।’ বলেই বুঝলো অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে সে। একটু পরেই শুধরে নিয়ে বলল, ‘জাস্ট জোকিং। নেভার মাইন্ড উর্বী।’

ততক্ষণে যা মনে করার করে নিয়েছে উর্বী। সে সোজাসাপ্টা মেয়ে, তবে বোকা নয়। পরিস্থিতি ক্রমশ আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে তেলের বাটি খুলে বসল অলোকেশ। সে জানে, বিপদে আপদে তৈল পদার্থটি খুব কাজে আসে। বস্তুত, তেলের তেলেসমাতি শাশ্বত ও চিরকালীন। 

তেলে শান্ত হয় উর্বী। আবারও সে জানতে চায়- ‘কী করে বুঝলে যে ওরা কাপল নয়! তাহলে কে?’

এ প্রশ্নে মিটমিটে হাসে অলোকেশ। সে জানে, কৌতূহল জিনিসটা মারাত্মক। এই বস্তু মানুষকে ঠেলতে ঠেলতে খাদের কিনারে নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারে। বলে, ‘একটু ভেবে দেখো উর্বী, আজ বৃহস্পতিবার। তার মানে ছুটির দিন নয়। একটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই অফিস কামাই করে বাসায় বসে প্রেম করবে এটা কি হতে পারে? তাছাড়া ওদের বয়সটা দেখো, বায়ো কি তেয়ো নয়? আই মিন ওরা সদ্য বিবাহিত নয় যে আবেগের তোড়ে ভেসে গিয়ে তামাম দুনিয়া ভুলে যাবে। কাজ ফেলে কাম করবে।’  

উর্বী ঘাড় নেড়ে অলোকের তালে গুড় ঢালে- ‘সত্যিই তো! তাই তো!’ ওর মন এখন মেঘভাঙা রোদের মতো ঝরঝরা, উজ্জ্বল। অলোকের মেধা ও মনন তাকে খুব টানে। মেয়েরা বস্তুত মেধাবী ছেলেদের খুব পছন্দ করে। পারতপক্ষে তাদের ঝুলায় না বা ঠেলে দেয় না।   

তাছাড়া দিনের বেলা প্রেম! আমাদের সমাজে এটি এখনও খুব একটা প্রচলিত নয়। সবচেয়ে বড় কথা, অফিস কামাই করে প্রেম করার মতো দুঃসাহস বাঙালির নেই।

‘তাহলে কেসটা কী দাঁড়ালো অলোকেশ?’ 

‘ওই যে, নিষিদ্ধ প্রেম। বা বিষাক্ত।’ দুম করে বলল সে।

‘যাহ্ প্রেম কখনও নিষিদ্ধ হয় নাকি? প্রেম তো প্রেমই। দই যেমন। হাঁড়িতে পাতো বা কলাপাতায়- দই তো দই-ই।’ যুক্তি দিয়ে বলল উর্বী। 

‘তার মানে কী দাঁড়ালো?’ 

‘কিছুই দাঁড়ায়নি, জাস্ট শুয়ে পড়লো।’

‘ঠিক করে বলো অলোক। তুমি কি প্রায়ই দূরবীক্ষণ যন্ত্রে এসব দেখো নাকি? লাইভ টেলিকাস্ট-  নীলছবি!’

‘তোমার মাথা খারাপ! নাকি পেট গরম! এসব দেখে আমি সময় নষ্ট করবো?’ অলোক বলল। তবে ভিতরে ভিতরে সে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। এই উর্বীকে সে বিলক্ষণ চেনে। মাথায় একবার কিছু ঢুকলে  পোকা না-বেরোনো অব্দি নিস্তার নেই। হাঁটতে বসতে সেই একই কথা বলে বলে তার জান জেরবার করে ফেলবে। যে করেই হোক, কিছু একটা শক্ত অ্যালিবাই দাঁড় করাতে হবে।

কী বলবে অলোকেশ ভাবতে ভাবতেই উর্বী পুনর্বার বাইনোকুলার নাকের ডগায় তুলে ধরল অনেকটা সানগ্লাসের মতো। ফোকাস রাস্তার ওপারের সেই ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট। কেবলই তার মনে হয় এই প্রেমে বিষ আছে। এই প্রেম প্রেম নয়। ইহা অপ্রেম বা কুপ্রেম।  

মজার ব্যাপার এই, রাস্তার ওপারের ওই প্রেমিকযুগল লাজলজ্জার ধার না-ধরে একেবারে লোকচক্ষুর সম্মুখে কেন এসব করছে তা ঠিক বোধগম্য নয়। নাকি এ-ও একরকম আর্ট! 

এ বিষয়ে অলোকেশের গোয়েন্দা-দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সে হেসে যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে বলে, ‘বুঝলে উর্বী, বাংলা সাহিত্যে একটি কথা আছে- বলদের গো-বধেও আনন্দ। মানে ওরা মানুষকে দেখিয়ে যে প্রেম করছে এতেই ওদের অফুরান আনন্দ। তুমি লজ্জা পাচ্ছো পাও, চাই কি লজ্জা পেতে পেতে মরে যাও- ওরা থোরাই কেয়ার করছে! ওরা জনসমক্ষেই প্রেম করবে। তাতে কার বাপের কী!’

ফলে কী হলো, উর্বী সাফ জানিয়ে দিলো, অলোকেশ যদি আর কখনও এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র নাকের ডগায় রাখে, তাহলে বিয়ের আগেই তাকে সে ‘পত্রপাঠ সেপারেট’ করে দেবে। অর্থাৎ তৎক্ষণাৎ ডিভোর্স।

উর্বীর কথা শুনে ডিটেকটিভ অলোকেশের বেদম কাশি পায়। কাশির দমক সামলাতে সামলাতে সে দম ফেলবার ফুরসতও পায় না। মনে মনে ভাবে, যত দোষ নন্দ ঘোষ ওই বাইনোকুলারের। শিগগিরই ওটা ময়লার বাস্কেটে ছুড়ে ফেলবে সে। নইলে তার নববৈশাখের রং ও রূপ দুটোই ফিকে হয়ে যাবে পাণ্ডুর রোগীর মতো।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ এপ্রিল ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ