ছোটগল্প || পুলসিরাত
মোহছেনা ঝর্ণা || রাইজিংবিডি.কম
তালগাছ তলার সেই মেঠোপথ, যার পেছন দিকে পুলসিরাত পার হওয়ার মতোই বাঁশের সাঁকো, সাঁকোর ওপারে মিলন ভাইয়ের টং দোকান; দোকান না ছাই, কোনোভাবে বেড়া চারটারে দাঁড় করিয়ে রাখা। দোকানের সামনে স্কুলের নিচু বেঞ্চের মতো একটা বেঞ্চ। সকাল-সন্ধ্যা আশপাশের বাড়ির ছেলে-বুড়োরা এসে বসে। রং চা খায়। বেলা বিস্কুট, আল-আমিন বিস্কুট কিংবা বন দিয়ে চুবিয়ে চুবিয়ে খায়। আবুল বিড়ি, গোল্ড লিফ, ফাইভ স্টার খায়। দু’একজন কালেভদ্রে বেনসনও খায়। দোকানে বাটার বন থাকে। আরো থাকে নাবিস্কো চকলেট, তেঁতুলের আচার, বড়ইয়ের আচার, বাতাসা, শন পাপড়ি, কটকটি।
ভাতঘুমের সময়টাতে টং দোকান খালিই থাকে। কাস্টমার নাই, আজাইরা গপ নাই, চায়ের কাপের টুংটাং নাই, মিলন ভাইও ঝিমায়। মিলন ভাই ভালো মানুষ! সংসারে এমন ভালো মানুষ নাই। হঠাৎ হঠাৎ ভাতঘুমের সময় টং দোকানের সামনে গেলে মিলন ভাই তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘুম তাড়িয়ে বলত, ‘কি গো ছোড বইন, চকলেট খাইবা?’
মাথা নাড়িয়ে বলতাম, ‘না’।
‘এই ভর দুপুরবেলা দোকানে আইছ কিল্লাই? কিছু লাইগবো নি?’
মিলন ভাইয়ের গলায় দরদ থাকে।
‘না, কিছু লাগব না। তুমি কি কাউরে বলছিলা ঘটনাটা?’
‘কোন ঘটনা?’
বুঝতে পারি না মিলন ভাই কি সত্যিই ভুলে গেছে নাকি ভুলে যাওয়ার ভান করছে।
কথা বাড়াতে ইচ্ছে করে না। টং দোকান ফেলে হেঁটে যাই ধান ক্ষেতের আইল ধরে ড্রেনের পাশ দিয়ে পাম্প মেশিনের গোড়ায়। মাটি উঁচু করে বাঁধানো আড়া, একপাশে অনেকগুলা খেজুর গাছ। খেজুর গাছতলায়, এখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে সাপের মতো আঁকাবাঁকা সরু পথে আড়াআড়ি করে কালো পিঁপড়ার সারি যায়। তালগাছটাও দেখা যায়। কারা যেন শীমের মাচা করেছে। হলুদও লাগিয়েছে। হলুদ গাছের উপরের সবুজ দেখে কারও কি ঠাওর করার সুযোগ আছে মাটির নিচে কী সুন্দর কাঁচা হলুদের মেলা!
খালের টলটলে পানি দেখি মাথা নিচু করে। আর ভাবি আজ কি আবার কিছু হবে? সেদিন দুপুরবেলা দিনের ফকফকা আলোর মধ্যেও বাঁশ ঝাড়টার ভেতরের দিকের অন্ধকারে কার যেন খিলখিল করা হাসির শব্দে প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কারণ শুনেছিলাম বাঁশঝাড়ে ভূতের আস্তানা থাকে। ভয় পেয়ে ধীর পায়ে সামনের ঘাসের পথ পেরোতেই দেখি বাঁশঝাড়ের ভেতর থেকে পরনের সালোয়ার কামিজ আর লুঙ্গি ঝাড়তে ঝাড়তে রুনু আপা আর জাফর ভাই বেরিয়ে এসেছে। আমাকে দেখে ওরা যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছিল! একই অবস্থা আমারো হয়ছিল, কিন্তু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ওরা আর আমার ভীত চোখের অস্তিত্ব টের পায়নি।
রুনু আপা আমার বড় চাচার বড় মেয়ে। অতি মাত্রায় সুন্দরী বলতে যা বোঝায় রুনু আপা ঠিক তাই। দুধে-আলতা গায়ের রং। ডাগর চোখ। শুধু মাথার ঘিলুটা কম। এত বোকাসোকা মেয়ে কীভাবে পরের বাড়ির ভাত খাবে তাই ভেবে অস্থির সবাই। সেই বোকাসোকা রুনু আপাকে আমাদের পাশের বাড়ির সুদর্শন কিন্তু বাউন্ডুলে জাফর ভাইয়ের সাথে দিনের আলোয় লুকিয়ে বাঁশঝাড়ের অন্ধকারে দেখে আমি তাজ্জব না হয়ে পারিনি!
যদিও সে কথা আমি বাড়ির কাউকে বলিনি। এমনকি রুনু আপার ছোট বোন টুনু যে আমার সার্বক্ষণিক খেলার সঙ্গী সেই টুনুকেও বলিনি। না বলাটা যে অপরাধ ছিল সেকথা আমি বুঝতে পেরেছি অনেক পরে। কিন্তু আমি কীভাবে বলব? রুনু আপাই আমাকে নিষেধ করেছিল।
এরপর প্রায় সময়ই আমি বাঁশঝাড়ের জায়গাটাতে যেতাম। ভাবতাম আজও কি রুনু আপা আর জাফর ভাই ভেতরে আছে। না, তারপর অনেকদিন আর ওদের দেখিনি। ওদের না পেয়ে ফেরার সময় আমি খালপাড় থেকে, বিলের জমির পাশের আইলে জমা থাকা ঘাস, লতাপাতা, আগাছা উপড়ে শামুক খুঁজে বের করতাম হাঁসের বাচ্চার জন্য। হাঁসের বাচ্চাগুলো তিরতির করে ছুটে আসতো আমার দিকে।
রুনু আপার বাচ্চাটাকে দেখতে দলে দলে মানুষ আসতো। বিল পার হয়ে, সুপারি বাগানের মাঝখান দিয়ে মাথার সিঁথির মতো সরু আঁকাবাঁকা পথ মাড়িয়ে মানুষ আসতো, চোখ-মুখ কুঁচকে বাচ্চাটাকে দেখতো। যেন অচ্ছুৎ কিছু দেখছে! দেখার শখে লাগাম দিতে পারে না, আবার দেখেও পরাণ জুড়ায় না, এরকম উভয়সংকট নিয়ে প্রতিদিন নানান বয়সী নারীদের পদচারণায় ঘিনঘিন পরিবেশ হয়ে উঠতো রুনু আপার ছাপড়ার ঘরটি। বাচ্চাটা মাটিতে পাটের বস্তার উপর রেক্সিনের বিছানায় শুয়ে ট্যাঁ ট্যাঁ করতো। বিহবল দৃষ্টিতে রুনু আপা মানুষগুলোকে দেখতো। ওরাও দেখতো রুনু আপাকে। আর বলতো, ‘বাইচ্চাগা তো হুরামার মতো সুন্দর অইছে!’ কেউ কেউ আবার ফোঁড়ন কাটতো, ‘সুন্দর অই লাভ কি! অইছে তো হেই জারুয়া!’
রুনু আপার মা বিলাপ দিয়ে কাঁদতো। টুনুটাও মনমরা হয়ে থাকতো। যারা একসময় তাদের খুব কদর করতো তারা সবাই কেমন যেন চোর ছেচড়ের মতো তাদের এড়িয়ে যেতো। যেন এদের পাশ দিয়ে হাঁটলেও টাট্টিখানার ময়লা লেগে যাবে গায়ে। বড় চাচার হাঁকডাক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একদম। স্ট্রোক করে এখন নির্বাক। কিছুদিন পরপর থেরাপি দিতে হয়। বড় চাচার ছেলেরাই সব ব্যবস্থা করে। একসময় এই গ্রামে বড় চাচা যা বলতেন, সবাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করত। দুই সেশান চেয়ারম্যান ছিলেন বড় চাচা। সমাজের কত বড় মানুষের সাথে ওঠাবসা।
রুনু আপার শরীরের খবরটা যখন সবাই জেনে গেছে রুনু আপাকে তখন থেকেই কেমন পাগল পাগল লাগতো আমার। আগে খুব কথা বলতো বলেই কিনা হঠাৎ করে একদম কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু দেখতাম চোখের কোণ ভেজা। প্রায় সময় আমাদের পুকুর ঘাটের বৈঠকখানায় বসে থাকতো। সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকতো। কখনো কখনো আমি আর টুনু গিয়েও বসতাম। পুকুর পাড়ের লেবু গাছ থেকে মাতাল করা লেবুর ঘ্রাণটা ভেসে আসতো। রুনু আপার চোখ ভেসে যেতো জলে। ঘাটের উপর রুনু আপা পা দিয়ে কি যেন আঁকিবুঁকি করতো।
একদিন রাতে শোবার সময় শুনি বাবা মাকে বলছে, ‘নদীর দিকে একটু নজর রাইখো। ডর লাগে গো। কি একটা বেইজ্জতি অবস্থা অই গেছে, চিন্তা কইরছে নি কোনো দিন কেউ।’
মার কোনো কথা কানে আসে না। তারপর আবার শুনি, বাবা বলে, ‘রুনুর ঘটনার হরর তন এ বাড়ির মাইয়াগো বিয়া দেন তো বড় মসিবত অই যাইবো। রুনুর কারবারটা মনে হড়লেই অস্থির লাগি উডে। মাইয়াগা একটু বংশের মান সম্মানের কতাও চিন্তা করে নো। অনও কেরুম ঘাড় ব্যায়া করি চায়! আরে বেডি কই এ না দিবি, এই আকামের ভাগীদার কে?’
ঘটনা জানাজানি হওয়ার কিছুদিন আগে রুনু আপার জন্য বাবার কাছে একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। ছেলে ইতালি থাকে। বিরাট অবস্থা। গ্রামেও জায়গাজমি ভালোই আছে। শুধু দুই ভাইয়ের সংসার, বোন নাই। বাবার বক্তব্য অনুসারে, আলা নাই, জ্বালা নাই। ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুলি রানি অই থাইকবো।
কিন্তু রুনু আপাকে রাজি করানো যায়নি। এখনো সুযোগ পেলে বাবা সেই ইতালি ফেরত ছেলেকে বাড়ির জামাই বানাতে না পারার আফসোসে প্রকাশ্যে হাপিত্যেশ করে আর বলে, ‘হিছা মারা কোয়াল লই আইছি দুইন্নাইত। যেয়ানে আত দিই মাডি ছালি অই যায়।’
আগে কী সুন্দর দিন ছিল আমাদের। প্রতি বিকালে রুনু আপা আমাকে আর টুনুকে দুই ফিতা দিয়ে দুই বেনী করে দিতো। আমরা বেনী ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে বৈকালিক ভ্রমণে বের হতাম। কখনো কখনো চলে যেতাম বোতের আড়ায়। বড় বড় কড়ই গাছের ছায়ায় বসে খালপাড়ের জমিগুলোর আইল দিয়ে মানুষের ছুটে যাওয়া দেখতাম। আবার কখনো কখনো ফেরার সময় আমাদের আড়া থেকে ঢেড়স, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ তুলে নিয়ে আসতাম। মা আর বড় চাচী খুশি হয়ে যেতো। কারণ তাদের একটা কাজ আমরা কমিয়ে দিয়েছি এই ভেবে। না হলে এই টুকিটাকি সবজি আনার জন্য তাদেরকেই যেতে হতো ধানি জমির আইল ধরে বোতের আড়ায়। হঠাৎ হঠাৎ রুনু আপা আমাদের সঙ্গী হতো। যেদিন রুনু আপা আমাদের সাথে যেতো সেদিন আমাদের মনে খুব সুখ থাকতো। কারণ রুনু আপা কোঁচড় ভরে নিতো চাল ভাজা, কখনো কাঁঠাল বিচি ভাজা, কখনো সীম বিচি ভাজা, আবার কখনো কাগজে মুড়ে নিতো মুখরোচক আচার।
বোতের আড়ার বাঁশের সাঁকোটা এত বেশি সরু ছিল, প্রায় সময় আমার মনে হতো এই বুঝি আমি ঝপাৎ করে সাঁকো থেকে খালের মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। সাঁতার জানতাম না দেখে রুনু আপা, টুনু থেকে শুরু করে বাড়ির সবাই কি যে ক্ষেপাতো! সাঁকো পার হওয়া নিয়ে আমার ভয় দেখে রুনু আপা মাঝে মাঝেই বলতো, ‘এই বাঁশের সাঁকো নাকি অনেক বড়। মরণের পর নাকি চুলের চেয়েও সরু সাঁকো পার হতে হবে আমাদের। সেই সাঁকোর নাম নাকি পুলসিরাত। যাদের মনে কোনো খারাপ চিন্তা নেই, পাপ নেই, যারা কখনোই মিথ্যা বলে না তারা নাকি তরতর করে সেই পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। আর যাদের মনে পাপ আছে তারা পুলসিরাতের রশি ছিঁড়ে হাবিয়া দোযখে পড়ে যাবে আর সারা জীবন আগুনে পুড়তে পুড়তে কয়লা হবে।’
আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়ার কথা শুনলেই আমার গলা শুকিয়ে আসতো। খালি ভয় লাগতো। টুনুও ভয় পেতো। আমাদের চোখে-মুখে ভয় দেখে রুনু আপা হাসি হাসি মুখ করে অভয় দিয়ে বলতো, ‘ছোটদের মনে কোনো পাপ নেই। ছোটরা নিষ্পাপ ফেরেশতার মতো।’ রুনু আপার আশ্বাস বাণীতে ভয় কিছুটা কমে আসলেও মূলত তখন থেকেই পুলসিরাত পার হওয়ার ভয়টা মাঝেমাঝেই আমাকে তাড়া করে বেড়াতো।
রুনু আপাটা কেন এতো বোকা হলো এই ভেবেই আমার খুব রাগ হতো। ইচ্ছে করতো গিয়ে সবাইকে বলে দিই ভাদাইম্যা জাফরের নাম। কিন্তু রুনু আপার কড়া নিষেধ ছিল! কেন এত কষ্টকর পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গিয়েও রুনু আপা কিছুতেই ধোঁয়াশা কাটাচ্ছিল না সে কথা আজও আমার মাথায় আসে না। জাফর ভাই কি রুনু আপাকে এমন কোনো দিব্যি দিয়েছিল! নাকি ভয় দেখিয়েছিল! নাকি তাদের কোনো গোপন শপথ ছিল!
রুনু আপার বইয়ের ভেতরে যেদিন জাফর ভাইয়ের চিঠি পেলো বড় চাচি সেদিন থেকে সেকি যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব জাফর ভাইয়ের সারেং বাবা-চাচাদের। দিনের পর দিন বড় চাচার পায়ের ধূলি নিতে পড়ে থাকতো আমাদের কাছারিতে, আর যখনই নিজেদের ছেলের কুকর্মের জন্য বিচার বসাতে গিয়েছে বাবা, তখন কি সব নোংরা কথার বাণ ছুঁড়েছিল! জাফর ভাইকেও তেমন একটা দেখা যেতো না। গ্রামজুড়ে হইচই-এর কিছুদিনের মধ্যেই শুনি জাফর ভাই সৌদি আরবে চলে গেছে দুলাভাইয়ের কাছে।
বাচ্চাটা দুধের জন্য কাঁদতো। আমাদের বাড়িতে বিড়ালকেও এর চেয়ে বেশি যত্ন করা হতো। কিন্তু এই বাচ্চাটা দিনভর মাটিতেই পড়ে থাকতো। বাচ্চা হলে প্রথম সাতদিনের আঁতুড়ঘরে থাকার রেওয়াজ তিনদিনও মানতে পারেনি রুনু আপা। নিজেই বাচ্চার কাঁথা, কাপড় ধুয়ে বেড়ার উপর ঝুলিয়ে দিতো। বেড়ার ঝুল কালিতে ধোয়া কাঁথা আবার ময়লা হতো। প্রচুর রক্তক্ষরণে রুনু আপার চোখ-মুখ ফ্যাকাসে হয়ে থাকতো। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল রুনু আপার প্রসব বেদনার সময় আমাদের মিয়া বাড়ির সবাই নবজাতকের কান্নার শব্দ শোনার চেয়ে মৃত্যুর জন্যই অপেক্ষা করছিল। কে জানে দুই দুইটি মৃত্যু সংবাদ একসঙ্গে শোনার অপেক্ষা ছিল তাদের। কিন্তু না, সবার আশা আকাঙ্ক্ষাকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে একটা মানব শিশু কেঁদে উঠেছিল। রুনু আপাও মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুয়ারটা তো চিনেই এসেছে। তাই আমাদের অজান্তেই হয়তো সে দুয়ারের সাথেই গোপন সখ্য হয়ে গিয়েছিল।
মৃত্যুতে নাকি কখনো কখনো মুক্তিও হয়। রুনু আপার মুক্তি হয়তো ছিল না, নাকি ছিল আমি বুঝতে পারিনি। তবে খুব অস্থির লাগতো। মনে হতো ঘুমাচ্ছি, ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখছি, ঘুম ভেঙে জেগে উঠলে দেখবো সব ঠিকঠাক।
জাফর ভাইয়ের বিয়ের খবরে আমাদের বাড়ির কারো মধ্যে কোনো চৈতন্য নেই। তার পানচিনির দিন আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের বাড়ির কয়েকজন সেজেগুজে তাদের সঙ্গী হয়েছে। এমনকি আমার ছোট চাচাও গেছে। জাফর ভাই সাড়ে তিনবছর পর সৌদি আরব থেকে ফিরেছে। এক জুমার নামাজ শেষে আমাদের বাড়ির মসজিদের দানবক্সে নগদ বিশ হাজার টাকা দিয়েছে। নিজেদের বাড়ির মুরব্বিদের জন্য সৌদি আরব থেকে আসার সময় জায়নামাজ, তসবিহ, সাবান আর আতর এনেছে। সবাই বেশ খুশি ছিল! জাফর ভাই উমরাহ হজ করেছিল জেনে সবাই বলাবলি করছিল, হামিদুল্লার ছেলেটা সৌদি আরবে গিয়ে মানুষ হয়ে এসেছে।
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে আমাদের বাড়িতে ঢোকার পথে সুপারি বাগানের কোণে হঠাৎ জাফর ভাইয়ের মুখোমুখি হয়ে গেলাম। আমাকে দেখে স্বাভাবিক সৌজন্য করার চেষ্টা করলেন জাফর ভাই। যেন অনেক দিন পর বেড়াতে এলেন, খোঁজখবর নেয়ার ভঙ্গিতে বললেন, ‘কেমন আছো নদী?’
জাফর ভাইকে দেখে রাগে আমার গা শিরশির করছিল। মাথার মধ্যে কিছু একটা দপদপ করছিল। আমার ইচ্ছা করছিল, ‘চিৎকার করে বলি, শুয়োরের বাচ্চা, তুই আমার বোনটাকে জীবন্ত কবর দিলি, এখন আবার আমার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলস? কুত্তার বাচ্চা...।’
আমি কিছু না বলে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে চলে আসছিলাম, তখন শুনি জাফর ভাই বলছে, ‘তোমার বোনরে আমি ভালোই বাসছিলাম।’
ভুল কিছু শুনলাম কিনা ভেবে আমি পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি জাফর ভাই নারকেল গাছটার গুঁড়ির উপর মাথা নিচু করে বসে আছে।
হঠাৎ হালকা বাতাস আসছিল দখিণের বিল থেকে। তার জেরেই রাস্তার পাশে বাঁশ বাগানের পাতা শনশন করে কাঁপছিল। আমিও ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে জাফর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। পারলে চোখ দিয়েই এই অমানুষটাকে ভস্ম করে দেই।
জাফর ভাইই বললেন, ‘রুনু যদি আমারে ভালোবাসতো আমার চেয়ে সুখী আর কেউ হইতো না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য রুনু আমাকে ভালোবাসেনি। অবশ্য আমাকে ভালোবাসার কোনো কারণও ছিল না। দুইবার ইন্টার ফেল করা ভাদাইম্মা ছেলেরে কোন মেয়ে পছন্দ করবে বলো!’
জাফর ভাইয়ের কথায় আমি আগা মাথা কিছু খুঁজে পাই না। আমি রেগেই বলি, ‘আর কত মিথ্যা কথা বলবেন? এবার একটু সত্যিটা স্বীকার করেন। নিজের কাছে নিজের লজ্জা লাগে না? অমানুষের মতো পালাই গেলেন। আমার বোনটা সহজ-সরল ছিল বলে জানে বাঁচি গেলেন। কিন্তু আপনার এই বাঁচি থাকার কোনো দাম আছে? চোরের জীবনও আপনার থেকে ভালো। আপনি চোরেরও অধম।’
আমার যাওয়ার তাড়া ছিল। তাই হাঁটা ধরতেই জাফর ভাই বললো, ‘জানি এখন বলে কোনো লাভ নেই, তবু তোমারে একটা গোপন সত্যি বলবো। বিশ্বাস করা না-করা তোমার উপর। আমি তোমার বোনরে খুব ভালোবাসতাম, কখন থেকে ভালোবাসতাম আমি নিজেও জানি না, কিন্তু তোমার বোন অন্য কাউরে ভালোবাসছিল।’
নিজেকে সংযত রাখতে পারি না আমি। ‘আপনি মানুষ নাকি জানোয়ার? যে মানুষটা নিজের বাচ্চাটার একটা পরিচয় দিতে পারে নাই, এখনো বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তার কোনো হদিস নাই, তাকে নিয়ে আপনি আরেকবার মিথ্যা কথা বলতেছেন? ওকে আবার কলঙ্কিত করতেছেন? আপনার সাহস দেখে আমার মরে যাইতে ইচ্ছে করতেছে’ বলে রাগে গজগজ করে আমি বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করি।
রুনু আপার বাচ্চাটাকে সবাই জারুয়া কেন বলতো সেটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারতাম না। একদিন মাকে জিজ্ঞেস করতেই মা দিলেন এক ধমক। মার ধমক খেয়ে বুঝে গেছি জারুয়া মানে খুব খারাপ। যেটা কাউকে বলা যায় না। রুনু আপার জারুয়া বাচ্চাটাকে দেখলে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠতো। এত অবহেলা, অবজ্ঞা, অথচ চেহারাটা এত মায়া!
একদিন দেখি বড় চাচি বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। পুরো শরীরটা নীল হয়ে গিয়েছিল বাচ্চাটার। নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে পুরো বুকটা ডেবে যাচ্ছিল, কী যে কষ্ট পাচ্ছিলো এতটুকু বাচ্চা। আমার মা, ছোট চাচি সবাই দৌড়াদৌড়ি করে হাতে পায়ে তেল মালিশ করছিল, আমরাও হইচই শুনে সবাই রুনু আপার ছাপড়ার ভেতর গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম, কিছুক্ষণ পর মা কেঁদে বললো ডাক্তার দেখাতে হবে। আমি আর টুনু দৌড়ে ছুটে গেলাম মাখন ডাক্তারের বাড়ি। মাখন ডাক্তার বাড়ি ছিলেন না। রোগী দেখতে গেছেন। আমরা ফিরে এসে দেখি সব শেষ। বড় চাচি বিলাপ দিয়ে কাঁদছেন- কী পাপ তিনি করেছেন, কেন তার মেয়ের জীবনটা এমন এলোমেলো হয়ে গেলো। রুনু আপা কোনো শব্দ করে নি। নির্বাক তাকিয়ে ছিল বাচ্চাটার দিকে। কী ফুটফুটে একটা বাচ্চা! মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ মনে হলো, আশ্চর্য এই ২২ দিনে রুনু আপার বাচ্চাটার একটা নামও রাখা হয়নি।
জাফর ভাইয়ের বিয়ের তারিখ ঘনিয়ে আসছে। আমাদের ঘাটার পুকুরের বাঁধানো ঘাটে বসে ওরা বিয়ের সদাই পাতির লিস্ট করে। সেই লিস্টে আমাদের বাড়ির মুরব্বি গোছের মহিলাদের জন্য শাড়ি কেনার তালিকায় তিনজনের নাম ওঠে। ছোট চাচার ছেলে রনি এসে ভেতর বাড়িতে সে খবর পৌঁছে দেয়। ভালো-মন্দ মিশ্র একটা অনুভূতি জেগে ওঠে সবার। মসজিদের দান বাক্সের বিশ হাজার টাকা, সম্ভাব্য তিনটা তাঁতের শাড়ি, বিয়ে, বৌভাত মিলে দু’বেলা বিলাসী খাবারের কাছে ফিকে হয়ে গেলো জারুয়া বাচ্চার মায়ের অমানবিক দিনযাপনের অসহ্য মলিন চিত্র। পাশের বাড়ির বিয়ের ধুমধামের গল্প আমাদের বাড়ির আড্ডা মশগুল হয়ে ওঠে। বিকাল বেলার অলস প্রহরে কাঁঠাল পাতায় লবণ মরিচ মেখে কাঁচা পেয়ারায় কামড় বসাতে বসাতে জাফর ভাইয়ের হবু বড়লোক শ্বশুরবাড়ি থেকে পিক্যাপ ভর্তি কী কী জিনিসপত্র আসতে পারে তা নিয়ে হিসাব কষে রমণীমহল। হঠাৎ তখন কারো কারো রুনু আপার কথাও মনে পড়ে যায়।
আমি আর টুনু মন লাগিয়ে পড়ি। সময়ের মূল্য রচনা পড়ি, ‘টাইম অ্যান্ড টাইড, ওয়েট ফর নান।’ আমাদের সময়ও বুড়ো জিপসির মতো ছুটতে থাকে। ঘরের পাশে লাগানো ডালিম গাছটা বড় হয়। পেয়ারা গাছে নতুন করে পেয়ারা ধরে। টিনের চালাটা পুরনো হয়। রুনু আপার বাচ্চার কবরে লাগানো জবা ফুল গাছটাতে রক্তের মতো লাল টকটকে জবা ফুল ফোটে। ঘন সুপারি বাগান আর নারকেল গাছের ফাঁক দিয়ে বেড়ে ওঠা রক্তজবা গাছটা আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না। এই সাড়ে তিনবছরে আমরাও বেড়ে উঠেছি শরীরে, মনে। আমাদের এসএসসি পরীক্ষার তোড়জোড়। টুনু টেস্ট পরীক্ষায় খারাপ করেছে। পরে বাবা গিয়ে স্কুলের হেডস্যারকে বলে ওকে ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। মাঝে মাঝে আমি আর টুনু একসাথেই পড়তাম রাতে কুপি জ্বালিয়ে। একরাতে প্রচণ্ড ঝড়ে কুপির আলো নিভে গিয়ে আমরা দু'জনেই ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল শরীরটা ভারী হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু একটা যেন আমাকে চেপে ধরছে। ঘরের সবাই ঘুম। ঝড়ে গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠছিল। আমি দেখলাম রুনু আপা তার বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে হাসতে হাসতে আমাদের ঘরের দিকে আসছে। ভয়ে আমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা। আমি কোনোভাবে টুনুকে ডাকলাম। টুনু সঙ্গে সঙ্গে বললো, ‘চুপ, চুপ...!’
পরদিন টুনু আমাকে বললো, সেও নাকি রুনু আপাকে দেখেছে গতকাল রাতে। আমরা দু'জনেই অবাক চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকি।
আমি টুনুকে জাফর ভাইয়ের কথাগুলো বলতে চেয়েও পারিনি। কারণ প্রথম থেকেই আমি টুনুর কাছে সব গোপন করেছি। আমি প্রায় দিন রুনু আপাকে দেখি বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আমাদের ঘরের সামনে বসে থাকে, কিছুক্ষণ বাচ্চাটার সাথে কি যেন বলে হাসতে হাসতে কুটি কুটি হয়ে যায়, তারপর আবার তালগাছ তলার সেই মেঠো পথ ধরে চলে যায়। যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে মায়া মায়া চোখে বিড়বিড় করে কি যেন বলে। যতবারই এই দৃশ্যটা আমি দেখি আমার গলা শুকিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তারপর আমার গা কেঁপে জ্বর আসে। ডাক্তার বলেছে সামনে পরীক্ষা, তাই বেশি চাপ নিচ্ছি দেখে এরকম হচ্ছে। আমি রুনু আপার কথা কাউকে বলতে পারি না। মাঝে মাঝে টুনুকে খুব বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি তো প্রথম দিন থেকেই টুনুর কাছে সব সত্যি লুকিয়েছি। যখন রুনু আপা আমাকে জাফর ভাইয়ের কথা বলেছিল তখনও। এখন কী টুনু আমার কথা বিশ্বাস করবে? জাফর ভাই কী ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার করলো আমার সামনে! আমি কিছুই করতে পারলাম না। আমার খুব অস্থির লাগে। আমি কি পুলসিরাত পার হতে পারবো? আমি তো কোনো মিথ্যা বলিনি। সত্য লুকানো কি মিথ্যার মতো পাপ? কিন্তু রুনু আপাই তো আমাকে নিষেধ করেছিল।
জাফর ভাইয়ের বিয়ের আগের রাতেই ঘটনাটা ঘটে যায়। আমরা কেউ বিশ্বাস করতে পারিনি ঘটনার ব্যাখা কী! কীভাবে কী ঘটলো! কেন ঘটলো? এই ঘটনাটা সত্যিই ঘটেছিল কিনা তা নিয়েও বেশ বিভ্রম ছিল আমাদের অনেক, অনেক, অনেকদিন। শুক্লপক্ষের চাঁদের আলোয় জাফর ভাইয়ের বিয়ের আলোকসজ্জায় বাগানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা মাথার সিঁথির মতো চিকন পথের দুধারে, লাল, নীল, সাদা টুনিবাতির চমকে সে এক দেখার মতো সৌন্দর্য হয়েছিল। বাড়ির সামনের বড় রাস্তার উত্তর পাশের তাল পুকুরের চারদিকে নতুন করে খাড়া সিমেন্টের পিলার বানিয়ে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনী ওয়াদা পালন করার সাথে সাথেই গ্রামের ছেলে বুড়োদের একটা হল্লা হলো। কাঠফাটা গরমের দিনগুলোতে সবাই পিলারগুলোর উপর বসে গল্পগুজব করতে করতে হাওয়া খায়। চা, বিড়িও খায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব সময় এ জায়গায় মানুষজন থাকেই গোটা দু’চারেক। পাশেই আছে রুস্তম আলীর মুদি দোকান। তার পাশে বৃদ্ধ সবুর মিয়ার মনিহারি মালের দোকান। সবুর মিয়ার ছেলে সুরুজ মিয়ার আছে টংঘর। চা, সিগারেট, বিস্কুট বিক্রি করে।
জাফর ভাইদের বাড়ির প্রবেশ পথেই বিশাল করে বিয়ের গেট বানানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর গ্রামের রাস্তায় সাধারণত লোকজন কম থাকে। টং চায়ের দোকানগুলো দু’একটা খোলা থাকে। তিনদিন ধরে লাইটং করার কারণেই হয়তো সন্ধ্যার পরে কেউ এ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিয়ের গেটটার দিকে তাকাতো। জাফর ভাই নাকি বিয়ের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করে বন্ধুর মোটর সাইকেলে করেই ফিরছিলেন। বন্ধুই তাকে পুকুরের সামনে নামিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে আবার মোটর সাইকেলে করেই নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এসব অবশ্য পরে শুনেছি মানুষের কাছে। মূল কথা কান কথা হতে হতে ততক্ষণে রূপকথা হয়ে গেছে।
জাফর ভাইয়ের বিয়ের দিন সকালবেলা বড় রাস্তার মোড়ের তাল পুকুর থেকে জাফর ভাইয়ের লাশ তোলা হয়। ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার কোনো চিহ্ন ছিল না লাশের শরীরে। শুধু গলাটা কালো হয়ে ছিল। গলার এক পাশে রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এসছিল জাফর ভাইকে দেখতে। থানা, পুলিশ, মামলা হয়ে যাচ্ছিলো মুহূর্তেই। কিন্তু কেন জানি ময়নাতদন্তের কথা শুনতেই জাফর ভাইয়ের মা কোনোভাবে রাজি হলেন না। জাফর ভাইয়ের আত্মীয় স্বজনরা তার মায়ের কথা মানতে চাচ্ছিলো না। একটা সুস্থ সবল তাজা মানুষ মুহূর্তেই নাই হয়ে যাবে একথা গ্রামের কেউই মেনে নিতে পারছিলো না। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই তাজ্জব বনে গেছে। কিন্তু কাকে সন্দেহ করবে, সে ব্যাপারেও কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারে না কেউ। জাফর ভাইয়ের মা ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি শুধু একটা ব্যতিক্রম ছাড়া। লাশের পাশেই ভেসে ছিল খয়েরি রঙের বাটিকের ওড়না। ওড়নাটা দেখেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো। কিন্তু এটা যে রুনু আপার ওড়না তার অবশ্য আলাদা কোনো প্রমাণ কেউ বের করতে পারেনি। কিন্তু কোনো এক বিচিত্র কারণে রুনু আপার এই ওড়নাটার কথা আমাদের অনেকেরই মনে আছে। আমরা অনেকেই মনে মনে নিশ্চিত যে এটা রুনু আপারই ওড়না। পুকুরপাড়ে মেয়েদের চুলের একটা কাটাও পাওয়া গেছে। অবিকল এরকম একটা চুলের কাটা রুনু আপারও ছিল। কিন্তু আমরা কেউ কোনো কথা বলিনি। তবে গ্রামের অনেকেই বলেছিল, আল্লাহর বিচার আল্লাহ এমনেই করে। শুধু বান্দা বোঝে না। রুনুর কইলজা যদি অন একটু ঠান্ডা অয় গো! আহারে, এত ভালা মাইয়াগা কেরুম বেরহমের মতো মইরছে। মনে হইড়লে চোখের হানি আটকান যায় না। আল্লাহর বিচার আল্লাহ ঠিকই করে। আমরা মুরুক্ষ বান্দা বুঝি না।
এই ঘটনার পর গত ষোলো বছরে আমি আর কোনোদিন স্বপ্নে কিংবা বিভ্রমে রুনু আপাকে দেখিনি। হঠাৎ হঠাৎ শুধু রুনু আপার গায়ের মিষ্টি গন্ধটা নাকে লাগে!
ঢাকা/তারা
রাইজিংবিডি.কম