ঢাকা     শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১ ১৪৩১

সবচেয়ে বেশি অপমানিত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা: শাওন মাহমুদ 

শাওন মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১০:৪৬, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১
সবচেয়ে বেশি অপমানিত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা: শাওন মাহমুদ 

৫০ বছর দীর্ঘ সময়। আমি আমার অবস্থান থেকে স্বাধীনতার ৫০ বছর নিয়ে বলব। আবার আরেকজন তার অবস্থান থেকে আরেকভাবে বলবেন। তরুণরা একরকম বলবে, বৃদ্ধরা অন্যরকম বলবেন। এই জায়গা থেকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয়টি নির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল। প্রাপ্তির কথা যদি বলি, গত তিন টার্ম ধরে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার রয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। দেশে বড় ধরনের উন্নয়ন দেখছি। বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী এখন নামে চেনে। সেটা খেলাধুলা, পড়াশোনা, বিভিন্ন গবেষণার বদৌলতে সম্ভব হয়েছে। 

তবে গত তিন টার্মে সবচেয়ে বেশি অপমানিত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থানে তাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, শারীরিক আহত করা হয়েছে, গলা ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল— একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এই জায়গাটি পুরোপুরি তছনছ হয়ে গেছে। আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন একেবারে ভেঙে পড়েছে। সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছাড়া একটি দেশ জেগে থাকতে পারে না। যারা সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে, তারা দেশ নিয়ে সচেতন নন। সুতরাং আমাদের দেশে এখন আর অবাধ সাংস্কৃতিক আন্দোলন হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখি না। আমাদের অপ্রাপ্তি এটা।

আরেকটি অপ্রাপ্তি আমাকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তোলে, তা হলো— ডিজিটাল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে যে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এই জায়গার বৃত্তে বিশাল শূন্যতা রয়ে গেছে। এ বিষয়ে পলিসি মেকিংয়ের ক্ষেত্রে শূন্যতা রয়ে গেছে প্রচুর। যাদের ডিজিটালি সমৃদ্ধ করতে চাচ্ছে, তাদের এই জায়গা অর্থাৎ টেকনিক্যালি আরো শিক্ষিত করা উচিত ছিল। যে কারণে ফেইসবুক, ইউটিউব, টিকটক, লাইকি, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আজকে এ অবস্থায় নেমে এসেছে। এসব মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিংহভাগ মানুষ ওয়াকিবহাল নয়। পলিসি মেকিং বা নীতি নির্ধারণে ঝামেলা আছে, তরুণদের জন্য ডিজিটাল শিক্ষার কারিক্যুলাম নেই। এসব ক্ষেত্রে তরুণদের অবাধ চাকরিস্থল হবার কথা থাকলেও  শুধু দক্ষতার অভাবে সেসব পদে বাইরের দেশের লোকজন এসে বসে যাচ্ছে। আমরা বলছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, কিন্তু শেকড়ের যত্ন নিয়ে ভাবছি না। 

আরো পড়ুন:

বাবার মতো লাখো শহীদের আত্মত্যাগে পাওয়া এই দেশ। শহীদ পরিবার হিসেবে আমার মা বা আমরা যেভাবে ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ধরে রেখেছি, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আমাদের প্রত্যাশা আমরা পূরণ করেছি বলে মনে করি। যারা নিজের আত্মপরিচয়, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ইতিহাস জানে না; তাদের তো আসলে গুলিয়ে খাওয়ানো যায় না। এটা গুলিয়ে খাওয়ানোর বিষয়ও না, ধারণ করবার বিষয়। এজন্য দেশের প্রতিটি মানুষকে তার নিজের কাছে প্রশ্ন করতে হবে— যে ভাষায় কথা বলছি সেই ভাষা কোথা থেকে এসেছে? এই চর্চা পরিবার থেকে আসে, দেশ থেকেও আসে। যেমন আমাদের শিক্ষানীতিতে ঝামেলা আছে। আমরা আশা করছি, তরুণরা দেশ নিয়ে কাজ করবে, ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তার সঠিক কারিক্যুলামে নেই। আবার বলা হচ্ছে, এসব নিয়ে গবেষণা করুন। পুরো বিষয়টি আসলে জট পাঁকানো।

এখন আমরা যাদের কাছে দেশ রেখে যাচ্ছি, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম কতটা ধারণ করে? এই ধারণ করানোর কাজটি রাষ্ট্রীয় বিষয়। ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধী দল প্রত্যাশা করছেন পরবর্তী প্রজন্ম তাদের ধরে রাখবে। তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করবে। প্রত্যাশা করলেও তারা কাজগুলো করে যাচ্ছে না। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় কতটুকু পরিমাণে বাংলাদেশের ইতিহাস রয়েছে। আমাদের সন্তানকে তো ইতিহাস সেভাবে পড়ানোই হয়নি। তারপরও তারা কেন প্রত্যাশা করেন পরবর্তী প্রজন্ম তাদের ধারণ করবে— আমি সত্যি বুঝতে পারি না।

লেখক: শহীদ বুদ্ধিজীবী সুরকার আলতাফ মাহমুদের কন্যা

শান্ত/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়