নোবেলজয়ী আনি এরনোর উপন্যাস: তৃতীয় পর্ব
কেবল সেইসব উৎসবমুখর ঘটনা ছাড়া আমার মা আমাদের বের করে দেয়ার সিদ্ধান্তই নিতেন। একটা তীক্ষ্ম, প্রকম্পিত কণ্ঠস্বর যেমন একটা কুকুর চাঁদের দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করে। আমি সত্যিই জানতাম না তার আসল অভিযোগটা কী, হয়তো বাবার উচ্চাকাঙ্খার অভাব বিষয়েই কিছু একটা। ‘তুমি ইয়ার্কি ফাজলামো করেই সময় নষ্ট করো... তুমি একটা পাগল... আমি না-থাকলে তোমাকে গু খেয়ে চলতে হতো... আমি চলে যাবো, বরং ফ্যাক্টরিতে কাজ করবো কিন্তু এই আকাইম্মা ধাড়ি বদগুলা কখন এসে চেয়ারে পাছা ঠেকাবে তার অপেক্ষা করবো না, এরা তো কোনোদিন টাকাও দিতে পারবে না ঠিকমতো...’’
সৌভাগ্য বয়ে আনা উল্কাপাতের মতো বিষণ্ন দিন আলোকিত হয় সেখানে, পেঁয়াজের তলদেশ ধরে সাজানো সারিগুলো অপেক্ষা করে পরিবেশনের জন্য, একটা ফ্যাক্টরি হলো নতুন পিনের মতো পরিষ্কার আর ঝকঝকে। আমার মায়ের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর চিৎকার করে জীবনের গহন, অন্ধকার দিকগুলোকে তুলে ধরে। আমার বাবা, কম রহস্যময় নয়, চিবুক নিচু করে, সে জানে চারদিকে বাহু ছড়িয়ে একটা ঢেউ তুলে এ সব কিছুর শেষ হবে, টেবিল থেকে প্লেটগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে, কিছু গালাগাল রয়ে গেছে আর এই তো সব। আমি সব কিছু নিয়ে ক্লান্ত- তিনি নিজেকেই বলেন। আমি তার প্রতি সহানুভূতি বোধ করি।
আকস্মিক, এক বজ্রপাতের মতো শব্দ, ব্রেকের খ্যাচখ্যাচ, দশটার ট্রেন, রাতের শেষ ট্রেন, স্টেশনে পৌঁছানোর আগে ধীর হয়ে ওঠে। ‘কালী ঘোড়া!’ প্রত্যেক সন্ধ্যায় সেই একই পুরনো কৌতুক সৈন্যরা ট্রেন ধরে ব্যারাকে ফেরার আগে চালিয়ে যায়। এর মানে ঘুমের সময় হলো। কী সুখের ব্যাপার তোমার দিনের পোশাক খুলে আর সিঁড়ির তলায় গিয়ে এপ্রোন গায়ে দিয়ে, উপরে গিয়ে চপ্পল পরা, শোবার ঘরে গিয়ে নাইটগাউন পরে, বিছানার চাদরে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা এই ঘোটকীর হ্রেস্বাধ্বণি আর লাফঝাপের শব্দ শোনার আগেই, যে ছুঁটে যাচ্ছে র্যু, প্যারি আর বড় বড় শহরের দিকে... পুরনো কালী ঘোড়া আমার ঘুমন্ত চোখের পাতায় উজ্জ্বল আলোয় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমি কোনোমতে শুনতে পাই সিঁড়ি দিয়ে বাবা উঠতে উঠতে গান গাইছে, ‘‘যখন তুমি আছো বেদনায়, এসো তখন আমার কাছে,’’ আমার মা বিছানার প্রান্তে পোশাক খুলতে থাকে, তার স্কার্ট, তার ছায়া পায়ের কাছে পড়ে থাকে, সে তার কাঁচুলি খুলে ফেলে আমার দিকে পেছন ঘুরে আর এক মুহূর্তে নাইটগাউন পরে ফেলে। সে আমার বিছানায় আসে, আমার উপর ঝুঁকে পড়ে, তার স্তন বাকী সব কিছুকে যেন শুষে নেয়: ‘‘তুমি কি সুন্দভাবে আর আরামে আছো, হিস্যু করেছো?’’ আর আমার বাবা চুপচাপ থাকে, তবে শিস দিতে থাকে যখন সে মোজা আর অন্তর্বাস খুলতে থাকে। সে আন্ডারশার্ট পরেই ঘুমায়। একবার আলো বন্ধ হয়ে গেলে, আমি তখনও শুনতে পাই তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস, বিছানায় ঘুরপাক খায়। আমি চেষ্টা করি তাদের সাথে তাল মিলিয়ে নিঃশ্বাসের শব্দ করতে। যখন আমি সকাল সকাল উঠে যাই, আমি আস্তে করে তাদের বিছানায় চলে যাই, তাদের গন্ধে, আশ্লেষে জড়িয়ে থাকি তাদের দিকে। আমাদের দোকানটি তখন সংকুচিত, এটা একটা বাড়ি হয়ে যায় কম্বলের ছাদ আর মাংসের দেয়াল দিয়ে আমাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে আর আমাকে রক্ষা করে।
তারা এখন ভয়ঙ্কর ক্ষেপে যাবে আমি যদি উপরতলায় যাই এবং তাদের সঙ্গে বিছানায় যাই। ‘‘একজন ডাক্তার, আমি অন্তঃসত্ত্বা, সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ তারা বিবমিষায় চাদর আর পর্দা ছুঁড়ে দেবে আমার দিকে। ‘‘আমাদের বিছানাকে কলঙ্কিত করেছো- হারামজাদি! তোর কি মনে হয়, এসবের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি দিনরাত।’’ কালী ঘোড়া নামের রেলগাড়ি থেমেছে, পিঠ পেতে নিজের পেটের উপর যেন শুয়ে আছে, তার সব ভেতরের জিনিস বাইরে ফেলে দেয়ার জন্য বাতাস টানছে... ‘‘যখন তুমি আছো বেদনায়, এসো তখন আমার কাছে...’’
আর এখনও মা পছন্দ করে সেইসব নারীদের গল্প শুনতে... যারা বিপথে গেছে, সারা দুপুর ধরে যখন দোকানে কাজ করে তখন সে তাদের কথা শোনে, আর মদ ঢালতে থাকে। আমি কাউন্টারের তলা দিয়ে পিছলে যাই, গাদা গাদা বাক্সগুলো প্যাকেট না-মোড়ানো অবস্থায় রয়ে গেছে, বিবর্ণ সব মালপত্র, ময়লার পাত্রের জন্য পুরনো বাক্সগুলোও আছে। ঘণ্টা বাজে। আমার মা লাফ দিয়ে এগিয়ে যায়, ক্রেতাদের ঘিরে ব্যস্ততা দেখায়, খালি বোতলগুলো সংগ্রহ করে, বকবক করে আর নারীদের স্বাগত জানায়। একজন ভালো পণ্য বিক্রেতা নারী, সদাই আনন্দিত, তার জিহ্বার রুক্ষ দিকটা কেবল আমার আর আমার বাবার জন্য সুংরক্ষিত।
‘‘আজ বড় সুন্দর দিন।’’ আমি বোতলের ঠুং ঠাং শুনি আর দাড়িপাল্লায় তামার বাটখারার শব্দ শুনি। ছোট্ট বেলচা লবণের ঘ্যাসঘ্যাস করে লবণ তোলে, ডালের মধ্যে দিয়ে আরামে চলে যায়। আলুগুলো টুপ করে চকচকে শপিংব্যাগে ঢুকে যায়। সব কিছুই আমার মাথার উপরে ঘটতে থাকে, কাউন্টারের অন্য পাশটায়। ‘‘এক বোতল লাল ভিন ডেস রঁস্যা মদ, মখমলের মতো মসৃণ হওয়ার কথা।’’ নানা কণ্ঠের হল্লা, সেন্ট-পলিন পনিরে এক ঝলক ঘ্রাণ, ল্যাবরাডর কফির ঘ্রাণ, চলকে পড়ার শুকনো মদের রেখা ধরে বর্ণিল নীল মাছির ওড়াওড়ি। জানালাতে সারিবদ্ধ বয়ামের সামনে, সিলিং থেকে পেচিয়ে নেমে এসেছে ফ্লাইপেপার, একটা ঝুলন্ত মিষ্টতা যেখানে ওদের একটা পাখা, একটা পা আটকে যায় কিংবা সামনেই সজোরে আঘাত খায়।
আলাপ আলোচনা ফিসফিসানিতে গিয়ে ঠেকে। ‘‘দুই মাস কোনো কিছুই না। এটা একটা যথার্থ অবমাননা। ওরা বলে, মহিলা নাকি গত মাসে হাঁসের রক্ত ঢুকিয়েছিল ওর নিজের শরীরে, গলা মুচড়িয়ে জেলের কক্ষেই একে ছিঁড়ে ফেলেছে, কথাটা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।’’ আমার মা স্তব্ধ, সে কণ্ঠ নামায়। হয়তো অনুধাবন করে যে আমি আছি এখানে। ক্রেতারা তার শপিংব্যাগ নামিয়ে রাখে, আমার মা কাউন্টারে রাখা এলোমেলো কাগজগুলো দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দেয়। আমি জানি, তারা একটা দীর্ঘ অকল্পনীয় ভয়াবহ গল্প ফাদতে যাচ্ছে। আমি আঙুল নাড়িয়ে অন্য ক্রেতাদের আসতে না-করি, নইলে ওরা গল্প থামিয়ে দেবে। ‘‘একটা অবমাননা, তুমি বারবারই তা বলতে পারো। মহিলা জানতো না কে ছিলো সেই জন, তাদের দুইজন এক ঘরে থাকতো। একজন বাজারের হার্ডওয়্যারের দোকানে কাজ করতো, অন্য জন, ঈশ্বর জানে কি ছিলো...’’।
আমি ওখানে পড়ে থাকা খোলা প্যাকেট থেকে চিনি খুটে খুটে খাই। দোকানের সামনে সূর্যের আলো আঘাত হানছে, সবুজ ললিপপগুলোকে, পাক খাওয়া মদকে, চিনি বার্লির লাঠি বিস্কুটগুলো, লাল আর হলুদ খিলানগুলোকে আলোকিত করছে, জড়িয়ে দিচ্ছি, একটা সুনিয়ন্ত্রিত ছমছমে কিছু হামাগুড়ি দিচ্ছে যেন... গল্পের টুকরাগুলো যোগ করা যায় না, আমি একেবারে খেই হারিয়ে ফেলি, রহস্যময় সব বিস্তৃত বিবরণ, নানা রকম বিরাম আর ফিসফিসানি মিলিয়ে। ‘‘যখন মহিলা ফিরে এসেছিল, তার পোশাকে দাগ ছিল, মাড়ের দাগের মতো, এইটাই তো যথেষ্ট বলা।’’ তারপর এলো সেই শব্দ যা সবকিছুর সারাংশ করে দেয়। ‘‘খানকি একটা।’’ সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়, চিনি গলতে থাকে আর আমার বন্ধ মুখের চারপাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে। আমি একটা শব্দ করতেও ভয় পাই, এখন আমি জানি ব্যাপারগুলো কী ছিলো।
আমি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি, নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখি। তাহলে মহিলাটি ছিল তাদের একজন যে কোনো এক অন্ধকার কোণায় স্কার্ট তুলে ধরেছিল যা মেয়েদের মোটেও করা উচিত নয়। দুজন পুরুষ তাকে ছুঁয়েছিল, হয়তো শোবার ঘরে কিংবা জঙ্গলে কিংবা ক্ষেতে। প্রত্যেকের একটা আঙুল। এটা ভাবতেই আমার গরম অনুভূতি হয়, দুই পায়ের মাঝখানে, মুখ খোলা, আঠালো চিনি... ভয়ঙ্কর বিরতির পর আবার গুজব চর্চা শুরু হয়। ‘তুমি যদি জানতে ওরা কিসের মধ্যে যে ছিল, ওইখানে একজন ব্যারেটদের বালিকাও ছিল, ধরো, যে কাজ করতো পাখির খাচা তৈরির কারখানায়, ওরা তাকে পেয়েছিল টাউন হলের টয়লেটের পেছনে। তিনটা মদ্দা ব্যাটার সঙ্গে, বিশ্বাস করতে পারো!’’
একটা গোলাপী ধোঁয়াশা, দুই ঊরুর মাঝখানে হাত যেন একটা খোলা ফুলের মতো, একটা গোলাপের আকৃতি যা সব কিছু ঢেকে রাখে, তার তলার সব কিছুকে রাখে সংরক্ষিত, স্থির, আনন্দময়। কাউন্টারের কম্পন ওঠে। ‘‘আমি যখন এ নিয়ে ভাবছি, তখন তুমি বোতলগুলো কি ফিরিয়ে নেবে?’’ ওরা তবে ফিসফিস করে এই গল্পটা চালিয়ে যেতে পারবে না, যে গল্পটা আমার তলপেটে নাড়া দিচ্ছিল। আমার মা ক্রেতাকে প্রায় রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে। আমি দৃশ্যাবলী নিয়ে পড়ে থাকি, শব্দের গুঞ্জন, চাপা হাসি, স্বীকারোক্তি, হেঁচকি। দুই হাত ঢুকিয়ে দেই গোলাপী মিষ্টির ভেতরে, মিন্ট, চুইংগাম, পাঁচ-ছয়টা একসাথে উঠে আসে হাতে, আমার উদ্বেল হয়ে ওঠে এইসব বিবিধ স্বাদের তরলে, এই গল্পের পরে। অনুভব করি ঘ্রাণ আমাকে ধরে রাখছে, ডুবিয়ে দিচ্ছি...
ক্ষুধার সামান্য তাড়না আর আমি নিজেকে পরিপূর্ণ করে দিতে পারি। দোকান মানেই হচ্ছে আমি সব সময় আমার বাসনা পূর্ণ করতে পারি, তবে তা গোপনে। আমার মা সন্দেহ করে তবে আমাকে থামায় না। এখানে একটা মিষ্টি, ওখানে একটা মিষ্টি। আমি মাখনে ডুবে যাই, পনির খণ্ড চেঁছে নেই, যখন কেউ দেখতে পায় না আমার আঙুলের মধ্যে নরম আর হলুদ। এমনকি সরষের বয়ামেও, আমি কাঠের চামুচ ঢুকিয়ে দেই তীক্ষ্ম ফলার অংশটুকু যাতে করে চারদিকে সবুজে আঠালো বস্তু ছড়িয়ে পড়ে যা আমার চোখ ও ঠোঁট দংশন করে। ব্রোভিলের কিউবগুলো চকচকে কাগজে মোড়ানো যেন দামী মিষ্টি, রসালো, মুখের মধ্যে উষ্ণতা। কলা ছড়াগুলো যেন হলুদ ঢেউ... শীতকালে, কমলালেবু থরে থরে বাক্সের মধ্যে, তাদের ঘ্রাণ স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালের সঙ্গে মিশে যায়, মার্সম্যালোর ছোট ছোট যিশুর মূর্তি আপাত দৃঢ় দেখায়, কিন্তু তারা নরম আর কামড় দিলেই চাবানোর উপযুক্ত, ফাদার ক্রিসমাস তার ঘাড়ে লাল ফিতা, তাকে ঘিরে আমি আনমনে ঘুরতে থাকি যতোক্ষণ না তার ফাপা পেটে কামড় বসাই। আমি নিজেকে দমাতে পারি না নরম লাল চেরি ক্যান্ডিগুলো দেখে, তারা সেলোফ্যানের প্যাকেটে জ্বলজ্বল করে। এক ঝলক ডানে আর বামে তাকিয়ে আমি নিশ্চিত হয়ে নেই কেউ আসছে কিনা আর দুই তিনটা আঠালো ফলের বিভা তাদের সুস্বাদু রস নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আমার মুখে। চিন্তার কিছু নাই, আবার ওগুলোকে প্যাকেট করে রাখি আর কেউই ওটা ধরার মতো চালাক নেই।
আমার সব কিছু ছিল, যা কিছু আমি খেতে চাইতে পারি তাই এখানে তাকের মধ্যে, ক্যানের ভেতরে, প্যাকেটে, সবখানে ছিল। আমি এর সব কিছুকে ছুঁতে পারি, খুলতে পারি, খুটতে পারি, যা খুশি আমি পছন্দ করি টুকরো টুকরো করে ভেঙে নিতে পারি। দোকানের মেকআপ অংশে গেলেই আমি নিজেকে ডুবিয়ে দিতে পারি শস্তা পারফিউমের তীব্র ঘ্রাণে, লিলি অব দ্য ভ্যালি, ফুসচিয়া ইন ফ্লাকন আটকানো আছে ইলাস্টিক দিয়ে কার্ডবোর্যের দেয়ালে, বাক্সের ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে ফেস পাউডার, খুলে ফেলতে পারি ‘কিস’ নামের লিপস্টিকের মাথা। শস্তা, পাতলা পুরুষের সুগন্ধি...। আমি কখনোই কেনাকাটা করিনি, কোন কিছু কেনার কল্পনা করার প্রয়োজনও আমার হয়নি। সব কিছু ছিলো আমার জন্য বিনা পয়সায়, সহজ প্রাপ্য, আমার আঙুল আর মুখের সীমানাতেই। বারের পরেই দোকানটি ছিলো পৃথিবীর অর্ধেকটাই, প্রচুর ঐশ্বর্যে ভরপুর, নানা বৈচিত্র্যে, তার নিজস্ব স্বাদে হাহাকার করছে আমার জন্যে।
নিষিদ্ধ তেমন কিছু ছিল না। অধিকাংশ ক্রেতার চাহিদার কথা ভেবে নেয়া, তাদের ‘হ্যালো’ বলা মনে রাখা, তাদেরকে বুঝতে না-দেয়া যে আমি গোপনে চুইংগাম চাবাচ্ছি। একটা চিৎকার। ‘তুমি ওইখানে কী করতেছো? বেরিয়ে আসো!’’ নিয়মমাফিক চিৎকার, ক্রেতাদের জন্যই, আমাদের একটা দোকান আছে বলেই এর মানে এই নয় যে আমরা নিজেদের শুয়োর বানিয়ে রাখবো... আমি তাড়াতাড়ি হাতভর্তি চকলেট মুখে পুড়ে স্কার্ট উঠিয়ে প্যান্টিতে হাত মুছি, একমাত্র নিরাপদ স্থান। আমি সারাদিন যা পছন্দ করি তাই করি। আমার বাবা মা ছিলো অনেক ব্যস্ত। ‘‘বাচ্চারা খেলতে পছন্দ করে।’’ কখনো একা আর কখনো বন্ধুদের নিয়ে আমি খেলতাম... উঠানে আমি দুই ক্র্যাট বোতলের মাঝখানে রেডিও লুক্সেমবার্গ অনুষ্ঠান প্রচারের খেলা খেলতাম। আলুর বস্তা ছিল পর্দা, বোতলগুলো ছিলো দর্শক। ‘এক দিনের রাণী,’’ দারূণ, আর সমস্যাগুলো, সেগুলো যেন উপহারের মতো... আমি প্রিয় স্বপ্ন দেখতা, সেক্রেটারি হওয়া স্বপ্ন, কানে দুল, হাই হিল পায়ে। আমি একটা পুরনো বাক্সকে টাইপরাইটার বানিয়ে খেলতাম। কিংবা আমি দেয়ালে রাখা আব্বার বাইকে সীমাহীন পা চালিয়ে যেতাম, প্যারিস, বর্দু সব শহরে, আমি চলে চলে যেতাম তারপর। ওয়াইন স্টোররুমে, শিশি বোতলেল ভিড়ে আমি ফার্মাসিস্ট হয়ে যেতাম। চিলেকোঠায় আমি এক ব্যালে তারকা, খামে, খিলানে ঘুরতাম, অসমতল মেঝেতে নাচতাম, শেষ করতাম মরচে ধরা আয়নার সামনে এসে, স্কার্ট তোলা থাকতো কোমরের উপরে উষ্ণ লাল সংঘাতের দিকে... (চলবে)
/তারা/