ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

‘আমি কবিতার মধ্যে মিশে আছি, কবিতা আমার মধ্যে’

শিহাব শাহরিয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৮:০৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
‘আমি কবিতার মধ্যে মিশে আছি, কবিতা আমার মধ্যে’

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল মূলত কবি। ব্রহ্মপুত্রের পাড় থেকে উঠে আসা এই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তৃষ্ণার্ত জলপরী’। কবিতার মধ্য দিয়েই জীবনের পথে হেঁটেছেন। এই যাত্রা শেষ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে লিখে যাচ্ছেন নিরলস। বন্দরে থামা নয়, এ যাত্রা যেন তার দূরের সমুদ্রযাত্রা। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা মিলিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় একশ। সমকালীন শিল্পসাহিত্যের নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন কবি শিহাব শাহরিয়ারের সঙ্গে। 

শিহাব শাহরিয়ার : সাহিত্যের অনেক মাধ্যমে আপনার বিচরণ। কিন্তু কবিতা আপনার প্রিয় মাধ্যম বলে জানি। কেনো?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : শিশুসাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, গবেষণা, রাজনৈতিক লেখা, মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় আমার পদচারণা ছিল, আছে ও থাকবে। কিন্তু তারপরও আমার প্রকৃত পরিচয় কবিতায়। কবিতা লিখে অনেক সম্মান পেয়েছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের আপনজন হয়েছি। এটা অত্যন্ত গর্বের আমার জন্য। আর বেদনার বিষয় হলো দেশের জন্য এতো কিছু করার পরও আমাকে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে, দেশান্তরী হতে হয়েছে। যদিও আমি বাংলাদেশের ভেতরেই থাকি, বাংলাদেশ আমার ভেতরে থাকে।

শিহাব শাহরিয়ার : প্রায়ই শোনা যায় কবিতার পাঠক কমে যাচ্ছে। এটা কি কবিদের ব্যর্থতা?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : পাঠকদের ব্যর্থতা! এখন পাঠাভ্যাস কমে যাচ্ছে। আগে মানুষ পড়াশোনার প্রতি যতটা আকৃষ্ট ছিল, এখন অনলাইন বা প্রযুক্তির কারণে অনেকেই বই বিমুখ। মনন চর্চা হ্রাস পাচ্ছে। পাঠক হওয়ার জন্য যে মেধা দরকার, যে যোগ্যতা দরকার, যে উচ্চতা দরকার তাদের মধ্যে সেটা নেই। আরো একাধিক কারণ আছে। ওই সময় আর এই সময় দেখতে হবে। আমরা রবীন্দ্রনাথ বা পরবর্তী সময়ে যেভাবে জীবন যাপন করেছি, এখন বিজ্ঞান আর আধুনিকতার কারণে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমি মনে করি, একজন লেখকের চেয়ে একজন পাঠক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাজে লেখক হওয়ার চেয়ে ভালো পাঠক হওয়া ভালো। 

শিহাব শাহরিয়ার : আপনার প্রথম বই সম্পর্কে জানতে চাই।

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : আমি তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক প্রতিরোধে কর্মরত। সম্পাদক ছিলেন আরেফিন বাদল। তাঁর উদ্যোগেই ১৯৮২ সালে আমার প্রথম কবিতার বই ‘তৃষ্ণার্ত জলপরী’ বের করে রুনা প্রকাশনী। বইটি বের হবার আনন্দের পাশাপাশি বেদনাও ছিলো। বইটির প্রচ্ছদ ছাপা হয়েছিল তিনবার। বইমেলাতে বইটি বের হয়। আমাদের চার কবির (মাসুদুজ্জামান, হাসান হাফিজ, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং আরেক জনের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না) প্রথম বই নিয়ে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে আলী ইমাম ভাই একটি চমৎকার অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। নামকরণের কারণেও বইটি অনেককে আকৃষ্ট করেছিল।

শিহাব শাহরিয়ার : আপনার কবিতায় গ্রাম থেকে শহর, দেশ থেকে বিদেশ, নারী থেকে পুরুষ- সব কিছু যেন একই সুতায় মালা গেঁথে আছে। কীভাবে সম্ভব হলো?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : আমার সুন্দর শৈশব-কৈশোর কেটেছে গ্রামে। বড় হয়েছি নিষ্ঠুর শহরে, রাজধানীতে। যুদ্ধোত্তর উথাল-পাতাল তারুণ্য কাটেছে জীবনযুদ্ধে, জীবন সংগ্রামে। না-খেয়ে থাকা দিন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে দক্ষতা এবং দাপটের সঙ্গে জীবন-যাপন, শিল্পসাহিত্যের বিচরণের অভিজ্ঞতা বিচিত্র। সরকারি চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে বাধ্যতামূলক অবসর, বন্ধুদের আচরণ ও প্রতারণা, মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত এবং হুমকি, স্বদেশ ছেড়ে বিদেশের অভিবাসন মানে ‘প্রবাস-খাটা জীবন-যাপন’ অর্থাৎ গ্রাম-শহর-বিভূঁইয়ের অভিজ্ঞতা আমার এক জীবনে তিন জীবনের তিক্ত-মধুর অর্জনসমূহই হয়তো বহুমাত্রিক কবিতা একই সূত্রে গ্রন্থিত।

শিহাব শাহরিয়ার : বাংলাদেশে সৃজনশীল বইয়ের মার্কেট গড়ে ওঠেনি। যেটুকু আছে তাতে দেখা যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বইয়ের ক্রেতা বেশি। তাহলে আমাদের সাহিত্য কি পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না? 

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : এ নিয়ে দীর্ঘ লেখা তৈরি করা যায়। আমি এখানে মাত্র একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, তবে তা শুধু বাংলাদেশেই না; অন্য দেশেও প্রযুক্তি বইয়ের জায়গা দখল করছে। কানাডার ইনডেগু বা চ্যাপ্টারের মত বিখ্যাত বইয়ের দোকানগুলোতে এখন ৪০ শতাংশ সিডি, গিফট আইটেম, ই-বুক দখল করে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বইয়ের ক্রেতা বেশি। কারণ সেখানে ১৯৪৭ থেকেই নয়; তার আগে থেকেই পাঠক গড়ে উঠেছে। আর আমাদের তৎকালীন পাকিস্তান আমলে পাঠ্যাভাসের বিষয়টি বোধগম্য হয়। আর ১৯৭১ সালের পর খুব ধীরে ক্রেতা বাড়ছে। যদিও আশানুরূপ নয়। তা আরো বেগবান হওয়া উচিত। আমাদের পত্র-পত্রিকা-মিডিয়া কিন্তু সেই ভূমিকা পালন করেছে। এখানে মানসিক উপনিবেশ এই ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে আমি মনে করি না। তবে বই পড়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক পরিবেশ এবং স্কুলের শিক্ষক আর বাবা মা’র ভূমিকার খুবই জরুরি। এখানে আরো একটি কথা বলতে চাই। ঢাকায় বাংলাবাজারের পর আজিজ মার্কেটে সৃজনশীল একটা বিকল্প বই মার্কেট গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।

শিহাব শাহরিয়ার : আপনি তো স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমিসহ অন্যান্য পদক নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। কেন?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : আমার সম্পাদিত ছোটকাগজ ‘প্রচ্ছদ’ এ এই নিয়ে ধারাবাহিক লিখেছি। তথাকথিত পাঁচ শতাধিক পুরস্কারের তালিকা দিয়েছি। এসব অধিকাংশ পুরস্কার [নামান্তরে তিরস্কার] দু’চার বছর পর একেবারে ইন্তেকাল করে। আর স্বাধীনতাবিরোধী শরসিনা পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহের স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮০) বাতিলের দাবি জানিয়ে ভোরের কাগজে লিখেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছিলাম। একইভাবে অকবি রইস উদ্দিনের (২০২০) পদক প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলা একাডেমির বইমেলায় ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। এক বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালে আবারো একই ঘটনা ঘটে! আরেক অকবি আমির হামজার জন্য ঘোষণা করা স্বাধীনতা পদক বাতিলের দাবিতে তীব্র প্রতিবাদ করেছি। এই দুটো পুরস্কারই প্রত্যাহার করা হয়েছে। শামসুজ্জামান খান ব্যক্তিস্বার্থে বাংলা একাডেমিকে ব্যবহার করে তথাকথিত ‘প্রবাসী সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তন করে গেছেন। এই দুই নম্বরী বিতর্কিত প্রবাসী পুরস্কার আমাকে দু’বার দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেছেন। শামসুজ্জামান খান যাবার পর একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীও সেই একই কর্ম করেছেন। আমি প্রত্যাখ্যান করেছি।

শিহাব শাহরিয়ার : কেনো প্রত্যাখ্যান করেছেন?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : প্রবাসে থাকলেও আমি নিজেকে প্রবাসী মনে করি না। এখন কুমিল্লায় থাকা আর কানাডায় থাকা একই কথা। এটা একটা অবস্থানগত দূরত্ব মাত্র। কারণ প্রতি মুহূর্তে আমি বাংলাদেশের সঙ্গে আছি, বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে আছি, বাংলা ভাষার সঙ্গে আছি, সংস্কৃতির সঙ্গে আছি। আমার জীবন-যাপন সম্পৃক্ততা সব কিছু বাংলার সঙ্গে। সে কারণে আমি কোনোভাবেই প্রবাসী মনে করি না। লক্ষ্য করলে দেখবেন আমার কবিতায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল যেমন ধরা দিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মিথ, সংস্কৃতি রয়েছে। আমি বাংলা সাহিত্যের মূল ধারার লেখক! শাখা-উপশাখার লেখক নই।

শিহাব শাহরিয়ার : এক সময় আপনি নাটক লিখতেন। এখন লিখছেন না। কারণ কী?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : বাংলাদেশ বেতারে প্রচুর নাটক লিখেছি, আশির দশকে। জীবনানন্দ দাশের গল্প থেকে, আল মাহমুদের কবিতা থেকে একের পর এক সিরিজ নাটক লিখেছি। তখন বেকার জীবনে বেঁচে থাকার জন্য লিখেছি। সাহিত্যের জন্য নয়। পরে বাংলাদেশে টেলিভিশনে শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘দৃষ্টি ও সৃষ্টি’ উপস্থাপনা করার সময় তৎকালীন মহাপরিচালক সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী এবং বন্ধু-প্রযোজক সৈয়দ জামানের অনুরোধেই নাটক লেখা। নাটক আর গান লেখা হয় না প্রবাসের কঠিন জীবনের ব্যস্ততার জন্য। দেশ থেকে দূরে থাকার জন্যও।

শিহাব শাহরিয়ার : দেশ ছেড়ে কেন বিদেশে গেলেন? আপনি তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষ। দেশে এখন মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের সরকার। 

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : প্রতি মুহূর্তে ইচ্ছে করে এবং অস্থিরতায় থাকি। বিদেশে থাকলে দেশের টান, নাড়ির টান আরো তীব্রভাবে অনুভব এবং উপলব্ধি করা যায়। আমার মা অপেক্ষা করছেন, বাবা ডাকছেন: ‘ধর্মান্তরী, দেশান্তরী মধুসূদন দত্ত ভার্সাই নগরী থেকে ফিরে এসেছিলেন তাঁরই বঙ্গ ভাণ্ডারে, তুমি কবে ফিরবে, বাবা?’ ২০১২ সালের চৌঠা এপ্রিল যখন কানাডিয়ান হিসেবে শপথ নিলাম, তখন মনে পড়ছিল রাশিয়ার দেশান্তরী লেখক আলেকজান্ডার সোলঝেনিৎসিন-এর কথা। যিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে সিদ্ধান্ত পাল্টান। দেশ প্রেমের দৃষ্টান্তে তিনি আর আমেরিকান নাগরিকত্ব নেননি। কিন্তু আমি তা পারিনি। যাহোক। আগেও উল্লেখ করেছি এবং আবারও বলছি, সরকারি চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে বাধ্যতামূলক অবসর, বন্ধুদের আচরণ, মৌলবাদীদের হুমকি কিছুতেই কোনো কিছুর সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। আমার নিজস্বনীতি আর ব্যক্তিগত আদর্শ নিয়ে সমাজের সঙ্গে মিশতে পারছিলাম না। সেই সময়ে আমার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নামকরণ থেকেও এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে। সরকারের কাছে তো আমার ব্যক্তিগতভাবে কিছু চাওয়ার নেই। যদিও বাংলাদেশকে আমি আমার চিন্তা-চেতনা-ভাবনায় সমৃদ্ধ করতে চাচ্ছি। তবে এটা ঠিক বইমেলা মিস করি, বিভিন্ন অনুষ্ঠান মিস করি, শাহবাগে একটা রাজত্ব ছিল আমার, সেটা মিস করি। এটা একটা শূন্যতা, আর সেটা আমি পুষিয়ে নেই কবিতার মাধ্যমে। আমার শারীরিক অবস্থান বা বাসস্থান টরন্টো হলেও আমি মনেপ্রাণে সার্বক্ষণিক ঢাকায় থাকি। মনে হয় প্রতিদিন শাহবাগে অফিস করছি। স্বরব্যঞ্জনে বসে লেখক বন্ধুদের সাথে চা খাচ্ছি, আড্ডা দিচ্ছি। পাঠশালায় বই বিক্রি করছি।

শিহাব শাহরিয়ার : কবিতার পর বঙ্গবন্ধু তারপর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার অনেক কাজ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্য সম্পর্কে আপনার ধারণা?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : চারটি ‘ব’ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব-তে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাঙালি এবং বঙ্গবন্ধু! এই চারটি আমাদের জীবনের জন্য মূল স্তম্ভের মতো। আমার অর্ধেক বই-ই বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। আমি সারাজীবন স্বাধীনতা বিরোধীদের বিপক্ষে কাজ করে মামলা খেয়েছি, নিষিদ্ধ হয়েছি এবং বিদেশে এসেও সেই কাজ করছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কানাডায় বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে নিয়ে অনুসন্ধানী গ্রন্থ রচনা করেছি, ভ্যাঙ্কুভারের যুদ্ধশিশু মনোয়ারকে নিয়ে বায়োগ্রাফি লিখেছি এবং দশ বছর ধরে ‘কানাডায় ১৯৭১’ নিয়ে গবেষণা করছি। আমি কোনো দিন মৌলবাদী ইনকিলাব, পূর্ণিমা, নয়া দিগন্ত, মিল্লাতে লিখিনি। এই কাগজগুলো আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা খবর ছেপেছে। শফিক রেহমানের যায় যায় দিনে ইনকিলাবের বিরুদ্ধে কভার স্টোরি লেখার জন্য বাহাউদ্দিন মামলা করেছেন, ‘ইনকিলাবের অপ-সাংবাদিকতা’ গ্রন্থের প্রকাশক আমি। ইনকিলাব আমার বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের উস্কে দিয়েছিল। দৈনিক সংগ্রাম আমার নামে ব্লাসফ্যামি আইন পাসের প্রস্তাব দিয়েছিল। এসব ঘটনার তো শেষ নেই। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা যেমন আমাদের অমূল্য অর্জন, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য আমাদের অমূল্য সম্পদ। 

শিহাব শাহরিয়ার : দেশের সাহিত্য-চর্চার খোঁজখবর নিয়মিত পান কি? এ সময়ের সাহিত্য-চর্চা সম্পর্কে কী বলবেন?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : পাই। পাচ্ছি তো। অনলাইনের কারণে ঘরে বসেই নিয়মিত খোঁজখবর পাই। তবে তা নিয়ে আমি খুব হতাশ। নানা কারণে সাহিত্যের গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। প্রসার পাচ্ছে সাহিত্যের আগাছা! আর সাহিত্য-চর্চার চেয়ে বেশি হচ্ছে, পরচর্চা, স্বজনপ্রীতি, নোংরা রাজনীতি! যেন সব কিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাচ্ছে।

শিহাব শাহরিয়ার : সমকালীন গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ ও কবিতার মধ্যে কোন শাখাকে আপনার ঋদ্ধ মনে হয়?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : সব চেয়ে বাজে অবস্থা প্রবন্ধ সাহিত্যে। তুলনামূলক কবিতার অবস্থান ভালো। পশ্চিমবঙ্গের কবিতার চেয়েও। তবে আমাদের কথাসাহিত্য অনেক ঋদ্ধ। অনেক তরুণ গল্প-কবিতা এখন চমৎকার লিখছে। আমি মুগ্ধ হয়ে পড়ি! যদিও এদের অনেকেই বেয়াদব!

শিহাব শাহরিয়ার : বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই?

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল : বাংলা সাহিত্যের সূর্যাস্ত নেই। কারণ, পৃথিবী থেকে অনেক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই আশঙ্কা থেকে মুক্ত। ভাষাগত দিক থেকে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আমি খুব আশাবাদী। যদিও ১৯১৩ সালে রবি ঠাকুর নোবেল পেলেন। তার এত বছর পরও আর কোনো অগ্রগতি নেই। আমার বিশ্বাস, এলিস মুনরো বা কাজুও ইশিগুরোর রচনার চেয়ে আমাদের বাংলা সাহিত্য কোনো অংশেই কম নয়। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কদর সারা বিশ্বে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সুনাম সারা বিশ্বে। বাংলা ভাষার অর্জন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সারা বিশ্বে সমাদৃত। আমার বিশ্বাস, অদূর ভবিষ্যতে বাংলা সাহিত্যও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্থান পাবে।  

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়