ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২৩ ১৪৩১

নোবেলজয়ী ইয়ন ফসের পাঁচটি কবিতা

মুম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ৬ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৮:২১, ৬ অক্টোবর ২০২৩
নোবেলজয়ী ইয়ন ফসের পাঁচটি কবিতা

‘তাঁর উদ্ভাবনী নাটক এবং না-বলা কথা কণ্ঠ দিয়েছেন গদ্যে’- এ কারণেই সুইডিশ একাডেমি ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার তুলে দিলেন ইয়ন ফসের হাতে। নাটকের ক্ষেত্রে বলা যায়, ইবসেনের পর নরওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাট্যকার তিনি। ইবসেনকে নোবেল পুরস্কার না-দিয়ে যে ভুল করেছিল সুইডিশ একাডেমি, বলা যেতে পারে তার সংশোধন বা প্রায়শ্চিত্ত হলো এই পুরস্কারে। ইবসেনের পর তিনি নরওয়ের সর্বাধিক আলোচিত, মঞ্চায়িত নাট্যকার। অনেক সমালোচক তাঁকে ‘নতুন ইবসেন’ বলে উল্লেখ করেন। ঊনবিংশ শতকে বিশ্ব নাটকে ইবসেন আধুনিকতার যে জোয়ার এনেছিলেন তারই পথ ধরে এগিয়েছেন ইয়ন ফসে। তবে তিনি নিজে তাঁর নাটক এবং লেখালেখির সংসারে স্যামুয়েল বেকেট, গিয়র্গ ট্রাকল, টমাস বার্নহার্ডকে ‘আত্মীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। ফসে অবশ্য নাটক থেকে সাম্প্রতিককালে দূরে সরেছেন। তাঁর ভাষায় নাটক হলো সরাসরি সংযোগ, আর উপন্যাস হলো ধীরগতির আলাপ। তিনি ক্রমশ ধীরগতির আলাপের দিকে অগ্রগামী হয়েছেন। আর সরাসরি সংলাপ আর ধীর বর্ণনার পাশাপাশি তিনি আরও অধিকতর গভীর কবিতায়। ফসের সামগ্রিক লেখায় নীরবতার প্রভাব অনেক বেশি। তিনি না-বলা কথা এবং নীরবতার ভাষা খোঁজেন। পাঠক, ফসের পাঁচটি কবিতা মুম রহমানের অনুবাদে প্রকাশ করা হলো: 

বাতাসে একটা নৌকার মতো   
তুমি আর আমি 
তুমি আর চাঁদ
তুমি
আর নক্ষত্রনিশ্চয়
হয়তো-বা
সকল দুর্গন্ধের সামনে
মরা লাশ
পচে যাচ্ছি
তাদের অবরুদ্ধ মাটিতে
অন্যরা, আমার আমির মতো
অথবা যারা জ্বলছে
তাদের আশাহীন আশায়
(বেদনাহীন, হ্যাঁ, অবশ্যই)
হ্যাঁ, একটা নৌকার মতো বিশুদ্ধ বাতাসে।

একজন মানব প্রাণ এখানে আছে
একজন মানব প্রাণ এখানে আছে
একজন মানব প্রাণ এখানে আছে
আর তারপর বিলীন
একটা বাতাসে 
যা অদৃশ্য
আত্মায়
আর মিলিত হয় পাথরের সঞ্চালনে
আর অর্থময় হয়ে হয়
সব সময় এক নতুন অখণ্ডতায়
যা কিছু আছে 
আর যা কিছু নেই 
নীরবতায়
যেখানে বাতাস
হয়ে ওঠে বাতাস
যেখানে অর্থ
হয়ে ওঠে অর্থময়
হারিয়ে যাওয়া সঞ্চালনায়
যা কিছু ছিলো একসময়
আর একদা তা 
আদি থেকে আসে
যেখানে
শব্দরা বহন করে অর্থ
স্বয়ং শব্দরা তাদের বিভাজিত করার আগে
আর তারপর থেকে কখনো আমাদের ছেড়ে যায় না
কিন্তু সে আছে
সকল অতীতে আর সকল ভবিষ্যতে
আর এটা আছে
কোনো না কোনো কিছুতে
যা অস্তিত্ব বহন করে না
তার অদৃশ্য সীমারেখায়
যা কিছু আছে তার মাঝে
এবং যা কিছু আসবে 
এটা অসীম এবং কোন দূরত্ব ছাড়াই
একই সঞ্চালনায়
এটা পরিষ্কার করে দেয়
এবং বিলীন হয়ে যায়
এবং রয়ে যায়
আর তা আলোকিত করে
এর অন্ধকারকে
যখন এটা কথা বলে
তার নীরবতায়
এটা কোথাও নেই
এটা সবখানেই আছে
এটা নিকটে
এটা দূরে
আর শরীর ও আত্মা মিলে যায়
সেখানে এক হয়ে
আর এটা ছোট্ট
আর এটা বিশাল
যেন সবকিছুই এটা
যেন কোনো কিছু নেই-এর মতো ছোট্ট
আর যেখানে সকল প্রজ্ঞা
আর কোনো বস্তুই জানা যায় না
এর অতি আভ্যন্তরীণ আত্মমগ্নতায়
যেখানে কিছুই বিভাজিত হয় না
আর একইসঙ্গে সবকিছু এবং সবকিছুর বাইরেও
বিভাজনে
এবং যা বিভাজিত হয় না
অসীম সীমানায় আমি একে অদৃশ্য হতে দিয়েছি
সুষ্পষ্ট বর্তমানে
অদৃশ্য সঞ্চালনে
আর দিনভর হেঁটেছি
যেখানে গাছ হলো গাছ
যেখানে পাথর হলো পাথর
যেখানে বাতাস হলো বাতাস
আর যেখানে শব্দেরা আছে অজ্ঞেয় ঐক্যে
যা কিছু আছে
যা কিছু বিলীণ হয়ে গেছে
আর এইভাবে রয়ে যায় অটুট
মিলনোম্মুখ শব্দের মতো

শুধু জানি
গানখানি, সমুদ্রের গানখানি
পিছলে নেমে যায় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে
আর আকাশজুড়ে

নীল উড়ালে, একটা ঝিলমিলের মতো
সেদিকে যেখানে আমরা একত্রে রয়েছি
আর যেখানে আমরা কখনো কিছু বলিনি

আর শুধু জানি

পাহাড় তার নিঃশ্বাস আটকে রাখে
সেখানে এক গভীর নিঃশ্বাস ছিলো
আর তারপর পাহাড় দাঁড়ালো সেখানে
তারপর পাহাড় খাড়া হলো সেখানে
এবং এইভাবেই পাহাড় সেখানে দাঁড়ালো

এবং ঝুঁকে পড়লো নিচের দিকে
আর নিচের দিকে
নিজেদের মাঝে
আর ধারণ করলো তাদের নিঃশ্বাস

যখন আকাশ আর সমুদ্র
ঘাই মারে আর টোকা মারে
পাহাড় তার নিঃশ্বাস আটকে রাখে

অভিনেতার প্রসঙ্গে কিছু

তার মাঝে যা নড়ে ওঠে
জীবনের মতো
সদাই গতির ফাঁকে
কিছু একটা নীরব
আর ভারি
জীবনের মতো স্বয়ং
ভারি কারো জন্য
জীবন কারো জন্য খুব হালকা
আর মুহূর্তেই আরও ভারি
আর তারা বেরিয়ে আসে যা কিছু ঘটে
আর দাঁড়ায় সেখানে
কাঁপতে কাঁপতে
সলজ্জ
আর জানে না কিছু বলতে হবে
তাদের বলার কিছু নেই
আর সেজন্য কিছু একটা বলতেই হবে আর তারা নড়ে ওঠে
সামনে এগোয় 
পাদপ্রদীপের আলোয় আর সোজা বাতাসের মতো
তারা সামনে আগায়
আর তারা ওখানে দাঁড়ায়
নিজেদের ভার নিয়ে
একে অপরের আলোয়
যখন লজ্জা
মিলিয়ে যায়
আর আলো হয়ে ওঠে যেমন স্থির অনুগত কুকুরের দেবদূত 

এবং তারপর দেবদূতের পাখা খুলে যায়
আর ওদের ঘিরে ছড়িয়ে পড়ে

আর তারপর তা বলা হয়

/এসবি/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়