যুদ্ধদিনের গল্প
সবিতার সংসার
ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম
‘নয় বছর বয়সে বিয়ে! এ বয়সে তো আহ্লাদ করে মেয়ের টিকালো কিংবা বোচা নাকটি টিপে দিলে গলগল করে আকন্দ গাছের আঠার মতো সাদা সাদা দুধ বের হয়’- মণিজোড়া চোখের মাঝবরাবর আটকে রেখে আপনি অথবা আমি আঁতকে ওঠা গলায় এ কথা বলতেই পারি। অথচ মাত্র তিন থেকে চার প্রজন্ম আগেও মেয়েসন্তান আঁতুড়ঘরে চিৎকার করে জন্মের কথা জানান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার বিয়ের ভাবনায় বাবা-মায়ের কপালে বলিরেখা পড়ে যেত।
‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ ঠিক সেই সময়ে গর্ভাশয়ের ভেতর আঙুল মুখে দিয়ে আরামে ঘুমিয়ে হাসি-কান্নার স্বপ্ন দেখছিল। এপাশ-ওপাশ দিয়ে শাড়ি খুলে পড়ে যেতে থাকা বালিকার বয়স বারোর গণ্ডি পেরিয়ে গেলে তাকে হৈমন্তীর কাতারে দাঁড় করিয়ে ঘরে ঘরে স্টার জলসার সিরিয়াল শুরু হতো। কিন্তু আমাদের এই গল্পের প্রধান চরিত্র সবিতাবালার বয়স হৈমন্তীর মতো তরতর করে এগিয়ে যায়নি। বয়সকে খপ করে ধরে নয় বছরের সবিতাবালাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মোহন দাসের ঘরে। বিয়ে নামের এই খেলার অর্থ না বুঝলেও সবিতা নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে থাকে। শাশুড়ি রেণুবালা নিজ হাতে তাকে শেখাতে শুরু করেন সংসারের অর্থ। সারাদিনের পাঠচর্চা শেষে ক্লান্ত শরীরে দুই হাঁটুর সঙ্গে মাথা এক করে রেণুবালার পাশেই গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়ে সবিতা। ঋতুবতী হওয়ার আগে মোহন দাসের সঙ্গে এক ঘরে থাকার অনুমতি মেলে না। বিয়ের চার বছর দুই মাস তিন দিনের মাথায় অবসান হয় সেই অপেক্ষার। রেণুবালার শরীরে ধরা দেয় নারীত্ব, সেইদিন উৎসব করে দ্বিতীয়বার বিয়ে হয় এই দম্পতির, হয় ফুলশয্যা।
মোহনের সঙ্গে সবিতার বয়সের ব্যবধান সতেরো বছর। গোটা সংসারের দায়িত্ব যেমন আস্তে আস্তে কাঁধে নিতে শুরু করে সবিতা, মোহনের স্বভাব-চরিত্রও সে অক্ষরে অক্ষরে পড়ে ফেলতে থাকে। ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের নামকরা চাকরি ছেড়ে হুট করে স্টেশনে সংবাদপত্র বিক্রি শুরু করে মোহন। একসময় ঢুকে পড়ে ইন্ডিয়ান আর্মিতে, আবারো সেখান থেকে দেয় চম্পট। স্বদেশী আন্দোলন করে দুইবার জেলের ভাতও হজম করতে হয় তাকে। মোহনের খ্যাপাটে আচরণের কারণে পুরো এলাকার মানুষ তাকে ‘পাগলা মোহন' নামে ডেকে আড়ালে-আবডালে মুখ টিপে হাসাহাসি করে।
পান-বিড়ি-মদের নেশা না থাকলেও মোহনের রয়েছে সম্পত্তি কেনা এবং গাছ লাগানোর অদ্ভুত নেশা। দশ বিঘা জমির সীমানা প্রাচীরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা তৈরি করেছে নারকেল-সুপারির সারি। গাছের পেটের ভেতর মুখ লুকিয়ে পড়ে আছে আটচালা টিনের একটা বাড়ি। চারপাশের জঙ্গল থেকে সন্ধ্যায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয় শেয়ালের পাল। ঝাঁড়ের বাঁশগুলো লম্বা হতে হতে সোজা হয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়েছে, কুঁজো বুড়ির মতো কোমর বাকিয়ে একটা আরেকটার গায়ে হেলে পড়ে ধুকে ধুকে অনবরত শ্বাস নিচ্ছে। ফলজ-বনজ গাছের আচ্ছাদন পেরিয়ে বাড়ির উঠোনে আলো ফেলতে সূর্য হয়ে যায় গলদঘর্ম। তবু মোহন এক বিঘত ফাঁকা জায়গা পেলেই লাগাতে শুরু করে নতুন নতুন গাছের চারা।
মোহনের আচরণ এলাকাবাসীর গল্পের রসদ হলেও সবিতার রূপ-গুণের প্রশংসা করতেও তারা কার্পণ্য করে না। তার বুদ্ধি এবং সাহসের তারিফ এলাকাবাসীর মুখে মুখে ঘুরে ফেরে। সবিতার একার উদ্যোগে তাদের বড় সন্তান শংকর এখন কলকাতার নামকরা ইঞ্জিনিয়ার, বড় মেয়ে অঞ্জনার বিয়ে হয়েছে বর্ধমানের বনেদী পরিবারে, বিয়ের বিশ বছর পর জন্ম নেওয়া রঞ্জনার ভবিষ্যৎ নিয়ে সবিতার মনে সুপ্ত ইচ্ছে দোল খায়, ছোট মেয়েকে সে উচ্চশিক্ষিত করে তারপর বিয়ে দেবে।
নিজের আপাত সুখী সংসারে কোনো কিছুর অভাব নেই সবিতার। তবু কোথায় যেন ঘটে ছন্দপতন। মোহনের পাগলামি বাড়ে, হুট করে করে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় সে, আবার কিছুদিন পর হাসতে হাসতে ফিরে আসে স্ত্রীর আঁচলের তলায়। হার না মানা জীবনযুদ্ধে এক সময় এটাও গা সওয়া হয়ে যায় সবিতার। দিন শেষে মোহন ঘরে না ফিরলে তা নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা বলে মেনে নেয় সে । বাড়ির বছর মাইনের কাজের লোক জব্বার আলীকে ডেকে নিজেই তদারকি করে সব।
-জব্বার, বড় দা দিইয়ে আইজকে শিরিষ গাছের ডালগুলোনরে কাইটে আইনবে। সাইমনে বশষাকাল আইসতিছে, রান্নার কাইষ্টে গুছায় রাখতি হবেনে। দাডা ঠিইক কইরে ধার দিইয়ে নিয়েনে।
-দা একখান যা বানাইছে মোহনদা, ধার দিয়া লাইগবেনানে, ইডার ধার সওজে যায় না, এইকবার ধার দিলি বহুতদিন দইরে চকচক কইরতে থাহে। মোহন দারে কয়দিন ধইরে দেখতিছি না, আবার চইলে গেইছে নাহি?
-তিনার কতা কতি অবেনা জব্বার। ভাইডি, তুমি তো জানোই তিনার স্বভাব চরিত্তির।
-কিন্তুক দ্যাশের অবস্থা ভালো ঠেকতিছে না বউদি। সদরের ধারেই নাহি মিলিটারি ক্যাম্প বসাইছে।
-হ, শুনতিছি তাই।
ক্রমেই খারাপ হতে থাকে দেশের পরিস্থিতি। কিন্তু মোহন ঘরে ফিরে আসে না। একসময় কাজে আসা বন্ধ করে দেয় জব্বার, এখন নাকি তার মেলা কাজ, তাই মেলে না সময়। দিনটা রঞ্জনাকে নিয়ে কোনোমতে পার করে সবিতা। সন্ধ্যা নামতেই ঝোঁপের আড়ালে গিয়ে জঙ্গলের ভেতর গা ঢাকা দেয়। নিজের জন্য ভয় না করলেও, রঞ্জনার জন্য আত্মা কাপে অবিরাম। সারারাত গায়ের তাজা রক্ত চুষে টুপটুপে হয়ে ওঠে চীনে জোঁকের শরীর, ভরপেটে নিজ থেকেই গা থেকে খসে পড়ে। সকালে ঘরে ফিরে সেইসব ক্ষতে চুন হলুদ লাগায় মা-মেয়ে।
-তিথি-যুথীরে নাহি ইন্ডিয়া পাডায় দিতিছেন রতনদা?
-কিডা কলো তুমারে? সবিতার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কপালে প্রায় চার ইঞ্চি ভাজ পড়ে প্রতিবেশী রতন পালের, তাতে তার চোখ এতটাই কুঁচকে যায় যে তা খোলা না বন্ধ বোঝা যায় না।
-বউদি কইছে। দাদা, রঞ্জনারে এট্টু ওগো সাইথে পাডান। খরচ যা লাইগবে আমি তার দশগুণ দিবানে, শুধু মাইয়েডারে ওর দাদার ধারে কোইলকাতায় দিইয়ে আইসবে। আমার ঠাকুরপোরা, ছল-মাইয়ে সব্বাই ওইহেনে আপনি সেডা জানেনই দাদা। সিয়ানা মাইয়েডারে নিইয়ে মেলা বিপদে রইছি।
টাকার লোভ নাকি মানবিকতা বোঝা না গেলেও শেষমেষ রাজি হয় রতন পাল।
-তুমিও যাতি চালি যাতি পারো সবিতা। মোহন কই গেছে তাইর কবর নেই, এল্লা গরে থাকবা। আমি সবাইগো পাডাই দিইয়ে নিজি থাকতিছি বাড়িডার জন্যি। চইলে গেইলে বাড়িডা, জমি-জমা সব বেদকল অয়ে যাবেনে। এরচাইতি চার কলেমা পইড়ে মুসলমান হইয়ে যাবানে। ধুতি ছাইড়ে টুপি আর লুঙ্গি পইরে থাকপানে। জীবনডা বাচাতি অবে আগে, সিডাতে মুসলমান হলিও কুনো পাপ নেই, বুঝিছো? যুদ্ধ শেষ হলি আবার পুরতির কাইছে যাইয়ে গঙ্গাজল মাতায় ছিডায় দিবানে। এহন সবচায়ে বেশি বয় অলো সিয়ানা মাইয়েছিলের, বুঝিছো সবিতাবালা?
সব বোঝে সবিতাবালা তবু থেকে যায়। সে চাইলেই রঞ্জনার সঙ্গে ইন্ডিয়া চলে যেতে পারতো, কিন্তু সবিতার মনে স্থির বিশ্বাস মোহন ফিরে আসবে, এসে যদি লোকটা তাকে না পায় সেজন্যই মাটি কামড়ে পড়ে থাকে সে। রঞ্জনা চলে যাওয়ার পর কেন জানি আর তেমন ভয় করে না তার। রাতে দরজায় খিল দিয়ে ঘরেই শুয়ে পড়ে। প্রতি রাতে নিস্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় গোলাগুলির আওয়াজ। এক রাতে দরজায় অবিরাম লাথির আওয়াজে ঘুম ভাঙে সবিতার, দরজা খুলে কপাট আগলে দাঁড়ায়।
-জব্বার, তুমি! এত রাত্তিরি!
-এহন কি আর দিইন-রাইত আছে সবিতাবালা?
-তুমি আমারে নাম ধইরে ডাইকতিছ?
-বউদি কলি তো শুতি পাইরবোনানে।
-কুত্তার বাচ্চা, দেহিছিস এইডা?
এই দা খুব ভালো করেই চেনে জব্বার আলী। দায়ের ধার যেমন পরখ করা তার, সবিতার ধারও তার অজানা নয়। দায়ের কোপ দিতে সবিতা যে পিছু হটবে না তা বুঝে মনের আশা মনে রেখেই ফিরে যায় জব্বার। মনে মনে গজরায়- ‘হেইরপর রাজাকার জব্বার এল্লা আইসবেনানে, মিলিটারির সইঙ্গে আইসে দেহাবানে কত্ত ত্যাজ তোর গতরে।’
সকালের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আলো আসে সবিতার জীবনেও, হন্তদন্ত হয়ে ফিরে আসে মোহন। এই প্রথম মোহনের বুকে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কাঁদতে থাকে সবিতা।
-তুমি কেন্ন আমাগো ফালাইয়ে থুইয়ে চইলে গেইল্লে?
স্ত্রীর অকসাৎ আলিঙ্গনে হতচকিত মোহন, শিড়দাঁড়া বেয়ে নামতে থাকে উষ্ণ জলের স্রোত, আকাশ রঙের জামার সামনের অংশ ভিজতে থাকে সবিতার চোখ থেকে নেমে আসা বন্যায়। স্ত্রীকে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখেছে বলে মনে পড়ে না মোহনের। ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও মোহন বুঝতে পারে সবিতার সংসারে আজও সে নিত্যদিনের ভাতের হাড়িটার মতোই প্রয়োজনীয়।
সবিতার সিঁথির টকটকে লাল রঙের পাশে দুই-একটা এলোমেলো সাদা চুল নজরে আসে মোহনের, এত কাছ থেকে বহুদিন দেখা হয়নি তাকে, দু'হাতের আঙুলে চুলগুলো পরিপাটি করে সাজায়।
-ইন্ডিয়া যায়ার সব ঠিইক কইরে আইছি, কাইন্দোনে পরে, এহনি রওনা হোওয়া লাইগবে। সবিতার কানের পাশে মুখ লাগিয়ে আদুরে শান্ত স্বরে জানায় মোহন।
সিন্দুকে লুকিয়ে রাখা গয়নাগাটি, টাকা-পয়সা এবং জমির দলিল ট্র্যাঙ্কে ঢুকিয়ে গুছিয়ে নেয় সবিতা। কোন খেয়ালে দা-টাকেও রেখে দেয় ট্রাঙ্কের কাপড়ের ভাজে, তারপর স্বামীর হাত ধরে দরজায় তালা লাগিয়ে বের হয় ইন্ডিয়ার উদ্দেশে।
মোহনের ছোট ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গেই থাকে তাদের ছেলে শংকর। রঞ্জনাকেও পাঠানো হয়েছে সেই বাড়িতেই। মোহন-সবিতা সেখানে যখন পৌঁছায় তখন রাত তিনটা আটাশ। অনেকবার দরজার কড়া নাড়ে তারা, কিন্তু কারো ঘুম ভাঙে না, খোলে না দরজা। উপায় না পেয়ে দরজার সামনের এক হাত জায়গায় কেন্নোর মতো গুটিয়ে বসে পড়ে দুজন, কাটিয়ে দেয় বাকি রাতটুকু। অফিসে যাওয়ার জন্য সকালে দরজা খুলে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে শংকর, আনন্দে চোখে জল এসে যায় তার।
মানিকতলার তিন কামরার ঘরে দশজন মানুষের প্রতিদিন কেটে যেতে থাকে উদ্বিগ্নতায়। ভাইয়েরা সুযোগ পেলেই মোহনকে শোনায়, ‘সাতচল্লিশে ওপারে থেকে গিয়ে খুব ভুল করেছো দাদা'। মোহনের চোখের সামনে ভেসে বেড়ায় মেহগনি-শিরিষ-নারকেল-সুপারির সারি। সবাই তাকে চোখে চোখে রাখে, তার স্বভাবে কারো বিশ্বাস নেই, সুযোগ পেলেই হয়তো বাড়িতে দেবে ছুট, পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় আনবে না। সবিতার মনও যে পুড়ছে না তা নয়। খবরে শুনছে বাড়িঘর সব জ্বালিয়ে দিচ্ছে মিলিটারি এবং রাজাকারের দল। হয়তো এতদিনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে সবিতার সাজানো-গোছানো সংসার।
একসময় শেষ হলো অপেক্ষার, দেশ হয়ে গেল স্বাধীন। তাদের দেশ এখন আর পূর্ব পাকিস্তান নয়, এবার তাদের নতুন বাংলাদেশে ফেরার পালা। অনেক অনুরোধের পরেও ভাইদের কথা রাখলো না তারা, মোহন-সবিতা মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরবেই।
-টাকাটা রাখো। বাড়ি গিয়ে কিছু পাবে কি না সন্দেহ, ঘর তো তুলতে হবে।
শংকর মায়ের হাতে গুজে দেয় দশ হাজার রুপির একটা বান্ডিল, হাত বদল হয়ে মহাত্মা গান্ধীর ছবিগুলো চলে আসে সবিতার হাতে।
স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে বাড়ি ফেরে মোহন। কিন্তু কোথায় বাড়ি! এখানে যে কোনো বাড়ি ছিল তা এখন বুঝতে খুব অসুবিধা হয়, শ্মশানের বেদীর মতো দাঁড়িয়ে আছে শুধু বাড়ির মাটির ভিতটুকু, আর কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই। আধপোড়া শরীরে কোনোরকম বেঁচে থেকে সুপারি গাছগুলো স্বাক্ষী দিচ্ছে অতীতের ভয়াবহতার। ট্রাঙ্ক খোলে সবিতা, জোর পায়ে হাঁটা শুরু করে।
-দা ডা নিইয়ে কই যাতিছ সবিতা?
মোহনের ডাকে ফিরে তাকায় না সবিতা। প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যায় নিজের মতো।
-বউদি যে, কহন আইছো তুমরা? কষ্ট কইরে না আইসে আমারে খবর দিলি আমিই যাতাম।
বাঁশের কঞ্চিতে ভর দিয়ে তরতর করে বেড়ে ওঠা চালকুমড়ো গাছের পাশে পানের পিক ফেলে জব্বার বলতে থাকে, সবিতা শুনেও না শোনার ভান করে, দরজা ঠেলে জব্বারের ঘরের ভেতরে ঢোকে।
-বউদি, ঘরে যাতিছ কি জন্যি?
-এট্টা কতাও কবি না শুয়োরের বাচ্চা।
-দা দেহাচ্ছো কি জন্যি?
-রাজাকারের বাচ্চা, আমার ঘর লুট করিছিস, ঘরে আগুন দিছিস, এহন কতা কতিছিস? এই দা দেহিছিস? যহন পাকিস্তানে ছিলাম তহন এই দা দেহাইতে বয় পাইনি, আইজ বাংলাদ্যাশে তো বয় পায়ার কতাই আসতিছে না। সংসারের সগল জিনিসপত্তর আমি চিনি। এহন তোর গরেরথে আমার গরের সবকিচু নিইয়ে যাতিছি। এট্টা কতা কবি তো খাবি দার কোপ।
জব্বারের ঘর থেকে এক এক করে বের হতে থাকে শীলনোড়া, কাঁসার বাসন, লেপ-তোশক, ভাতের হাড়ি এবং সবিতার সংসার।