ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

‘প্রেম আমাকে টানে, স্বপ্ন আমাকে টানে তারও বেশি’  

আঁখি সিদ্দিকা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১২:৩১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘প্রেম আমাকে টানে, স্বপ্ন আমাকে টানে তারও বেশি’  

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক। ষাটের দশক থেকে তিনি সমালোচক এবং সাহিত্য-সম্পাদক হিসেবে অবদান রেখে চলেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র’। প্রতিষ্ঠানটি ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরির কাজে নিয়োজিত। স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আঁখি সিদ্দিকা। 

স্যার, আজ বসন্তের প্রথম দিন। আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই।   

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ : একদিন প্রিয়ার গালের কালো তিলের জন্য সমস্ত কিছু দিয়ে দিতে পারতাম। আজকে আর পারি না। প্রতি মুহূর্তে মানুষ পাল্টাচ্ছে। এখান থেকে ওখানে যাচ্ছে, ওখান থেকে সেখানে। আর যখন সে যাচ্ছে তখন তার জীবন, জীবনের চাওয়া, স্বপ্ন, আকুতি সব কিছু পাল্টে যাচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

রাষ্ট্র তো মূল্যবোধ তৈরিতে ব্যর্থ। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি মানুষের অবস্থা কি বা ব্যক্তির ডেডিকেশন?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ : ডেডিকেশন, এটি তো নেই এখন আর। এখন যে যার ছোট্ট পেশা ও চাকরিতে ইঁদুরের মতো ঢুকে গেছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অফিস করা, তারপর ঘরে ফেরা- এই হলো জীবন। আর অন্যদিকে চলছে বল্গাহীন দস্যুতা। আমরা দরিদ্রতম একটি দেশ। আমাদের রাষ্ট্র ছিল না। আমাদের ঐশ্বর্য ছিল না। ধন-সম্পদ ছিল না। কিছুই না। আমরা স্বাধীন হলাম। এই প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ। যে সমাজে কিছু থাকে না, সেখানে উন্নয়নের প্রথম পর্যায়ে ন্যায়-নৈতিকতার বালাই থাকে না। তাহলে তো ধন-সম্পদ হবে না। এই সুযোগ ছেড়ে দেওয়ার বোকামি অধিকাংশ মানুষই করেনি। এভাবেই ক্ষমতার প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়াল অর্থ। আর সেই অর্থের দাসত্ব করছে রাষ্ট্র, আর সেই সাথে মানুষই তো তার মূল, তাই না?

জি স্যার। তবে আজকে আমরা ব্যর্থতার কথা বলব না। বলব সম্ভাবনার কথা, স্বপ্নের কথা, প্রেমের কথা। স্যার প্রেম মূলত কী?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ : প্রেম হলো না-পাওয়া। যা কিছু পেলাম না, যা কিছু হারালাম তাই প্রেম। লাইলি মজনুকে পায়নি বলেই সেখানে গভীর প্রেম। সঙ্গে থাকবে পাওয়ার আকাঙ্খা। প্রেম হচ্ছে একটা মধ্যবিত্ত সমাজের ব্যাপার। একদম গরিব; যে নির্মম জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত শেষ করছে, তার মধ্যে প্রেমের ছোঁয়া লাগে না। ওই পরিবেশটাই তার থাকে না। আবার যে ধনী, অর্থে-বিত্তে পরিপূর্ণ, তার প্রেমের দরকারই হয় না। প্রেম নিবেদনের বিষয়, ভালোবাসার বিষয়, গভীরতার বিষয় এবং পরস্পরের আত্মার সঙ্গে আত্মার সম্মিলনের বিষয়। এটি অনেক বড় একটা জিনিস।

আপনি কি এখনও প্রেমের টান অনুভব করেন?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ : হ্যাঁ, আমাকে প্রেম টানে। শুধু যে নরনারীর প্রেম তা না, সমস্ত কিছুর প্রেম। আমাকে একবার টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছিল- আপনি একসময় এই কাজ করেছেন, একসময় ওই কাজ করেছেন, সেই কাজ করেছেন। আমি বললাম, দেখ ভাই, একদিন আমি একটা পাকা কন্দলের জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারতাম, আজকে আর পারি না। শিশু ছিলাম, শিশু থেকে কিশোর হয়েছি, কিশোর থেকে তরুণ হয়েছি, তরুণ থেকে যুবক হয়েছি, প্রবীণ হয়েছি, বৃদ্ধ হয়েছি এখন আমি মারা যাব। তবে স্বপ্নের প্রতি প্রেম তো বৃদ্ধ হয় না, মরেও না।

তবে কি প্রেম থেকেই স্বপ্ন? 

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ : হ্যাঁ, বড় সম্পদ হচ্ছে স্বপ্ন। এবং অনেকেই মনে করেন যে, স্বপ্ন জিনিসটা হচ্ছে একটি অবাস্তব জিনিস, অলৌকিক জিনিস। কিন্তু স্বপ্ন কিন্তু আসলে অবাস্তব জিনিস না। স্বপ্ন মানে হচ্ছে গন্তব্য। আমি কোথায় যেতে চাই, সেটা হলো আমার স্বপ্ন।

এই যে বইমেলা হচ্ছে, এটাও তো অনেকের কাছে স্বপ্ন। এখানে এতো এতো সাহিত্যিক তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী বলবেন? 

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ :  আমরা ষাটের দশকে যখন সাহিত্য আন্দোলন করেছি, আমরা লেখকরা কিন্তু সব বন্ধু ছিলাম। আজও আমরা সবাই বন্ধু। লেখা নিয়ে আমাদের সমালোচনা হতো। তারপরও আমাদের মধ্যে সৌহার্দ্য কমেনি, একটি উন্মাতাল আনন্দ নিয়েই আমরা বেঁচে ছিলাম। একটি বড় জীবনের দিকে আমরা ছুটে গিয়েছিলাম। একটি বড় সাহিত্য যুগ আসছে- সেই স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। কতদূর কী হয়েছে, সেটি ভিন্ন কথা; কিন্তু স্বপ্নটি তো কাজ করেছিল। এখন মানুষের মধ্যে সেই স্বপ্ন নেই, তাই সবার মধ্যে এত কলহ আর কোন্দল। একটি অর্থসর্বস্ব যুগ এখন। যাদের মধ্যে ভালো কিছু আছে, তারা বিপদগ্রস্ত, একঘরে। আবার তারা হয়তো এক সময় সংগঠিত হবে। নতুন আশা, নতুন করে স্বপ্ন দেখবে আবার। এভাবেই তৈরি হতে পারে নতুন মানুষ।
 

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়