ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

ছোটগল্প

কবর 

মঞ্জু সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ২৮ জুন ২০২৪  
কবর 

অলঙ্করণ : অপূর্ব খন্দকার

নগরীর অলিগলি ঘিরে যত ঘরবাড়ির জঙ্গল, এলাকা ভেদে সেগুলোর নাম, গড়ন ও শ্রেণিচরিত্র ভিন্ন হলেও ভিতরের দৃশ্যপট তো প্রায় একইরকম— কানে আসে ব্যস্ত মানুষ আর জ্যান্ত যানবাহনের কোলাহল, কোথাও-বা নাকে আসে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ আর চোখে পড়ে স্থির কি গতিশীল, সুন্দর বা বিসদৃশ বিচিত্র দৃশ্যপট, সবকিছুই জীবিতদের বেঁচেবর্তে থাকার জন্য। কিন্তু মৃতদের নিঝুম আশ্রম দেখা যায় না সাধারণত। মিরপুর এলাকায় শাহ আলীবাগ মহল্লার এক গলিতে বাসা খুঁজতে গিয়ে একটা কবর দেখে তাই দৃষ্টি হোঁচট খায়। চমকে ওঠার সঙ্গত আরো কারণ আছে।

ষাট ফুট রাস্তা থেকে ভিতরে ঢুকেছে আট ফিট চওড়া একটা গলি। দামি কারগুলো এমন গলিতে মাথা গলায় না, কিন্তু ত্রিচক্র রিকশা, ভ্যান, মাথায় মাল নিয়ে নানা কিসিমের হকার সাচ্ছন্দ্যে ঢোকে, আবার বেরিয়েও আসে। আমিও ঢুকে পড়েছি, কারণ গলির দু’পাশে ঘেষাঘেষি বিস্তর বহুতল ঘরবাড়ি। নিজের সম্ভাব্য বাসাটি খুঁজছি। অচেনা গলিতে হাঁটলেই মালুম হয়, এসব বাড়ির মালিক রাস্তাটা চওড়া করতে অমূল্য জমিন দু’তিন ফিটের বেশি ছাড়তে চায়নি, নগর কর্তৃপক্ষ ছাড়তেও বাধ্য করায়নি, কিন্তু ক্রমবর্ধমান নগরবাসীর মাথাগোঁজার সুবিধা করে দিতে গলির দু’দিকে ছয়তলা এমন কি একটি আটতলা ভবন নির্মাণেরও অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।  তুলনামূলক সস্তায় বাসা ভাড়া পাওয়ার আশায় আমি দু’পাশের বাড়ি দেখি।  হকারগণ ভবনের বাসিন্দাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পণ্যের নামে নিজেদের পরচিয় জানান দেয়, আমি টুলেট সাইনবোর্ড খুঁজি। খানিকটা হাঁটতেই গলির ধারে একটি ছয়তলা ভবনের সামনে আমগাছের ছায়ায় গোরস্তান দেখে দৃষ্টি এতটা হোঁচট খায় যে, থমকে দাঁড়াই। প্রশস্ত কবর আসলে একটাই, দামি টাইলস পাথরে বাঁধানো, উপরেও সাদা পাথরে খোদাই করা নীলরঙা বড় হরফে লেখা: শহীদ মাতবরের পারিবারিক কবরস্থান। 
কবরের উপরে একটি ছাদও আছে। ছাদটা কেন?  কবরের নরম মাটিতে আম গাছের ফল-পাতা কিংবা প্রাকৃতিক রোদ-বৃষ্টির আঘাত ঠেকাতে? হতে পারে কবরঘেষা ভবনের উপরতলায় বাসিন্দাদের দৃষ্টি ঠেকাতেও, নাকি কবরের মর্যাদা বাড়াতেই আলগা ছাদ করা হয়েছে? ঠিক বুঝতে পারি না।  ভালোমন্দ বোঝার চেষ্টা করি, কারণ কবরের পাশেই ফ্ল্যাটবাড়িটার প্রবেশপথ, গেটে ছোট করে লেখা ‘শহীদ মাতবর লজ’, তার নিচে অস্থায়ী টিনের সাইনবোর্ড— ফ্ল্যাট ভাড়া হইবে, ভিতরে যোগাযোগ করুন। 

ভিতরে ঢোকার আগে আমি কবরটাকে আবার দেখি। কবর এবং বাড়ির নাম কি প্রাণ উৎসর্গকারী কোনো শহীদের স্মৃতি ধরে রাখতে, যার নামও ছিল মাতবর? দেশের বহু সুন্দর স্থাপনাই যেমন দেশপ্রেমিক বীর মাতবরের স্মৃতি ধরে রাখতে গড়ে উঠেছে, সেরকম কিছু? মিরপুরেই যেহেতু বিখ্যাত পীর শাহ আলীর মাজার, তার সাগরেদ কিংবা মহল্লার মাতবর গোছের কারো স্মৃতিসৌধ? নাকি বাড়িঅলা বেটা শহীদ নামেই জীবিত এখনো? নিজের জমিতেই চিরনিদ্রা দেবেন বলে, নাকি ইতোমধ্যে চিরনিদ্রায় গেছেন বলে বাড়ির সামনে এমন বিসদৃশ কবর? যাই হোক, কবরের অবস্থান ছয়তলা ভবনটির স্থাপত্য নকশাকেও যথেষ্ট প্রভাবতি করেছে। কারণ অনেকটা জায়গা ছেড়ে কোমর বাঁকিয়ে উপরে উঠতে হয়েছে এটাকে। কবরটার জায়গায় যদি ছয়তলা পর্যন্ত ভবনটার সম্প্রসারণ ঘটত, নিঃসন্দেহে আরো এক ডজন মানুষ বসবাস করতে পারত। আস্ত একটা বেডরুম ছাড়াও বাথরুম কি কিচেনও হতে পারত কবরের মাটিতে। শহীদ মাতবর এখানে ঘুমাবেন কিংবা অলরেডি ঘুমিয়েছেন বলেই এতগুলো মানুষের  বসবাসের সুবিধা এবং তার ওয়ারিশদের সম্ভাব্য আয়বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করার জন্য কবরটাকে দায়ী করা যায়। 

সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় বিখ্যাত যেসব কবরস্থান আছে এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের অন্তিম যাত্রায় যেগুলোর নাম আটেচারে শোনা যায়, তেমন কোনো গোরস্তানসংলগ্ন মহল্লায় একদা বাসাভাড়া নেয়ার প্রশ্ন উঠলে জবাব দিয়েছিলাম— গোরস্তানের কাছে থাকব না। কারণ গোরস্তানের কাছে থাকলে নিজের অন্তিম গন্তব্যের কথা মনে হবে, মনে হলে ভয় পাবো— এ জন্যেই কি? ভয় পাই না, গোরস্তান দেখে কবর-পরবর্তী জীবনের কথা ভেবে নষ্ট করার মতো সময় হাতে নেই— এ জন্যেই বলেছিলাম কথাটা। বাসা খুঁজতে এসে অপ্রত্যাশিত ছোট্ট এক গোরস্তানের মুখোমুখি হয়েও, শহীদ মাতবরের কবরকে অগ্রাহ্য করে ভিতরে ঢুকি। এই ভবনে সুবিধামতো ভাড়া-বাসা যদি পেয়েও যাই, এই কবরে স্থান পাওয়ার প্রশ্ন অন্তত আসবে না, অতএব কবর পরবর্তী জীবনের কথা একবারও ভাবতে হবে না।

ছয়তলার উপরে ওঠার সিঁড়ির পাশে লিফটও রয়েছে। আর নিচতলার অনেকটা ফাঁকা জায়গায় গাড়ির গ্যারেজে মোটরগাড়ির বদলে এক জোড়া রিকশা, তিনটি মোটরসাইকেল এবং একটি কার। পাশেই কবরঘেঁষে ছাপরা ঘর, সম্ভবত দারোয়ানের আস্তানা। দারোয়ানকে ভাড়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বাসা দেখাতে সিঁড়িতে উঠে, সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সিদ্ধান্ত বদলে আমাকে নিয়ে লিফটে চড়ে। পাঁচে টিপে উপরে উঠি, ছয়তলায় নামি। পাশাপাশি দুই ফ্ল্যাট। লক খুলে আমাকে একটাতে ঢুকিয়ে ঘর-বাথরুম-কিচেন-বারান্দা চেনায় দারোয়ান। বাসা দেখতে গিয়ে সাধারণত পূর্বসূরী ভাড়াটের সাক্ষাৎ মেলে, কিন্তু এ বাসাটা যেন নতুন ভাড়াটের অপেক্ষায় ফাঁকাই পড়ে আছে। বারান্দায় দাঁড়াতেই রাস্তা ঘেঁষে অনেকখানি ফাঁকা জায়গা, নিচে কবরের ছাদ, কিন্তু বেশ কাছে আমগাছের ডালপাতা, মৃদু মাথা নেড়ে আমাকে স্বাগত জানায় যেন। প্রকৃতিপ্রেমী আমি। ভালো লাগে। দারোয়ানকে বলি, এ বাসায় থাকলে বেশ বাতাস পাওয়া যাবে। আম গাছটায় আম ধরে? কী আম?

দারোয়ান নির্বিকার জবাব দেয়, আম খাইতে পাবেন, কবরের বাতাসও পাইবেন। ভাড়ার প্রশ্ন উঠলে দারোয়ান আশ্বস্ত করে, মালিকের ভাড়াটিয়া পছন্দ হইলে ভাড়া কোনো সমস্যা না। আমার আসলেই বাসাটা পছন্দ হয়েছে, দুই সান্তান নিয়ে চার জনের পরিবারের জন্য তিন রুমের হাজার ফুটের এ বাসা যথেষ্ট। আমার অফিস ও ছেলেমেয়ের স্কুল-কলেজ কিছুটা দূরে হলেও কাছেই বাস স্টপেজ ছাড়াও যানবাহনের কমতি নেই। এখন ভাড়াটা সাধ্যের মধ্যে থাকলে কবরের বাতাসও আমাকে আরাম দেবে, কবরবাসী শহীদ মাতবরের কথা ভেবে আতঙ্ক জাগবে না একটুও।  

দোতলায় বাড়িঅলার ডবল ইউনিটের ফ্ল্যাট। খোলা ড্রয়িংরুমে বসে বড় পর্দার টিভি দেখছিলেন এক বৃদ্ধ, মাথায় সাদা টুপি, পরনে সাদা পাঞ্জাবি-লুঙ্গি, চুল-দাড়ি-ভ্রু সবই ধূসর। কফিনে শুয়ে অন্তিম যাত্রার জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। জায়নামাজে তসবি হাতে মানানসই বৃদ্ধকে রঙিন টিভিতে মগ্ন দেখেও ভালো লাগে। রিমোর্ট হাতে আমার দিকে তাকাতেই সালাম দিই। টিভির আওয়াজ কমিয়ে আমাকে সোফায় বসতে বলে জিজ্ঞেস করেন, বাসা পছন্দ হইছে?
জি মুরব্বি, পছন্দ হইছে বইলাই আপনার লগে আলাপ করতে আইলাম।
পরিচয় দেন আগে, জাইনা লই। উল্টাপাল্টা মনে হইলে কিন্তু ডুকুমেন্ট চামু। 
সুবিধাবাদী নই বলে নিজেকে সত্যবাদী প্রমাণের সুযোগ মিস করি না সচরাচর। সগর্বেই বলি, মিথ্যে খুব একটা বলি না। আমার নাম... নাম শুনেই বাড়িঅলার প্রশ্ন— আপনি হেঁদু? হেঁদুরে আমি ভাড়া দেই না। নিচের কবর আর নাম দেইখা বোঝেন নাই এইটা কার বাড়ি? 
সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে থাকতেই নিজের বাঙালি নামটাতে আসল পরিচয় জেনেছি, কিন্তু পদবিটা হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ে সুলভ বলেই হয়তো আমাকে হিন্দু ভেবে বৃদ্ধের সাম্প্রদায়িক মানসিকতার দ্বিধাহীন প্রকাশ। এমন মানসিকতা পছন্দ না হলেও ভুল ভাঙিয়ে দিই— আপনার মতো পরহেজগার না হলেও আমি আসলে হিন্দু না। বাবা-মাও পাঁচওক্ত নামাজি ছিলেন। কবরবাসী হয়েছেন। সাংবাদিকতা পেশা শুনে পেপারের নাম জানতে চান।  আমার কর্মক্ষেত্র কাগজের নামটি জীবনে প্রথম শুনলেও অবিশ্বাস করলেন না বোধহয়, বললেন, সোম্বাদিকের চাকরি খারাপ না। উকিল আর সরকারি পুলিশ-কাস্টম-ইনকাম ট্যাক্স অফিসারগো আমি ভাড়া দেই না। সরকারি অফিসের পিয়ন-চাপরাশিরাও অহন ঘুষ খাইতে হাঁ-মেইলা থাকে। ঘুষখোরগো চরিত্র আর তাগো বংশধর কত ভালা হইব? বাড়িটা করার পর কবরের ওপর ছাদখান দিছি ক্যা জানেন?

আমি জানার আগ্রহে হাসিমুখে বসে থাকি। বৃদ্ধ বলে যান—ঘুষখোর ভাড়াটিয়ার খবিজ-বান্দর পোলাপান কব্বরের ওপর প্লাস্টিক বোতল, চিপসের ঠোঙা-মোঙা আর কত কী যে ছুইড়া মারত! আমের সিজনে গাছের আম সব ভাড়াটিয়ার ঘরেই পাঠাই, তারপরও বান্দর পোলাপান আমগাছে ঢিল মারবই। ছয়তলার ওই ফ্ল্যাটে এক ভাড়াটিয়া আছিল, তার ছোট পোলাটা ছিল বান্দরের সর্দার, আস্ত এক খচ্চর। বারান্দারে মাঠ বানাইয়া ক্রিকেট বল খেলত। বল কবরের ভিতরে পড়লে লাফ দিয়া কবরে উইঠা বল কি আম কুড়াইত। কবরটারে খচ্চরের বাপ ঘুষখোরও মর্যাদা দেয় নাই। থু ফেলা ছাড়াও বান্দর পিচ্চিটা একবার বারান্দা থাইকা কবরের উপর পেশাব কইরাও দিছে। নিজের চক্ষে দেইখা দারোয়ান আমারে বিচার দিলো। তার বাপরে ডাইকা ধামকি দিলাম। হারামখোর বাপ পোলারে শাসন করব কি, উল্টা কয় আমারে— পেসাব না চাচা, আমার বাচ্চাটা পানি বেশি খায় তো, পানি লিক কইরা পড়ছে। মাসখানেকের মধ্যে ওই পোলার নিউমোনিয়া ধরলে হাসপাতালে নিয়াও বাঁচাইতে পারল না। তবু কবর কি আমার কাছে আইসা মাফ চাওয়ার বদলে কী করল জানেন? আমি মানে বাড়িঅলাই নাকি তার পোলারে বিষ খিলায় মারছে, আমার বিরুদ্ধে কেস দেয়ার হাম্বি-তাম্বি করল। বাসাও ছাড়ব না, ভাড়াও দিব না। শিক্ষা অফিসে কেরানির চাকরি করলেও পুলিশের কোন ওসি আত্মীয় আছিল। তার সাহসেই আমারে হ্যারেস কইরা তিন মাসের ভাড়া না দিয়াই বাসা ছাড়ছে। এই ঘটনার পর, আর কোনো ভাড়াটিয়ার পোলাপান যাতে শাস্তি না পায়, কবরের উপর আলগা একখান ছামিয়ানা-ছাদ বানায় দিলাম।

আমার সন্তানরা মায়ের কোলে কি বিছানায় প্রশ্রাব করার শৈশব অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছে। বৃদ্ধকে পারিবারিক হালচাল জানিয়ে আশ্বস্ত করি—আমার ছেলেমেয়ে দুটি হাইস্কুল-কলেজের ছাত্র, বারান্দায় কখনো খেলবে না। অবসরে মোবাইল ফোন কি কম্পিউটারে চুপচাপ নানারকম গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

বৃদ্ধ তার নাতি-নাতনিদেরও এমন নেশা থাকার কথা জানায়। অতঃপর আসল কথাটা উঠলে সে আমার সামর্থ্য আগে জানতে চায়। পূর্বসুরি ভাড়াটিয়ার আতঙ্কজনক পরিণতির কথা ভেবে, ইন্টারভিউতে নিজের সাফল্য বোঝার কৌশলেও বটে, সামর্থ্যরে চেয়েও তিন হাজার টাকা কমিয়ে প্রস্তাব দিই আমি। আনুষাঙ্গিক ব্যয়সহ মাত্র তের হাজার টাকা ভাড়াতে বাড়িঅলা রাজি হলে, ভিতরে চোরা অনুতাপ জাগে, আরো কম বলা উচিত ছিল বোধহয়। আবার ভয়ও হয়, কবরটার কারণে ভূতের উপদ্রবের মতো অন্য কোনো বিপদে পড়ব না তো? অগ্রিম ভাড়া দিয়ে লিখিত চুক্তির কথা বললে বৃদ্ধটি জানায়— ডিড-ফিড লাগব না, ওইসব সরকারি কাগজের চাইতে আমার জবানের ভেল্যু বেশি। আপনে সোম্বাদিক-শিক্ষিত মানুষ, আপনার কথারেও আমি ভেল্যু দিছি। তয় আমার আরো দুইটা শর্ত আছে।

প্রথম শর্ত, এ বাড়িতে থাকলে সর্বদা শহীদ মাতবরের কবরকে সমীহ করে চলতে হবে। প্রতি বছর ১৫ আগস্ট মহা আড়ম্বরে ওনার মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপিত হয়। মিলাদ ছাড়াও ছাদের মধ্যে খানা-পিনার আয়োজন থাকে। তাতে এ বাড়ির সব ভাড়াটিয়াই বাঁধা দাওয়াতি। সপরিবার উপস্থিত থাকতে হবে আমাকেও।
দ্বিতীয় শর্ত, মাসের ভাড়াটা মাসের দশ তারিখের মধ্যে শোধ করতে হবে।

ধারণা হয়, শহীদ মাতবর হয়তো পীর শাহ আলীর গোত্রের বুজর্গ কেউ ছিলেন। এ দেশে বহু মাজার ও মসজিদকে সম্মান দেখাতে সরকারি রাস্তা ও স্থাপনা পর্যন্ত সম্মান জানাতে বাধ্য হয়। ধর্মকর্মে আমার আগ্রহ ও যোগ্যতা নেই বললেই চলে। নামাজের সুরাও সব মুখস্থ নেই। কিন্তু বাধ্যতামূলক মাজার-জিয়ারত যদি করতেই হয়, সেই সময়ে মনে মনে সমীহ কিংবা সন্দেহ যাই করি, সেটা কবরবাসী ও আমার মধ্যেই গোপন থাকবে। আর মৃত্যুবার্ষিকীর ভোজে শরিক হওয়া? একে তো ভাড়া তুলনামূলক কম, তারওপর বছরে একটা মাগনা ভোজ! আমি খুশি হয়ে বলি, আঙ্কেল, নিচের কবরটি অনেকক্ষণ চেয়ে দেখছি। শহীদ মাতবর সম্পর্কে আপনার কে হন আসলে?
শহীদ মাতবর আমার মরহুম আব্বাজান। আমি তার বড় পোলা কুদ্দুস হাজি। কেউ তো এমন সওয়াল করে না, আমারে যাইচা সব শোনাইতে হয়।
উনি নিশ্চয় একজন বুজুর্গ মানুষ মানে মহল্লায় প্রভাবশালী নেতা গোছের কেউ ছিলেন?

উনি কী আছিলেন, কেমতে কী যুদ্ধ কইরা শহীদ হইছেন, কেমতে বাড়ির সামনে কবর পাইলেন, এই মহল্লা আর বাড়ির উন্নয়নে ওনার কী ভূমিকা আছিল, ব্যাবাক কিছুই ক্রেমে ক্রেমে জানতে পারবেন। তাঁর মৃত্যু লইয়াও পেপারে এইটুকু খবর বাইর হইছিল। কেউ তো পুরানা দিনের কথা যাইচা শুনবার চায় না। সোম্বাদিকের চাকরি করেন যহন, আব্বাজানের হিস্টোরি জানলে পেপারে বড় কইরা লিখতেও পারবেন। অহন একটু চা-নাস্তা খান। 
বৃদ্ধ চেঁচিয়ে হাজরাকে (সম্ভবত বাড়ির কাজের মেয়ে) ডেকে চা-নাস্তার আদেশ দেয় এবং নিজেও উঠে দাঁড়ায়। উঠে দাঁড়ানোর গতি, পাশের হেলানো লাঠি হাতে নেয়ার ভঙ্গিতেও বার্ধক্যের কষ্ট স্পষ্ট, আমিও ঝটিতে উঠে দাঁড়িয়ে বলি, আমি সাহায্য করব আঙ্কেল?
না, লাগব না। আপনি বন, আমি এট্টু টয়লেট সাইরা আহি।

ভাড়াটিয়া হিসেবে শহীদ মাতবর লজে প্রবেশের পর নিজের অফিস-সংসার নিয়ে দৈনন্দিন ব্যস্ততায় বাড়িঅলা কিংবা তার মরহুম পিতার কবর নিয়ে ভাববার সময় কম। এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। অবসরে সস্ত্রীক কিংবা একা ধূমপানের প্রয়োজনে বারান্দায় বসি। নিচের কবরটা দেখে পূর্ববর্তী এক ভাড়াটির সন্তানের মৃত্যুর ঘটনাটি মনে পড়ে। সত্যই কি কবরবাসীর অভিশাপ, নাকি গল্পটার মূলে বাড়িঅলার কোনো কারসাজি আছে? যাই থাক, কবরপূজায় বিশ্বাস না করেও গল্পটা বলে স্ত্রী-সন্তানদের সতর্ক করেছি, নিচে থু কি ময়লা-আবর্জনা না ছোড়াই ভালো। আমার তুলনায় স্ত্রীর সামাজিকতায় আগ্রহ ও পরচর্চার স্বভাব প্রবল। ইতোমধ্যে বাড়িঅলার পরিবার ছাড়াও পাশের এবং নিচের পড়শী দুই ফ্ল্যাটের বাসিন্দার সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হয়েছে। তাদের সঙ্গে গল্পস্বল্পে কবরের রহস্য অনেকটাই খোলাসা হয়েছে তার। বারান্দায় বসে একদিন চায়ের সঙ্গে টাটকা-গরম খবর পরিবেশন করে, কি ছাতা সাংবাদিক তুমি! নিচের ওই মাজার পীর কি বীর শহীদের! কে বলেছে তোমাকে? বাড়িঅলার বাপ একটা গুন্ডা ছিল। ভেজালি জায়গা কিনে বাড়ি করেছে, আর বাড়িঅলা আপন ভাইদের জমি দখল করতেই  বাপকে বাড়ির সামনে মাটি দিছে। কেস চলছে এখনো এ বাড়ি নিয়ে। ভেজাল বলেই কম ভাড়ায় বাসা পেয়েছ, কপালে কী আছে কে জানে!

ধারণা ছিল, আমার সাংবাদিক পেশা ও সততাকে গুরুত্ব দিয়ে ভাড়া কনসিডার করেছে বাড়িঅলা। আমাকে দিয়ে মিডিয়ায় বাপের মাজারের প্রচার-কামনাও হয়তো মতলব হিসেবে কাজ করেছে। এরকম ফরমায়েশি লেখার ভয়েও বাড়িঅলাকে এড়িয়ে চলি আমি। কিন্তু কবরটা ঘিরে পরস্পর-বিরোধী তথ্য, গল্পগুজব শুনে আসল সত্য উদ্ঘাটনের দায়টাও বাড়ে। এ জন্য বাড়িঅলা কুদ্দুস হাজীর ভাষ্যটাও জানা জরুরি। সুযোগ দিতে বৃদ্ধ দারোয়ানকে দিয়ে নিজেই একদিন ডেকে পাঠায় আমাকে।
হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথায় চলাফেরা তেমন করতে পারে না বলে ঘরেই সময় কাটে বৃদ্ধের। তবে ঘরে থেকেও পুরো বাড়ি যে হাতের মুঠোয়, বুঝতে অসুবিধা হয় না। আমাকে দেখে অভিযোগ করে, আব্বাজানের কবরের হিস্টোরি শুনতে চাইলেন, তারপর তো আইলেন না আর একদিনও।

লেখার অনুরোধ এড়ানোর মতলবে পত্রিকা অফিসের কাজের ধারণা দিই। মালিক-সম্পাদক সরকারকে খুশি রেখে চালাতে চায় তার কাগজ। এ জন্য আমাদের নানারকম এসাইনমেন্ট দিয়ে লেখানোর কাজে ব্যস্ত রাখে। সামনে জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকী, জাতীয় শোকদিবস। এ দিন পুরো জাতি টুঙ্গিপাড়ায় এবং বত্রিশ নাম্বারে জাতির পিতার স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে, সারা দেশে কী কী অনুষ্ঠান হবে, জাতির পিতার মাজার ঘিরে যে অতীতের অবহেলা ও বর্তমান সরকারের আমলে গুরুত্ব কোথায় কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে, এসব বিষয় নিয়ে বড় একটা লেখা লিখতে হবে। এ নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি মুরব্বি। টুঙ্গিপাড়াতেও যেতে হয়েছিল।

আমি আসলে তার মরহুম পিতার গল্প শোনার কিংবা লেখার বায়না আগাম প্রতিরোধ করতেই সরলভাবে সত্য কথাটাই বলেছি। কিন্তু বৃদ্ধ বেশ উৎসাহিত বোধ করেন— হ, এর লাইগাই তো আপনারে ডাক দিলাম। জাতির পিতার শাহাদত দিবসে এই মহল্লাতেও তার দলের লোকরা মাইক, বাজাইব খিচুড়ি বিলাইব। ঘরে বইয়াও মাইকে নেতার বজরোকণ্ঠের রেকর্ড শুনবেন। আমার কপালের ফাঁড়া কন আর অদ্দিস্টের পরিহাস কন, হেইদিন আমার আব্বাজানেরও মৃত্যুবার্ষিকী। বাড়ির ছাদে অনুষ্ঠান করুম, মিলাদ মহফিল হইব, মিরপুরের সেরা বাবুর্চি ডাইকা স্পেশাল খিচুড়ি-বিরিয়ানি করি, আপনারা সবাই উপস্থিত থাকবেন। 

আমি কখনো বৃদ্ধের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইনি। জাতীয় শোক দিবসে বিরোধী দলীয় এক নেত্রীর ভুয়া জন্মবার্ষিকী উদযাপনের বিষয় নিয়ে অনেক হইচই হয়েছে। সন্দেহ নিয়ে জানতে চাই— আপনার আব্বাজানের মৃত্যুও কি পনেরই আগস্টে?
খালি দিনের মিল নয়, আমার আব্বাজানকেও তার জানের দুষমনরা গুলি কইরা হত্যা করছে। এরপর থাইকা আমি আব্বাজানের শাহাদত দিবস পালন কইরা আসতাছি। কিন্তু আব্বাজানের মৃত্যুবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে আপনা ভাই-বেরাদার আত্মস্বজনগোরে মাহফিলে হাজির করাইতে পারি না। আপনারা ভাড়াটিয়া ভদ্রলোক নিজের পোলা-মাইয়া নাতি-নাতনি আর দোকানের কর্মচারীরা আসে বইলা অনুষ্ঠানটা চালায় যাইতাছি। অফিসে জাতির পিতারে লইয়া লেখালেখির কামে যতই ব্যস্ত থাকেন, আমার আব্বাজানের সামান্য এই অনুষ্ঠানে পরিবার লইয়া থাকবেন কিন্তু।

শহীদ মাতবরের মৃত্যুবার্ষিকীতে শরিক হওয়ার ওয়াদা ভাড়া নেয়ার সময়েই করতে হয়েছিল। তাই জোরের সাথে নিজের উপস্থিতির আশ্বাস দিয়ে শহীদ মাতবরের মৃত্যুরহস্য জানার কৌতূহলটাও প্রকাশ করি। উৎসাহী শ্রোতা পেয়ে বৃদ্ধও হাজেরাকে ডেকে চা-বিস্কুট দিতে বলে। অতঃপর এ বাড়ির কবর-রহস্য উদ্ঘাটনে একাধিক সেশনে বাড়িঅলার সাক্ষাৎকার, মহল্লার মুদি দোকানী, বয়স্ক পড়শী বাড়িঅলা থেকে শুরু করে শহীদ মাতবর লজের দারোয়ান, সহভাড়াটিয়া এবং স্ত্রীর মাধ্যমে যেসব তথ্য ও গল্পগুজব শোনা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই যুক্তির ছাকনিতে ঢেলে, বালু ছেকে হিরে পাওয়ার মতো কবরের প্রকৃত ইতিহাসটা সংক্ষেপে এরকম:

১৯৯২ সালে ১৫ আগস্ট ভর সন্ধ্যাবেলা এই মহল্লার কাছেই ধানক্ষেতের মোড়ের এক গলিতে অজ্ঞাত পরিচয় খুনিদের হাতে বাঁধা গরুর মতো জবাই হয়েছিল শহীদ মাতবর। তার মরণঠেকানো ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুনে রাস্তার বেশ কিছু রিকশা ও কৌতূহলী পথচারী উঁকি দিয়েছে গলির মুখে, দৃশ্য দেখে ভয়ে বরফ হয়ে গিয়েছিল সবাই, ছুটেও পালিয়েছে কেউবা। খুনিরা সংখ্যায় ছিল চারজন, প্রত্যেকের হাতে পিস্তল ও ধারালো ছুরি। চার খুনির মাঝেই যেন চার লক্ষ যমদূতকে প্রত্যক্ষ করেছিল মানুষ। ওই সময়টায় সন্ত্রাসী-অপরাধীরাই ছিল সমাজের প্রকৃত নায়ক, প্রতিদিনই তাদের খুনখারাপির খবর পত্রিকায় বড় করে ছাপা হতো। কাজেই শহীদ মাতবরের মর্মান্তিক মৃত্যুদৃশ্য দেখে ভিড়ের লোকজন শারীরিক প্রতিরোধ দেখানো দূরে থাক, মৃদু জবানেও ‘করেন কী’, ‘কামটা ঠিক হইতাছে না ভাই’ বলারও কেউ ছিল না। গলায় ও বুকে ছুরি চালিয়ে লাথি মেরে রক্তাক্ত লাশটা গলির উন্মুক্ত ড্রেনে ফেলে দিয়ে অপেক্ষমান তিনটি মোটর সাইকেলে ঝড়ের বেগে ছুটে পালিয়েছে খুনিরা। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে সব মানুষের। খুনিরা চলে গেলে লাশ ড্রেন থেকে তোলার মানবতা ছাড়াও কৌতূহলী ভিড় শোক ও ক্ষোভ প্রকাশের প্রতিযোগিতায় মেতেছিল। লাশ সনাক্ত করেছিল প্রথম মাতবর বাড়িরই এক রিকশাঅলা।

ঘটনাস্থান থেকে মাতবরের বাড়ির দূরত্ব হাঁটাপথে দশ মিনিটের বেশি নয়। তবে মহল্লার অধিকাংশ  বাড়ির মতো মাতবরের বাড়িটা ছিল তখন হাফ বিল্ডিং, উপরে টিনের চাল। মিরপুর বাজারে হার্ডওয়ারের দোকান ছিল লোকটার, এখনও আছে সেই দোকান, কুদ্দুস হাজির এক ছেলে চালায়। ব্যবসায়ের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য বাড়ির পাশে সাতটা ছাপরা ঘর এবং আলাদা লেট্রিন-চাপকল বসিয়ে রিকশালা-মজুর শ্রেণীর লোকদের ভাড়া দিয়েছিল শহীদ মাতবর। নিজের বস্তির বাসিন্দা ও মহল্লার কিছু লোকের দেওয়া মাতবর উপাধিটাই নামের পদবি হয়ে গিয়েছিল তার। মাতবরি করার সহজাত স্বভাবে নিজেকে মাতবর নামেই পরিচয় দিত নিজেও। ব্যবসা ছাড়াও আয়ের উৎস ছিল দুই ছেলে, যাদের চার লাখ টাকা খরচ করে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করতে পাঠিয়েছিল সে। বড় ছেলে কুদ্দুস বাপের ব্যবসা দেখত। বাড়ির ভাড়াটিয়া রিকশাঅলার কাছে খবর পেয়ে দোকান থেকে সেই ছুটে গিয়েছিল প্রথম।

শহীদ মাতবরের খুন হওয়ার মূল কারণ ভেজাল, অর্থাৎ তার বাড়িটি তৈরি হয়েছিল ভেজাল জমিতে। জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের মামলা হাইকোর্টেও উঠেছিল। স্বাধীনতার পরপরই পরিচিত এক মুক্তিযোদ্ধা লিডারকে ধরে সস্তায় ছয় কাঠা জমি কিনেই বাড়ি করেছিল সে। পুরো জমিটা নিজের দখলে রাখতে বস্তিও করেছিল। সেই সময়ে এবং তার আগে তো বটেই, মিরপুরের বহু এলাকা ক্ষেত-প্রান্তর-জলাশয় ভরা ছিল, রাতের বেলা শেয়ালের ডাক শোনা যেত। এখন দালানকোঠার জঙ্গল দেখে অনুমান করাও শক্ত। মাতবরের ভেজাল জমির প্রকৃত আদি মালিক পাকিস্তানি অবাঙালি, দেশভাগের কারণে ভারতে শরণার্থী কোনো হিন্দু, নাকি জবরদখলকারী সরকার কিংবা মুক্তিযোদ্ধা— এ বিষয়ে বাড়িঅলা কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। আমিও জানার আগ্রহ বোধ করিনি। কেননা সেই ব্রিটিশ আমলের ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে বাংলাদেশ আমলেও ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে এতসব ভেজালের পাহাড় জমেছে, সেই পাহাড় কেটে প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করার চেয়ে সমস্ত জমির মালিকানা মহান আল্লাহ কিংবা মহান প্রকৃতিমাতার উপর হস্তান্তর করা অনেক বেশি সহজ। নিজের তেমন জায়গাজমি নেই বলে আমি এরকম ভেবে সান্ত্বনা ও আনন্দ দুটোই পাই। বাড়িঅলার কাছে তাই ভেজালের প্রকৃতি নিয়ে কিছু জানতে চাইনি। তবে মৃত্যুর মাত্র তিনদিন আগে জমির মামলার শুনানির দিনে হাইকোর্টের মহামান্য বিচারক কিংবা হতে পারে উকিলের কাছে শহীদ মাতবর বলে এসেছিল, ‘জান দিমু তবু জমি দিমু না হুজুর’।  এ ঘটানার ঠিক তিনদিন পর খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল।

আদালতে বলা কথাটা জীবন দিয়েই প্রমাণ করেছে শহীদ মাতবর। খবর পেয়েই তীরের মতো ছুটে গিয়ে পিতার রক্ত-কাদামাখা লাশের পাশে নিথর হয়ে পড়ে ছিল কিছুক্ষণ। তারপর  হুঁশ হারিয়ে হাসপাতাল, থানা-পুলিশ, স্বজন-বন্ধুদের জানানো সবই একা একা করেছে। কারণ তার অন্য দুই ভাই ছিল তখন সৌদি আরবে, ফোনে খবর পেয়ে কেঁদে মরুভূমিকে নদী বানানো কিংবা ফোন আছড়ানো ছাড়া তৎক্ষণাৎ ছুটে আসার উপায় ছিল না তাদের। থানায় মামলা, পুলিশের তদন্ত ও লাশকাটা ঘরের হ্যাপা সয়ে লাশ যখন বাড়িতে এল, স্বজন-পড়শিদের মধ্যে কান্নার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল অবশ্যই। আর সেই ক্রন্দন-সুমুদ্রে ভিড়ের টালমাটাল নাওকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মাতবরের বড় পোলা কুদ্দুসই বাপের জখমী লাশ ছুঁয়ে উন্মত্ত চিৎকারে ঘোষণা করেছিল, ‘আব্বাজান এই জমি-বাড়ি রক্ষা করতে গিয়া তুমি জীবন দিলা, আমি তোমারে এই জমিতেই কবর দিয়া তোমার কবরে শহীদ মিনার বানায় দিমু, প্রতি বছর তোমার মৃত্যুবার্ষিকীতে মাজারের মতো সিন্নি দিয়া গরিবদুঃখীরে খাওয়ামু, আর  তোমার লাশ ছুঁইয়া শপথ নিলাম, জীবন দিয়া হইলেও তোমার খুনের বদলা নিমু আমি।’

মাতবরের ভেজাল জমিতে বাড়ির সঙ্গে তাকে কবর দেয়াটা কিন্তু খুব সহজ ছিল না। প্রথম কারণ মহল্লায় সব বাড়িতে যত মৃতুর ঘটনা হয়, লাশের অন্তিমযাত্রা হয় সাধারণত গ্রামের জন্মভূমি অথবা নিকটস্থ বুদ্ধিজীবী গোরস্তান। দ্বিতীয়ত শহীদ মাতবরের জমির ভেজাল ও মামলার খবর মহল্লার অনেকেই জানত। বিরোধী পক্ষ ছাড়াও পুলিশি বাধা ও হামলার ভয় ছিল। পুলিশের ভয়ে কৌতূহলী ভিড় পাতলা হয়েছিল। জানাযা পড়াতে আসেনি মহল্লার মসজিদের ইমামও। কাছাকাছি মসজিদের এক চেনা হুজুরকে নগদ টাকা সেলামি দিয়ে ডেকে এনেছিল কুদ্দুস। আর বাড়ির সামনে মাতবরের লাগানো তরুণ আমগাছটির নিচে কবর খুড়েছিল বাড়িরই দুই ভাড়াটিয়া। সব মিলে জানাযায় জনাবিশেক লোক শরিক হয়েছিল। 

তাড়াহুড়ো করে দাফন-কাফন ও ধর্মীয় বিধি ষোলো আনা মেনে পিতাকে বাড়ির প্রাঙ্গণে মাটি চাপা দেওয়ার পরও ভয়টা কাটেনি। হিংস্র কুকুর-শেয়ালের চেয়েও শত্রুপক্ষের আক্রমণের ভয়টা ছিল প্রবল। সরকারি কাঁচা রাস্তার মাটি আর কবরের মাটি একাকার হয়ে গিয়েছিল। কবরের ভেজা মাটির রস শুকিয়ে যাওয়ার আগেই কুদ্দুস তাই ইঁট গেঁথে পারিবারিক কবরস্থানের বাউন্ডারি দেয়াল তুলে টিনের সাইনবোর্ডও লাগিয়েছিল। সরকারি রাস্তার উপরে মসজিদ কিংবা কবর পাকাপোক্ত হলে আইনের হাঁতুড়ি দিয়েও ভাঙা অতো সহজ না। কুদ্দুস জানত, তাই ভাইদের সাহায্যের অপেক্ষা না করে বাবার কবর পাকাপোক্ত বেঁধে দিয়েছে। তারপর ক্রমে টাইলস লাগানো, কবরের উপর পাকা ছাদ এবং ছাদের উপর সুন্দর একটি মিনার, সবই করেছে সে নিজের চিন্তায় এবং ষোলো আনা নিজের টাকায়। পিতা যে জমি রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছে, সেই জমিকে ভেজালমুক্ত করতে হাইকোর্টে লড়াই চালিয়েছে দশ বছর, তার উপর জমির দাবিদার এক মালিককে নগদে দিতে হয়েছে বারো লাখ টাকা। মরহুম পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এত কিছু করেছে বলেই এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও তাকে শ্রদ্ধা-স্মরণে এখনো জীবন্ত করে রেখেছে বলেই একদার সেই বস্তিবাড়ি স্বাধীন জমিতে আজ উন্নতির শিখরে উঠছে।

নিজের কৃতিত্বের বয়ান শুনিয়ে বাড়িঅলা সরাসরি জানতে চায়— বলেন সোম্বাদিক সাব, অন্য ভাইবইনগো চাইতে বাপের প্রতি আমার ভক্তি, আরেকদিকে তার দোয়া আমার উপর না থাকলে এত উন্নতি করতে পারতাম?
আমি সহাস্য সমর্থনসূচক মাথা নাড়লেও আসলে ভাবছিলাম জাতির পিতাকে নিয়ে নিজের লেখাটির কথা। অফিসের খরচেই গিয়েছিলাম টুঙ্গিপাড়া, অনেক ইতিহাস ও তথ্য ঘেঁটে খেটেখুটে দাঁড় করিয়েছি লেখাটা। লেখাটা প্রকাশিত হলে পেপারের একটি কপি বাড়িঅলাকে দিয়ে তার পিতাকে নিয়েও লেখার চিন্তা করব বলে আশ্বাস দিই।
জাতীয় শোক দিবস এবারে আমার ব্যক্তি-জীবনেও গভীর উদ্বেগ-বেদনার কারণ হয়ে উঠবে ভাবতে পারিনি। তবে ঘটনাকে একেবারে আকস্মিক বলা যাবে না। পত্রিকার অবস্থা খুব ভালো যাচ্ছিল না। এমনিতে ইন্টারনেট ও অনলাইন তথ্য বাণিজ্যের দাপটে ছাপা পত্রিকার বাজার সীমিত হয়ে আসছিল। সাংবাদিক-কর্মী ছাটাই শুরু হয়েছিল অনেক কাগজে। আমাদের কাগজেও চাকরি রক্ষায় সাংবাদিক ইউনিয়ন কিংবা মালিক-সম্পাদক তোষণ গ্রুপে তৎপর ছিল অনেকে। আমি নিজের কাজে আস্থাবান ছিলাম বলে দলাদলির ধার ধারতাম না। শোক দিবসের  একদিন আগে, সম্পাদক আমাকে ডেকে কম্পিউটার কম্পোজ লেখাটি দেখিয়ে বললেন, কী লিখেছেন এসব? আপনার এ লেখা ছাপলে বঙ্গবন্ধু ভক্তরা সবাই চটে যাবে, আমার অচল কাগজ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।

আমি আপত্তিকর জায়গাগুলো এডিট করার প্রস্তাব দিলে তিনি লেখাটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, এটা যাবে না। আমাকে কাগজ বন্ধ করতে হবে, আপনি অভিজ্ঞ মানুষ, অন্যত্র চাকরি খুঁজুন।

প্রশাসন থেকে অব্যাহতিপত্র তৈরি করেই রেখেছিল। শত্রু-মিত্র গ্রুপের সহানুভূতির তোয়াক্কা না করে হাসিমুখে চাকরিচ্যুতির নোটিশ পকেটে নিয়ে বাসায় ফিরি। চাকরি যাওয়া ও নতুন চকরি লাভ অনিশ্চিত সাংবাদিক জীবনের নতুন কোনো ঘটনা নয়। তারপরও বেকার হলে কার ভালো লাগে? বাসায় ফিরে সারাদিন ঘরে শুয়েবসে থাকলে স্ত্রী-সন্তান সবারই উদ্বেগ বাড়ে। পরদিন পনেরো আগস্ট শোক দিবসে শহীদ মাতবর লজের বিশেষ আয়োজন ঘরে শুয়ে-বসেও টের পাই। কবরের পাশেই বড় পাতিলে রান্না হচ্ছে। ঘ্রাণ পাচ্ছি ঘরে শুয়ে থেকেও। আমি একা চুপচাপ শুয়ে থাকি। ছেলেমেয়ে দুটিকে বাবার চাকরিহারা দশা জানাতে না করেছি স্ত্রীকে। চাপা স্বরে আমাকে সে সাহাস দেয়— দেশে এখন কতো কাগজ, তুমি চেষ্টা করলে কোথাও না কোথাও হয়ে যাবে। দু’তিন মাস চালাতে পারব, কিন্তু মাসের দশ তারিখের মধ্যে বাড়িভাড়াটা দেব কী করে?
চিন্তা করো না, ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে।
দুপুরে আজ রান্না করছি না, বাড়িঅলার দাওয়াতে দুপুরে ছাদে যেতে হবে কিন্তু।

অধিকাংশ দাওয়াতী দেখি মাথায় টুপি পরে এসেছে। ভোজের আগে মিলাদ দোয়া-দরুদ হবে। মেয়েদের যা কাণ্ডজ্ঞান, বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠনে আসার মতো সাজুগুজু করে এসেছে। শাড়িবিহীনদের মাথায় হিজাব বাঁধা আর বোরখা পরেও এসেছে কয়েকজন। তাদের বসার আলাদা ব্যবস্থা। ভোজের টেবিলে বসার আগে মিলাদের অনুষ্ঠানে বসে সব বয়সী পুরুষ। ইমাম হুজুরের বয়ান শোনা, সমবেত কণ্ঠে নবীজিকে সালাম জানানো এবং দু’হাত তুলে ইমামের ভাষণের ভঙ্গিতে আরবী-বাংলায় মোনাজাতে আমিন আমিন বলে সায় জানানো, সব কিছুতে সহযোগী বোবার অভিনয় করায় অভ্যস্ত আমি। শুধু বাড়িঅলার মরহুম পিতা ও জাতির পিতার আত্মার শান্তি নয়, কবরে শায়িত নবীজির সকল উম্মতের আত্মার মাগফেরাত প্রার্থনা করেন বলে উপস্থিত ভিড়ের আমেন কণ্ঠ বেশ সরব হয়ে ওঠে, হয়তো-বা নিজ নিজ কবরবাসী স্বজনদের কথা ভেবেই। আমার পাশে বসা এক শিশু কবরবাসীদের শান্তির তোয়াক্কা না করে নিজেদের আনন্দ খুঁজতে হাসিমুখে বড়দের দেখছে, চোখাচোখি হলে আমারও হাসি পায়।

খাওয়ার টেবিলে পরিচিতসহ ভাড়াটিয়া ছাড়াও নিচতলার ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ হয়। বাড়িঅলা স্বয়ং মেহেমানদারী করতে লাঠিহাতে সব টেবিলে গিয়ে মেহেমানদের খাওয়া তদারক করেন। আমাদের টেবিলে এসেও জিজ্ঞেস করেন, পোলাপানগো সবাই আনছেন তো? ওরা মায়ের লগে বইছে। সোম্বাদিক সাব, আপনি কেবল নতুন মেহমান, এই ফ্ল্যাট বিল্ডিং করার পর থাইকাই প্রতি বছরই হাজির হন, এমন ভাড়াটিয়াও আছে কয়জন।

কুদ্দুস হাজি অন্য টেবিলে যাওয়ার পর ভাড়াটিয়ারা আমাকে খাওয়ার তৃপ্তির সঙ্গে বাড়িঅলার গুণগান করে। আগে খিচুড়িই হতো এই অনুষ্ঠানে, কিন্তু এই মহল্লার রাস্তাতেও শোকদিবসের অনুষ্ঠানে গরিবদের খিচুড়ি খাওয়ার প্রোগ্রাম শুরু করার পর থেকে তিনি খিচুড়ির বদলে বিরিয়ানি-রোস্ট-মাংসের ব্যবস্থা শুরু করেছেন। 
অন্য আরেকজন সতর্ক করেন— আরে ভাই এর মধ্যে রাজনীতি আনেন না তো। আমি জানতে চাই, শহীদ মাতবরের তো বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে আছে শুনেছিলাম, ওনারা পরিবার নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছেন নিশ্চয়। অভিজ্ঞ একজন মুখে রহস্যের চাপা হাসি  নিয়ে বলে, একজনও আসে না। বাপে বড় ছেলেকে এ জমি দোকান লিখে দিয়েছে বলে ভাইয়ের সঙ্গে তাদের ঝগড়া-বিবাদ এ দুনিয়ায় মিমাংসা হবে না। ... এক ভাইয়ের ধারণা, বাপ লিখে দেয়নি, ভুয়া দলিলে লিখে নিয়ে বাপকে নিজেই হত্যা করিয়েছে শহীদ হাজি। কোর্টে মামলাও দিয়েছে। একজন বলে, বছর দু’য়েক আগে ওনার এক বোনের ছেলে এই অনুষ্ঠানে এসে মামাকে যেভাবে অপমান করেছে তাতে পুরো ভোজসভা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল প্রায়। ভাগ্নে নাকি চিৎকার করে বলেছিল, ওই কবরে আমার নানার লাশ নাই, নিজেই খুন কইরা তুই গুম করছস, তার বেবাক সম্পত্তি লেইখা নিয়ে আমার মায়েরেও ঠকাইছস, তোর লাশও আমি কবর থাইকা তুইলা কুত্তাশিয়াল দিয়া খাওয়ামু। 

এই ঘটনার পর থেকে সতর্ক হয়েছে বাড়িঅলা, তার শত্রুপক্ষ ভাইবোন ও স্বজনরা যাতে অনুষ্ঠান পণ্ড করতে না পারে, তার জন্য গেটেও পাহারাদার হিসেবে বাড়িঅলার ছেলেরা ব্যবস্থা করেছে। মাগনা খাওয়ার তৃপ্তির সঙ্গে এসব গালগল্প আমিও হয়তো বেশ উপভোগ করতে পারতাম, কিন্তু এ বাড়িতে থেকে পরের বছরের ভোজে শরিক হতে পারব কি না এই উদ্বেগ অনিশ্চয়তা ভিতরে সারাক্ষণ ধুকপুক করে। প্রথম শর্ত তার পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে উপস্থিত হওয়ার শর্তটি সানন্দে পালন করতে পারব, কিন্তু মাসের দশ তারিখের মধ্যে ভাড়া শোধ করব কীভাবে?

অনুষ্ঠানের পরদিন নিজেই যাই বাড়িঅলার ফ্ল্যাটে। চাকরি হারানোর খবরটা চেপে রাখলেও, আমার লেখাসহ কাগজের একটা কপি দিতে না পারার কৈফিয়ত অন্তত দেওয়া দরকার। কিন্তু জাতীয় শোক দিবসের হালচাল জানায় বৃদ্ধ বিন্দুমাত্র কৌতূহল দেখায় না। বরং নিজের পিতার অনুষ্ঠানে শরিক হওয়ায় আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চায়। ভালো খেয়ে বদনাম করব, এতটা নিমকহারাম হতে পারে কোনো বিবেকবান? প্রশংসা শুনে বৃদ্ধ খুশি হয়ে বলে, এইবার আমার আব্বাজানরে লইয়াও পেপারে একটা বড় খবর লেইখা দেন।
চাকরি হারানোর দুঃসংবাদটা এভাবে পরিবেশন করি— ইয়ে আঙ্কেল, একটা খারাপ খবর আছে। আমি আপনাকে আমার লেখাসহ আমাদের পেপারের একটা কপি দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার লেখাটা ছাপাই হয়নি। কারণ কাগজের অবস্থা বেশ খারাপ, মালিক কোন দিন যে কাগজই বন্ধ করে দেয়! আমি একটা ভালো পেপারে জয়েন করার চেষ্টা করছি, তখন আপনার পিতার মৃত্যুবর্ষিকী নিয়েও একটা লেখার কথা ভাবব অবশ্যই।

আপনার মতো পেপারের সোম্বাদিকদের অবস্থা ভালো না, জানি আমি। পেপারের কদর তো আর আগের মতো নাই। আমিও তো বাসায় কোনো পেপার রাহি না। টিভি চ্যানেলেই চব্বিশ ঘণ্টায় কত খবর! তাবাদে সবার হাতের মোবাইলেই কত খবর ছবি আহে। তারওপর ফেসবুক না কি একখান মোবাইল-পেপার হইছে, সেই পেপারে সবাই ছবি ছাইপা খবর ছাপাইতে পারে। আমার পোলা-নাতিরাও কাইলকের অনুষ্ঠানের খবর ছবি ছাইপা দিছে। আমি তো আপনাগো মতো ওইরকম ফোন চালাইতে পারি না, নাতি আমারে দেখায় দিয়া গেছে। খাড়ান, আমি আমার নাতিরে ফোন কইরা আমার আব্বাজানের ফটো আর কাইলকের অনুষ্ঠানের কিছু ফটো আপনার মোবাইলেও দিতে কই।

বৃদ্ধ পুরোনো মডেলের ছোট ফোন থেকে নাতিকে ফোন করে, আমার পরিচয় দিয়ে আমাকে ধরিয়ে দেয়। আমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার জানিয়ে দিয়ে তাকে সব পাঠাতে বলি। বৃদ্ধকে আশ্বস্ত করি— শুধু আপনার ছেলেবউ বা নাতি-নাতনি না, আমার ছেলেমেয়েরাও বোধহয় কালকের ভোজের ছবি তুলে তাদের ফেসবুকে দিয়েছে।
পোলাপান গো লেখা, আর আপনার মতো সোম্বাদিকের লেখা তো এক জিনিস না। এত টাকা খরচা কইরা আব্বাজানের মৃত্যুবার্ষিকী করি, কিন্তু আমার আপনা জ্ঞাতিগোষ্ঠীরাও কতো টিটকারি দেয়। আপনি আপাতত ফেসবুকের মোবাইল পেপারেই বড় কইরা লেখেন। আপনার লেখা পইড়া য্যান হিংসাচোদাগো একটু হঁশ ফেরে। আপনার লেখাটা নাতিরা দেশে-বিদেশে শত্রু-মিত্র সবাইরে পড়াইতে পারব। হে কায়দা ওরা জানে!

কী জবাব দেব আমি? শহীদ মাতবর লজের উন্নয়নের সঙ্গে কার কতটা বঞ্চনা জড়িয়ে আছে, মৃত্যুবার্ষিকীর লোক দেখানো উৎসব-আনন্দের আড়ালে কার কতোটা ঈর্ষা-ঘৃণা এবং কেনই-বা তা আজো অনির্বাণ জানি না। ফেসবুকের লেখায় প্রকৃত ইতিহাস জানারও দায় থাকে না।
আমার ফেসবুকেও বড় করে লিখতে পারব অবশ্যই। কিন্তু আর একটা কথা বলা দরকার আঙ্কেল, পেপারের চাকরির অবস্থা তো বোঝেনই, ভাড়াটা শর্ত অনুয়ায়ী দশ তারিখের মধ্যে যদি দিতে না পারি...
ভাড়াটিয়ারা আমার পরিবারের লোকের মতো। দুই/এক মাস শর্ত ভাইঙা নিয়মিত ভাড়া না দিলে কি তাড়ায় দিমু? এতটা অমানুষ ভাবছেন আমারে!
আমার মুখে কৃতজ্ঞতার হাসিটা তেমন প্রশস্ত হতে পারে না। কারণ সহসা এক আত্মজিজ্ঞাসায় ভিতরে ছুরিবিদ্ধ হই যেন। মালিক-সম্পাদককে খুশি রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে যদি লেখাটা লিখতে পারতাম, চাকরিটা যেত আমার?

তারা//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়