ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পয়লা বৈশাখ : ঐতিহ্য ধরে রেখেছে পুরান ঢাকা

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ১২ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পয়লা বৈশাখ : ঐতিহ্য ধরে রেখেছে পুরান ঢাকা

আসাদ আল মাহমুদ : বাংলা নতুন বছর ১৪২৬ শুরু হবে রোববার। নতুন বছরকে বরণ করতে বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। এ দিনটিকে একটু আলাদাভাবে বরণ করেন রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পয়লা বৈশাখ উদযাপনে পুরান ঢাকার বাংলা বাজার, লক্ষিবাজার, মৌলভীবাজার, বংশাল, আরমানীটোলা, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, বেগমবাজার, ঊর্দু রোড, চকবাজার, মোঘলটুলিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রত্যেক মহল্লায় বাসিন্দারা সকালে আলাদা আলাদা র‌্যালি বের করেন। এছাড়া বাঘ, মাছ, ময়ূর, বক, দোয়েল, কোয়েলসহ গ্রামবাংলার বিভিন্ন পশুপাখির নৈসর্গিক ছবিতে বিভিন্ন অলিগলি সাজানো হয়।

পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও মহল্লাবাসির উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পিঠা-পুলি, ইলিশ-পান্তাসহ পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে পুরান ঢাকার বিভিন্ন গলিতে বসে দোকান। এছাড়া মহল্লার বাসিন্দারা বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে পান্তা-ইলিশ, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এছাড়া সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মহল্লাবাসী ও গরিব-এতিমদের মধ্যে পান্তা-ইলিশসহ বিভিন্ন খাবার বিতরণ করা হয়।

বংশাল পুকুর পাড়ের বাসিন্দা সোহানুর রহমান জয়ের সঙ্গে কথা হয়। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এককালে রাজধানীর ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ছিল পুরান ঢাকা। শুধু বাংলারই নয়, উপমহাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পুরান ঢাকা। ঢাকাইয়াদের (পুরান ঢাকার বাসিন্দা) উৎসবগুলো কপি করে নতুন ঢাকার বাসিন্দারা শুরু করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের দিন পুরান ঢাকায় বিভিন্ন মহল্লায় র‌্যালি বের হবে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন একে অন্যের বাড়ি দাওয়াত খেতে যাবে। এদিন ইলিশ-পান্তাসহ বিভিন্ন ধরণের মজাদার পিঠা তৈরি করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সকালে সবাই একসঙ্গে গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো, এসো...’। দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আর রাতে গানের প্রতিযোগিতা হবে। যারা সুন্দর গান গাইবেন তাদের পঞ্চায়েত কমিটির পক্ষ থেকে পুরস্কার দেওয়া হবে।’

সিক্কাটুলির বাসিন্দা মাসুদুর রহমান কিসুল’র সঙ্গে কথা হয়। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পয়লা  বৈশাখে পুরান ঢাকার বিভিন্ন গলিতে মিষ্টিজাতীয় খাবারের দোকান বসে। বাতাসা, খই, চিড়া, মুড়ির মোয়া, কদমাসহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি করা হয়। আর বরফ দেওয়া ঠাণ্ডা শরবত বিক্রি করা হয়। এছাড়া পয়লা বৈশাখে ঘরে ঘরে বানানো হয় যবের ছাতু আর নানা রকমের পিঠা।’

তিনি আরো বলেন, ‘পয়লা বৈশাখে বংশাল পুকুর পাড়ে প্রতি বছরের মতো মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিবছরই মেলায় ছোটদের টমটম গাড়ি, বাঁশি, মাটির হাঁড়ি-পাতিল ও ব্যাংক, মাটির ঘোড়া, মাছ, টিনের তৈরি জাহাজ, কাঁচের তৈরি খেলনা, নানা রংয়ের কাচের চুঁড়িসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়, এবারও হবে বলে আশা করা যায়।’

পুরান ঢাকার মানুষ ভোজনরসিক জানিয়ে নুর হোসন নিরব  রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ইলিশ-পান্তার পাশাপাশি জনপ্রিয় বেশ কিছু খাবারের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে পোলাও-বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন ধরনের নাশতা। বাকরখানির সঙ্গে ঝাল মাংস, ফিরনি ও মিষ্টির আয়োজন রাখা হয়। লুচি-বুটের ডাল, মুড়ি-মোয়া, জিলাপি, কদমা ও বাতাসা খাওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পুরান ঢাকার হোটেলগুলোতে বিভিন্ন খাবার তৈরি করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে  আসা ভোজনরসিক মানুষদের চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে তৈরি করা হয়। পুরান ঢাকার খাবারের হোটেলগুলোতে সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের ভিড় জমে।’

বৈশাখের প্রথম দিনে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে লাচ্ছি, দই ও লেবুর শরবত আর ফালুদা তৈরি করা হয় বলে জানান তিনি।

কথা হয় বংশালের বাসিন্দা আলিমুজ্জামান সাব্বিরের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পয়লা বৈশাখে সকালে উঠে পুরান ঢাকার রীতি অনুযায়ী র‌্যালি বের করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন পশুপাখির ছবি মহল্লার অলিতে-গলিতে লাগানো হয়। র‌্যালি শেষে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে পান্তা-ইলিশ, মিষ্টি, দই ও চিড়াসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়া হয়। পান্তা-ইলিশ পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। এরপর দলবেঁধে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাওয়া হয় এবং সারাদিন বেড়ানো হয়।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ এপ্রিল ২০১৯/আসাদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়