ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পদ্মার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো. জামাল মল্লিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৭, ৯ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পদ্মার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের  জাজিরা ও  নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বর্ষার শুরুতেই পদ্মা নদীতে স্রোত  বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গত এক বছরে পদ্মায় উজার হয়েছে ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাজার হাজার ঘড়বাড়িসহ ফসলি জমি। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আরো ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দুটি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন। এতে পাল্টে যাচ্ছে শরীয়তপুরের মানচিত্র।

গত এক সপ্তাহে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ সহায় সম্বল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।

সরেজমিন গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছরই বর্ষার শুরুতে পদ্মা নদীর করাল গ্রাসে শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। এতে করে হাজার হাজার পরিবার বাপ-দাদার ভিটে মাটি ও সহায় সম্বল হারিয়ে বিভিন্ন উঁচু জমি অথবা রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেন।

এ ছাড়াও কেউ কেউ আবার এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়েছেন। প্রতিনিয়ত ভাঙনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতি বছরই জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কিছু অংশ। তবে ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর, ঘড়িসার ও কেদারপুর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি, শেহের আলী মাদবর কান্দি, চেরাগ আলী মাদবর কান্দি, শাদুর বাজার, ওয়াপদা বাজার, চন্ডিপুর পাঁচগাও। জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর, বিলাসপুর এবং বড় কান্দি ইউনিয়নের কলমিরচর বেপারী কান্দি, ইয়াকুব বেপারী কান্দি, আইন উদ্দিন বেপারী কান্দি, মমিন খালাসী কান্দি, মাদবর কান্দি, ইউসুফ বেপারী কান্দি, কাজিয়ারচরের প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘর বাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা পাকা রাস্তা, সেতু ও স্কুল নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

অন্যদিকে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে জগৎ জননী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালু বেপারী সরকারি প্রাথকি বিদ্যালয়, সাহেদ আলী মাদবর কান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালাই মাদবরেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথালিয়া কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরভাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কাইয়ুম খাঁর বাজারসহ শত শত ঘরবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট ও পাকা স্থাপনা।

জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদার বলেন, অব্যাহত পদ্মার ভাঙনে গত ১৫ দিনে অন্তত চার শতাধিক পরিবার ভিটেমাটিসহ সব কিছু হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য এগিয়ে এসেছেন। সরকারের কাছে এলাকার অসহায় মানুষগুলোর জন্য সাহায্যের দাবি করছি।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, এ এলাকাটি ভাঙনপ্রবণ। প্রতি বছরই এখানে পদ্মা নদীর ভাঙনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাজিরার কুলেরচর থেকে নড়িয়ার সুরেশ্বর লঞ্চঘাট পর্যন্ত আট হাজার ৯শ’ মিটার বাঁধ দেওয়া হবে। ১২৯৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব প্ররিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া আছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে এ এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ভাঙনের খবর শুনেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে তা স্থানান্তরেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 

আরো পড়ুন


রাইজিংবিডি/শরীয়তপুর/৯ জুলাই ২০১৭/মো. জামাল মল্লিক/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ