ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘খোয়াই’ ভাল নেই

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘খোয়াই’ ভাল নেই

শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খোয়াই নদীর জায়গা দখল করে প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠা স্থাপনা

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা: হবিগঞ্জের নদী ‘খোয়াই’। এই জেলার মানুষের সুখ-দুঃখসহ হাজারো গল্পে জড়ানো ‘খোয়াই’ আজ ভাল নেই। তাই ‘খোয়াই’ নদীকে ঘিরে নেয়া হয়েছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা।

এক সময় প্রচণ্ড খরস্রোতা ‘খোয়াই’ হবিগঞ্জের দুঃখ হিসেবে পরিগণিত হতো। সঙ্গত কারণে খোয়াই নদীকে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ১৯৭৮-৭৯ সালে শহর থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, শহর রক্ষার জন্য সত্তর দশকের শেষে মাছুলিয়া-রামপুর ও খোয়াই মুখ-গরুর বাজার পর্যন্ত দুই দফায় ৫ কিলোমিটার লুপ কাটিংয়ের মাধ্যমে খোয়াই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়।

এরপর থেকে নদীটির শহরের অংশ পরিচিত হতে থাকে ‘পুরাতন খোয়াই নদী’নামে। পুরাতন খোয়াইয়ের দুই পাড়ে দৃষ্টি পড়ে দখলদারদের।

 

বর্ষায় টইটম্বুর খোয়াই

 

জেলা প্রশাসনের এক হিসেবে দেখা গেছে, শহরের মাছুলিয়া থেকে হরিপুর পর্যন্ত পুরাতন খোয়াই নদীর দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার। আর অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ৫ শতাধিক। দখলদারের অবৈধ দখল করা জমির পরিমাণ প্রায় দুই একর। অথচ কয়েক বছর আগেও যে নদীতে পানি ছিল সেখানের বর্তমান চিত্র দেখলে মনে হবে কোনো সময় ওই জায়গায় নদীর কোন চিহ্ন ছিল না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরাতন খোয়াই নদীর দুইপাশ দখল করে বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যাপক তোড়জোর নিয়ে মাঠে নামলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযানের সময় নদীর পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা কিছু কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও মাস ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও দখল হয়ে যায় ওই স্থানগুলো।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ মাসের যে কোন দিন থেকেই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। এ লক্ষ্যে তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। দেখা যায় পুরাতন খোয়াই নদীর অধিকাংশ জায়গায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নির্মাণ করা হয়েছে চলাচলের রাস্তা। সব কিছুই তালিকায় লিপিবদ্ধ করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তালিকা প্রায় শেষপর্যায়ে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ জানান, সব জটিলতা কাটিয়ে এ মাসেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব। উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার পূর্বে সংবাদ সম্মেলন করে উচ্ছেদের সার্বিক দিক সাংবাদিকদের জানানো হবে।

 

উচ্ছেদের আগে নদী দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক

 

উচ্ছেদ পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে জেলা প্রশাসক জানান, শহরের পুরাতন খোয়াই নদীর আড়াই কিলোমিটার এলাকাকে নান্দনিক করাসহ ‘খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প’বাস্তবায়নে ১ হাজার ৮৭২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল, এখন তা সংশোধিত হয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেলে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপা’র হবিগঞ্জের সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘পুরাতন খোয়াই নদীটি একসময় হবিগঞ্জবাসীর ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় নদীটি হারিয়ে যেতে বসেছে। দখল হয়ে গেছে নদীর বেশির ভাগ অংশ। তাই এখনই নদীটি দখলমুক্ত করতে না পারলে ভবিষ্যতে হয়তো পুরো নদীটিই দখল হয়ে যাবে।’ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন হবিগঞ্জের ফেসবুক আইডিতে উল্লেখ করা হয়, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ দেড় বছরের প্রচেষ্টার ফল পেতে যাচ্ছে হবিগঞ্জবাসী! সমগ্র হবিগঞ্জ জেলাকে আরেকটু সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে চলেছে জেলা প্রশাসন।

পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- পুরাতন খোয়াই সহ হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে প্রবহমান খোয়াই নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং, বাঁধ নির্মাণ, পুরাতন খোয়াই নদীর সকল অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদীর দু ধারে প্রশস্ত ওয়াকওয়ে, বৃক্ষ রোপণ ও সবুজায়ন, পাঁচটি স্টিলের ব্রিজ নির্মাণ, ওয়াটার পিউরিফিকেশন পাম্প স্থাপন, পর্যটকদের জন্য বোটিং ব্যবস্থা, এলইডি সড়ক বাতি স্থাপন, শিশুদের জন্য কিডস কর্ণার।

এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে হবিগঞ্জে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে বলে অনেকে মতপ্রকাশ করেছেন।  অনন্য এ উদ্যোগের জন্য জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের প্রতি অনেকেই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। সেই সাথে গোটা প্রক্রিয়ায় সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।


রাইজিংবিডি/ হবিগঞ্জ/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মোঃ মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ