ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৩০ বছর পর শিকলমুক্ত হলেন রতন মিয়া

জেলা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৩০ বছর পর শিকলমুক্ত হলেন রতন মিয়া

৩০ বছর ধরে ঘরের মধ্যে শিকলবন্দি রতন মিয়াকে (৫৫) শিকলমুক্ত করা হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মঙ্গলবার দুপুরে তাকে শিকলমুক্ত করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যৌবনের পুরো সময় অন্ধকার ঘরে কাটানোর পর মঙ্গলবার মুক্ত আকাশ দেখার সুযোগ মেলে রতনের।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জমির মো. হাসিবুস সাত্তার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুহুল আমিন ও পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাহাব উদ্দিন অ্যাম্বুলেন্সসহ সাটিয়াদী গ্রামে রতনের বাড়ি যান। সেখানে একটি ঘরের বারান্দার অন্ধকার কক্ষে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জমির মো. হাসিবুস সাত্তার রাইজিংবিডিকে বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় রতনের চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তার শরীরে রক্তশূন্যতা আছে। তিনি অপুষ্টিতে ভুগছেন। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে সুস্থ করে তোলা হবে।

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান রাইজিংবিডিকে জানান, মানবাধিকারের লঙ্ঘন বিবেচনায় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে রতনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করি। একই সঙ্গে রতন মিয়ার চিকিৎসায় অবহেলার রহস্যও খুঁজে বের করা হবে। রতন মিয়াকে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২নং কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে দু’জন গ্রাম পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে প্রথমে সুস্থ করে তোলা চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপর এমন ঘটনা কেন ঘটলো তা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৩০ বছর আগে পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ ষাটিয়াদী গ্রামের হাজী বাড়ীর মৃত আবদুল মোমেনের ২৫ বছর বয়সী অবিবাহিত মেঝো ছেলে রতন মিয়া গরু বাঁধার খুঁটি দিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তারপর থেকেই কোনো প্রকার চিকিৎসা না করিয়ে বড়ভাই ও ছোট ভাই তাকে শিকলবন্দি করে রাখেন। পরবর্তীতে ছোট ভাই মারা যাওয়ায় বড় ভাই পৈতৃক সহায়-সম্পত্তি এককভাবে ভোগ করছেন। বসত ঘরের বারান্দায় একটি ছোট্ট কক্ষে রতনকে শিকলবন্দি করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে রাখা হত। এ ছোট্ট ঘরের ভেতর একটি পাকা খাম তৈরি করে সে খামের সঙ্গে তার পায়ে শেকল পড়িয়ে রাখা হয়। আর এ নির্জন এবং অস্বাস্থ্যকর তালাবদ্ধ ছোট্ট ঘরেই কেটেছে তার জীবনের মূল্যবান ৩০ বছর।


কিশোরগঞ্জ/রুমন চক্রবর্তী/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ