ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

সংকটের বেড়াজালে লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরী

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২০, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সংকটের বেড়াজালে লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরী

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ২২ বছর আগে গড়ে ওঠে লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরী। মানবসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পনগরীটি বর্তমানে সংকটের বেড়াজালে বন্দি।

পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরী। সম্ভাবনা থাকা সত্বেও লোকসানে মুখে এখন বন্ধ হওয়ার পথে কারখানাগুলো। এজন্য বিসিক কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ না থাকায় সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না।  

বিসিক সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর শহরের বাঞ্চানগর এলাকায় ১৬.০৭ একর জমিতে ১৯৯৭ সালে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। ২০০০ সাল থেকে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। অফিস ও ড্রেনেজ ব‌্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো ৬.২৫ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়। বাকি ৯.৯১ একর ভূমিতে তৈরি করা হয় তিন ক্যাটাগরির ১০০টি প্লট। ৬১টি (প্রকল্প) ইউনিটের বিপরীতে এসব প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৩০টি কারখানা চালু আছে। চারটি উৎপাদনজনিত কারণে বন্ধ রয়েছে। বাকি ২৭টির মধ্যে অনেক ইউনিট সময়মতো চালু না হওয়ায় তা বাতিল করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বিসিকের ল্যান্ড এলোটমেন্ট কমিটি (এলএসি)।

আরো জানা যায়, শিল্পনগরীতে যেসব কারখানা গড়ে উঠেছে, সেগুলোর মধ্যে বেকারি, অয়েল মিল, জৈব সারের কারখানা, সয়াবিন প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, অটো রাইস মিল, মবিল রি-প্যাকিং ফ্যাক্টরিসহ চালু রয়েছে মাত্র ১৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বেকারি কারখানা আছে ১২টি। এসব কারখানায় বছরে প্রায় শত শত কোটি টাকার পণ‌্য উৎপাদন হলেও, বর্তমানে যোগাযোগ ও ড্রেনেজ সমস্যার কারণে লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

বিসিক শিল্পনগরীর সুলতানিয়া বেকারির আবুল কাশেমসহ কয়েকজন শিল্প উদ্যোগক্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, এটি নামেই শিল্পনগরী। এখানকার রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের সুবিধার অভাবে উৎপাদন খরচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এজন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে না পেরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পথে। সমস্যাগুলো সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় নতুন উদ্যোক্তারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছেন না।

তিনি আরো বলেন, বিসিক এলাকায় সীমানা প্রাচীর নেই। ল্যাম্পপোস্টগুলোতে নেই বাতি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এখানকার শ্রমিকরা। বিসিক কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর সার্ভিস চার্জ নিলেও সে অনুপাতে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ সময়েও লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরীতে গড়ে ওঠেনি উল্লেখযোগ্য কারখানা। বিসিকের প্রবেশপথেই কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। ভিতরে সাতটি রাস্তার প্রতিটিরই বেহাল দশা। সড়কের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বর্ষাকালে সেখানে পানি জমলে যেন পুকুরে পরিণত হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই হাটুসমান পানি জমে। অনুপযোগী যোগাযোগ ব্যবস্থায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় কারখানার শ্রমিকসহ সবাইকে। যাতায়াত করতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে মালবাহী গাড়ির চেসিসসহ অন‌্যান‌্য যন্ত্রাংশ। পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো খুবই সরু। বিভিন্ন স্থানে কারখানার ময়লা ও বর্জ‌্য পদার্থ নিষ্কাশন না হয়ে জমে আছে। এ ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে পুরো শিল্পনগরী দুর্গন্ধময় নর্দমায় পরিণত হয়ে আছে।

বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ রহিম রাইজিংবিডিকে বলেন, যোগাযোগ ও ড্রেনেজ সমস্যা তো আছেই, পাশাপাশি এখানকার ল্যামপোস্টগুলোতে নেই লাইট। রাতের বেলায় অন্ধকারে চলাচল করতে হয়। এখানকার নানা সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. দেলোয়ার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, বিসিকে যে সমস্যা, সে তুলনায় বরাদ্দ খুবই সামান্য। তাই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। বেহাল সড়ক সংস্কারের জন্য ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং ড্রেন ও কালভার্টের জন্য ৭৬ লাখ টাকার চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পেলে সমস্যা সমাধান করা হবে।

এ বিষযে বিসিক প্লট বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল রাইজিংবিডিকে বলেন, এখানকার সমস্যাগুলো সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া, যেসব উদ্যোক্তা প্লট বরাদ্দ নিয়ে উৎপাদনে যাচ্ছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


লক্ষ্মীপুর/ফরহাদ হোসেন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়