ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভাষাসৈনিক আজ ভাষাহীন, অসহায়

মাহমুদুল হাসান মিলন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাষাসৈনিক আজ ভাষাহীন, অসহায়

ভাষাসৈনিক খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ

খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ (৮৬) ভাষাসৈনিক। ৬৮ বছর আগে ভাষার জন‌্য লড়াই করেছেন তিনি। অথচ আজ তিনি ভাষাহীন। পরিষ্কারভাবে কথা বলতে পারেন না। কাউকে দেখলে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন আর হাউমাউ করে কাঁদেন। একসময়ের সংসদ সদস‌্য ও পৌরসভার চেয়ারম‌্যান আজ দারিদ্র‌্যের কষাঘাতে জর্জরিত ও অসহায়।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর স্ট্রোক করেন। তার ডান হাত ও পা অবশ হয়ে যায়। হার্টের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন তিনি। এখন তার দিন কাটছে বিছানায় শুয়ে শুয়ে।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় বড় অসহায় খোন্দকার মালেক। সারাজীবন সততা আর আদর্শ ধরে রেখে মানুষের জন্য রাজনীতি করা এই নেতার জীবন কাটছে এখন চরম দারিদ্র‌্যের মধ‌্যে। পরিবারের বাইরে আর খবর নেয়ার কেউ নেই। অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন খোন্দকার মালেক। ফেরারি আসামি হয়ে ছাত্রত্ব হারান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে তিনি প্রতিষ্ঠাকালেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অল্প বয়সে মুক্তাগাছা আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন খোন্দকার মালেক। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ছিল তার নিয়মিত যাতায়াত। বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে ‘আমার প্রিয় মালেক’ বলে সম্বোধন করতেন। তার হাত ধরে গড়ে উঠেছেন অনেক নেতা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোস্তাক ও জিয়াউর রহমানের আমলে জেলে যান। এছাড়াও রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্যবার জেল খাটেন তিনি। একবার মুক্তাগাছা পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। মানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি বিলিয়ে দেন।

সারা জীবন মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন খোন্দকার মালেক। এখন জীবনের শেষ সময়ে হয়ে পড়েছেন অসহায়। সন্তান ও পরিবারের কথা ভাবেননি। বেকার ছেলেদেরও সামর্থ্য নেই বাবার চিকিৎসা করানোর। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় তার খাওয়া-পরা ও চিকিৎসা চলছে। রাজনৈতিক মাঠে সরব থাকা খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহর আজ বড় দুর্দিন।

খোন্দকার মালেকের সার্বক্ষণিক সঙ্গী স্ত্রী সুরাইয়া মালেক। তিনি বলেন, ব্যাংকে জমানো টাকা নেই। অর্থাভাবে তার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।

ভাষাসৈনিক খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহর বাড়ি

 

মুক্তাগাছা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল কাশেম জানান, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল মালেক সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। নিজের ও পরিবারের কথা ভাবেননি। শেষ জীবনে এসে চিকিৎসা করানোর টাকাও নেই তার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আব্দুল মালেকের চিকিৎসায় এগিয়ে আসবে, এটাই প্রত্যাশা করি।

সাবেক ছাত্রনেতা অ‌্যাডভোকেট ইদ্রিস আলী আকন্দ বলেন, একদিন যার ডাকে লাখ লাখ তরুণ এগিয়ে আসত, আজ কেউ তার খবর নেয় না।

মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্না সরকার বলেন, ভাষাসৈনিক খোন্দকার মালেককে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি হুইলচেয়ার দেয়া হয়েছে। তিনি আর্থিক সংকটে আছেন। আমরা চেষ্টা করছি তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

 

ময়মনসিংহ/মিলন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়