ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাহাড়ের ঝাড়ু ফুল বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে

বিজয় ধর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাহাড়ের ঝাড়ু ফুল বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ঝাড়ু ফুল দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রাকৃতিক এ ঝাড়ু বিক্রি করে আয়-রোজগারের সুযোগ তৈরি হয়েছে পাহাড়ের বহু পরিবারের। তবে, বর্তমানে একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তির নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে ঝাড়ু বিক্রেতারা হতাশ।

এদিকে, দেশজুড়ে রয়েছে কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি ঝাড়ু ফুলের কদর। সব কিছুতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও কদর কমেনি ঝাড়ু ফুলের। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ওই ফুল ঝাড়ুর আবাদ করা হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

সাধারণত বাসা-বাড়িতে, শহরের অফিস-আদালতে ঘর ঝাড়ু দিতে এটি ব্যবহৃত হয়। এ ঝাড়ুগুলো দেখতে চমৎকার এবং ব্যবহারে দ্রুত ময়লা পরিষ্কার ও বহনে সুবিধা বেশি বলে এটি শহরের প্রত্যেক বাসায় না থাকলেই নয়। তাছাড়া, এ ঝাড়ু নষ্ট হয় কম। তাই এটি সাশ্রয়ী। পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত এসব ফুল ঝাড়ু কেটে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসে বিক্রেতারা। এরপর বাজার থেকে স্থানীয় গ্রামবাসী ব্যবহারের জন্য সেগুলো কিনে নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজারগুলো থেকে ফুল ঝাড়ু কিনে নিচ্ছেন, ইতোমধ্যে পাহাড় থেকে ঝাড়ু তৈরি করার জন্য ঝাড়ু ফুল কাটা শুরু হয়েছে।

এদিকে, গহীন অরণ্য থেকে এ ফুল সংগ্রহ করার আনন্দে মেতে উঠেছে সংগ্রহকারীরা। এ ফুল দিয়ে সুন্দর ও সহজভাবে তৈরি ব্যবহার যোগ্য ঝাড়ু দেশের বড় বড় শহরে বিক্রির জন্য মজুদ করা হচ্ছে।

উপজেলার কাপ্তাইয়ে বড়ইছড়ি বাজার, কাপ্তাই জেটিঘাট, চিৎমরম বাজার, রাইখালী মগ বাজার, রাইখালী কারিগর পাড়া বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ঝাড়ু ফুল শুকাতে ও বাজারের দিনে বিক্রি করতে দেখা যায়। এ কাজে কর্মরত খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মহিলা-পুরুষ সবাই ফুল কাটতে ও শুকাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

গুণগত মান ভেদে কেটে আঁটি হিসেবে এসব ফুল বিক্রি করা হয়। তবে, এগুলো কাটা এখন আর আগের মতো সহজলভ্য নয়। কয়েক বছর আগেও পাহাড়ি এলাকায় রাস্তার ধারে ফুল পাওয়া যেত। এখন অনেক ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ফুল কাটতে হয়। ফলে এখন দামও একটু বেশি।

প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ করা যায়। গ্রামের লোকজন ওই সময়েই সারা বছরের জন্য এগুলো কিনে নেয়। স্থানীয়দের মতে, এসব ফুল ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যেই বেশি উৎপাদিত হয়।

জানা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ি এলাকায় এ ফুল উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিগত কয়েক বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে কিংবা বিদেশে রপ্তানি কমে এসেছে। বিনি জাতের ফুল সবচেয়ে ভালো। ফলে বিনি জাতের ফুলের চাহিদা ও মূল্য অনেকটা বেশি।

এদিকে, রাইখালী বাজারের ঝাড়ু বিক্রেতা চাউচিংয়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, গহীন পাহাড়ের টিলায় টিলায় এসব ফুল গাছ দেখা যায়। পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে এ ফুল বেশি জন্ম নেয়।

কাপ্তাইয়ে বিভিন্ন এলাকায় এসব ঝাড়ু ফুল বাড়ি বাড়ি নিয়ে যায় মারমা নারীরা। একটি স্টিক এক টাকা করে একশত স্টিক বিক্রি হয় ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ঝাড়ু ফুল পাহাড়ের বাইরে বেশ জনপ্রিয়। এটা থেকে ফরেস্ট বিভাগ বছরে ২০-২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আয় করে থাকে। আগের তুলনায় বর্তমানে উলু ঝাড়ু ফুলের উৎপাদন কমে গেছে।’


রাঙামাটি/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়