ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আম্ফানে আতঙ্কিত বরগুনা উপকূল

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ১৯ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আম্ফানে আতঙ্কিত বরগুনা উপকূল

করোনা মহামারির মধ্যেই ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এমন দুর্যোগে উপকূলীয় নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় সূত্রের তথ্যমতে, জেলার ২২টি পোল্ডারে ৯৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব বাঁধের নিকটবর্তী বাসিন্দারা ঝড়ের পূর্বাভাসেই আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

বরগুনা সদরের নলটোনা এলাকার বাসিন্দা সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, ‘বিষখালীর ভাঙনে ও বুলবুলের তান্ডবে (২০১৯ এর নভেম্বর) নলটোনা এলাকার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নড়বড়ে হয়ে যায়। অনেক ধর্ণা ধরে দুই কিলোমিটারের সংস্কার সম্ভব হয়েছে। কিন্ত বাকি এলাকা এখনো অরক্ষিত। পাথরঘাটার কালমেঘা ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত কালমেঘা বাজারের উভয় পাশের এক কিলোমিটার এলাকায় ব্লক দিয়ে স্থায়ী সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্ত বাজারের দক্ষিণ দিকের প্রায় এক কিলোমিটার এখনো অরক্ষিত। একই অবস্থা বাকি এলাকাগুলোরও। বিশেষ করে সদরের নলটোনা, এম বালিয়াতলি, বদরখালি ও বুড়িরচর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা, আতমলী তালতলি বামনা ও বেতাগী উপজেলার নদী তীরবর্তি বাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা সবসময়ই আতংকে থাকেন।'

তথ্যমতে, জেলার সাড়ে ৯শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, ফণীসহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় সাড়ে পাঁচ’শ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেসব বাঁধ এখনও সম্পূর্ণ মেরামত হয়নি। এসব বাঁধ সম্পূর্ণ মেরামত না হতেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় আম্ফানের আগমনের বার্তায়  আতঙ্কে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকার লক্ষাধিক বাসিন্দা।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার হোসেন বলেন, বাঁধও মেরামত করা জরুরি আমরা কিছু কিছু এলাকার বাঁধ নির্মাণ ও সংষ্কার করছি।

তিনটি নদীবেষ্টিত বরগুনা জেলার নদী তীরের বাসিন্দাদের অনেকেরই কাছাকাছি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রও নেই। জেলার ১২লাখ মানুষের প্রায় এক তৃতীয়াংশের বসবাস নদী তীরবর্তী গ্রামে। ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয় নিতে এদের জন্য মাত্র ৩৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে।
 


সিপিবি বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, ‘বরগুনার উপকূলীয় বাসিন্দাদের তূলনায় আশ্রয়কেন্দ্রর সংখ্যা অনেক কম। আমরা বছরের পর বছর ধরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও এখনো পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। জেলায় পাঁচ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হলেও স্বাস্থবিধি বজায় রাখার বিষয়টি এখন বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। যদিও বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, তবুও ঘূর্ণিঝড়কালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থবিধি মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়বে বলবে অনেকেরই ধারণা।'

জেলা প্রশাসন  সোমবার (১৮ মে) বিকেলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন। এতে সভাপতি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। তিনি জানান, ৫০৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে- এতে উপকূলের বরগুনা, বামনা, আমতলী, বেতাগী, পাথরঘাটা ও তালতলীসহ ছয়টি উপজেলার আশ্রয় নেবে।

জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অফিসার মো: লুতফর রহমান বলেন, ‘আশ্রয় কেন্দ্রে সামাজিক সুরক্ষা মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী রাখা হবে। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রে গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের টিম সার্বক্ষণিক সামাজিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবেন।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ জানান, জেলার ৫০৯ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮০ হাজার ৪২৪ জন মানুষ প্রায় ১০ হাজার গবাদি পশু এবং ৩০ হাজার হাঁস-মুরগি নিয়ে আশ্রয় নিতে পারবেন।

** উপকূলের আরও কাছে 'আম্পান', এগুচ্ছে ২০ কি.মি গতিতে


রুদ্র /টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়