ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আম্ফানে বরগুনায় ১০ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২২ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আম্ফানে বরগুনায় ১০ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বরগুনায় ৯ হাজার ৮শ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়ে গেছে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার (২১ মে) এ তথ্য জানান বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে জেলার ছয়টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় ৯ হাজার ৮শ টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় কোনো প্রাণহানি কিংবা নিখোঁজের খবর পাওয়া যায়নি।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জেলোচ্ছ্বাসে জেলা ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে পানি প্রবেশ করে ১৩১টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের ২০ মেট্রিকটন মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলোচ্ছাসে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় ২৫০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হেক্টর জমির শাকসবজি, সাতটি আমবাগান ও পানের বরজসহ মরিচের বীজতলা।

বরগুনার কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ রমিজুল রহমান বলেন, ‘অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমাদের কমই ক্ষতিসাধন হয়েছে। এ কম ক্ষতিসাধনের পিছনে আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি একমাত্র কারণ।'

তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় উৎপাদিত শতভাগ তরমুজ, বোরো ধান ঘরে তুলে নিয়েছিলো কৃষকরা। এছাড়াও ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছিল জেলায় উৎপাদিত ৫০ ভাগ ভুট্টা এবং ৬০ ভাগ মুগ ডাল।'

বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসের কারণে জেলার দুই 'শ ১৮টি মুরগি মারা গেছে। এছাড়াও জেলায় ১৫টি মুরগির খামার এবং ১৯ টি গরুর খামারের সেড আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা।'

বরগুনা জেলা ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স এর উপ-পরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পর আমি বরগুনা সদর উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ নিশানবাড়িয়া এবং চালিতাতলা এলাকাসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখেছি। এছাড়াও বেতাগী উপজেলার বদনিখালী এলাকাসহ ঘুরে দেখেছি বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকায় কিছু গাছপালা ভেঙে এবং উপড়ে পড়েছিল, তা আমরা অপসারণ করেছি।'

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরগুনায় সাড়ে এগারো ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানের সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই পানি নেমেও গেছে। আমরা ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত করার জন্য কাজ শুরু করেছি।'

এই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ পুনরায় নির্মাণ করতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলেও জানান তিনি।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা নাজমুল হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে জেলায় ৫০ টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।‌ এছাড়াও ১০ খাবার পানির পুকুর ও পাঁচটি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০ লক্ষ টাকা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলায় ১২১ টি মাছের ঘের এবং দশটি চিংড়ির ঘের জলোচ্ছ্বাসের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আনুমানিক ২০ মেট্রিকটন মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০ লাখ টাকা।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে প্রায় ৪০ হাজার একর বনভূমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যেই মধ্যে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদী থেকে আমরা একটি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছি। আমাদের ধারণা হরিণটি জলোচ্ছ্বাসের কারণে মারা গেছে।'

বরগুনা জেলা প্রশাসক বলেন, ‘মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং শুকরিয়া আদায় করছি। কারণ তিনি আমাদের অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। আমি বরগুনাবাসীকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, এই ঝড় মোকাবেলায় তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আমাদের সমযোগিতা করেছেন।'

তিনি বলেন, ‌ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আমরা জরুরি সভা সম্পন্ন করেছি। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী আমরা জেলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেছি। শুক্রবার সকাল থেকে আমরা বরগুনায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করব। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এক 'শ পরিবারে আমরা নগদ অর্থ ও টিন বিতরণ করব। এছাড়া তাদেরকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।'


রুদ্র/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ