ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা জহুরার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৯ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা জহুরার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

সহপাঠীদের ভাল পোশাক পড়তে দেখে ইচ্ছা হয়েছে, কিন্তু কখনও কাউকে বুঝতে দেননি।

দিনমজুর বাবা কিনে দিতে পারেনি ভাল পোশাক, খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়েছে স্কুলে।

ভাঙা টিনের চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করতে হয়েছে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। ভাল কিছু করার প্রচণ্ড জেদই তাকে পাইয়ে দিয়েছে সাফল্য। বলছি একজন অদম্য মেধাবী জহুরা খাতুনের কথা।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের ধরমগাছা গ্রামের আব্দুল গফুর ও মর্জিনা খাতুন দম্পতির মেয়ে জহুরা খাতুন এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। মির্জাপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ৩ নম্বরের জন্য পাননি গোল্ডেন জিপিএ-৫। নিজের প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস থেকে চ্যালেঞ্জ করেছেন তিনি। অষ্টম শ্রেণিতে একই স্কুল থেকে একমাত্র জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ছিল জহুরা।

কিন্তু ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো হয়ে ওঠা জহুরার সামনে এখন শুধুই অন্ধকার। দরিদ্র বাবা-মা’র পক্ষে আর তার লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব নয়। নিজের বুকের মধ্যে এমবিবিএস ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন লালন করা জহুরা তাই কাঁদছেন। অনিশ্চয়তার মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে তার স্বপ্ন।

৩ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট জহুরা। ৩ বোনের মধ্যে বড় দুই বোন নাসিমা খাতুন ও জুলেখা খাতুনের বিয়ে হয়ে গেছে। এক ভাই ওমর ফারুক বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। দরিদ্র বাবা আব্দুল গফুরের দিনমজুরির টাকায় কোনোমতে চলে সংসার। ভাঙা ঘরটা ছাড়া নেই কোনো জমিজমা। একটিমাত্র ছোট্ট টিনের ঘর। মাঝখানে মাচা তৈরি করে টুকিটাকি জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। যার এক পাশে বাবা-মা এবং অন্য পাশে জহুরা থাকে। ঘরের টিনের চালে অসংখ্য ছিদ্র, একটু বৃষ্টিতেই পানি পড়ে। ঘরটিও অনেক নিচু হওয়ায় প্রচণ্ড গরমে ঘরের ভেতর থাকা দায়।

জহুরা বলেন, ‘বাবা দিনমজুরি করে যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চালাতেই শেষ। আমার খরচ চালানো ছিল তার ওপর খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই স্যারেরা আমাকে খুব সহযোগিতা করেছেন। বিনামুল্যে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। দিনে রাতে বেশিরভাগ সময় পড়ালেখা করেছি। কখনও সহপাঠিদের বই ধার করে পড়েছি। নিজের মনের মধ্যে জেদ ছিল আমাকে পারতেই হবে, আমি পারবোই। কারণ দরিদ্র বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে অনেকদূর যেতে হবে আমাকে। কিন্তু এ পর্যায়ে এসে কিভাবে আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। বাবার পক্ষে সম্ভব নয় আমার লেখাপড়ার খরচ চালানোর।’

বাবা আব্দুল গফুর ও মা মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘যত কষ্টই হোক আমরা চিষ্টা করিছি মিয়েডাক লেখাপড়া করানের। কিন্তুক এহন বয়েস হইছে, কাজকাম ঠিকমতোন করবের পারিন্যা। এত টেকা কোনে পাবো, মিয়ে যে ডাক্তার হবি ক্যাবা কইরে হবি, আমরা তো আর রাস্তা দেহিন্যা। স্বপ্ন দেখলিতো আর হবি লায়, টেহাও লাগবি। এহন কেউ যুদিকালে সাহায্য সহযোগিতা করে, মিয়েডার লেহাপড়ার খরচ চালাব্যের পারে, তালি হয়তো ও ডাক্তার হবের পারবি।’

জহুরার শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘জহুরা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলে না। সমাজের বিত্তবানরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে ওর স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে। নইলে এখানেই থেমে যাবে অদম্য মেধাবী এই ছাত্রীর পথচলা।’

সহৃদয়বান কেউ জহুরার পাশে দাঁড়াতে সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন তাদের পরিবারের এই নম্বরে-০১৭৮৪-৭৬৫২৭৬।



পাবনা/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়