ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘হাত নেই তো কী হয়েছে, বেশ চলছি’

মোসলেম উদ্দিন, হিলি (দিনাজপুর) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৭, ৩০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘হাত নেই তো কী হয়েছে, বেশ চলছি’

‘হাত নেই তো কি হয়েছে? বেশ চলছি।’ কোন কষ্ট নেই এমন বোঝাতেই কথাগুলো বলছিল রুবেল, যারা ডান হাতের কোন অংশ নেই। বাম হাতের একটু অংশ দিয়ে লাঠি বা ছাতা ধরে মাঠে ছাগল চরার। দিনাজপুরের হিলির বড় জালালপুর গ্রামের (২০) বছর বয়সী রুবেল হোসেন। সরকারি অনুদান আর নিজের প্রচেষ্টায় চলছে তার জীবন।

শ্যামলা রঙের আর সুঠাম দেহের এই রুবেল প্রতিবন্ধি হলেও নিজেকে কখনও প্রতিবন্ধি মনে করে না। ছোটবেলায় বৈদ্যতিক দুর্ঘটনায় তার দুই হাত হারিয়ে ফেলে। সে কখনও মানুষের নিকট হাত বাড়ায়নি। প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ডের টাকা দিয়ে রুবেল ছাগল কিনে, ছাগল পালন করেই তা থেকেই চলে সে কোন রকম। তবু সে মানুষের নিকট নিজেকে ছোট করে না। হাতবিহীন রুবেলকে অনেক সময় দেখা যায় গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে মাঠে ফুটবল খেলতে এবং মনের আনন্দে গান গাইতে।

হাতে ছাতা ঝুলিয়ে, রাখাল সেজে, ছাগল নিয়ে আসছে রুবেল। এমন দৃশ্য দেখে তার একটি ছবি তুলি। ছবি তুলতেই রুবেল থমকে গেলে, সে যেন কিছু বলতে চায়। মিষ্টি হাসি হেসে রুবেল রাইজিংবিডিকে বলল, হাত নেই তো কি হয়েছে? এই তো বেশ চলছি। তবে হাত ছাড়া চলতে আমার একটু কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে মানুষের স্বাভাবিক হাত দেখে মনে হয়, আমার যদি দুই হাত তাদের মতো থাকতো, তাহলে আমার জীবনটা ধন্য হতো। তারপরও আমি ভেঙে পড়ি না। এভাবেই সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি। মানুষের কাছে আমি বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমার পাঁচটা ছাগল আছে, সকাল হলেই তা নিয়ে মাঠে আসি। মাঠে ছাগল চরাই আর সবার সঙ্গে খেলা করি। দুপুরে বাড়ি ফিরি। হাত নেই বলে নিজের সব কাজ করতে পারিনা। আমার মা আমাকে গোসল করিয়ে দেন, কাপড় পরিয়ে করে দেন, খাবার খাইয়ে দেন। আমার সব কাজ মা নিজ হাতে স্বযত্নে করেন।

রুবেল আরও বলেন, প্রথমে আমি একটা ছাগল কিনে ছিলাম। এখন তা থেকে পাঁচটি ছাগল হয়েছে। আমি তো আর অন্য কোন কর্ম করতে পারি না। শুধু ছাগল পালন করতে পারি। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে যদি কেউ আমাকে কয়েকটি ছাগল বা গরু কিনে দিতো, তাহলে আগামীতে সুন্দরভাবে আমি নিজেকে সাজাতে পারতাম।

রুবেলের বাবা আফজাল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, আমার তিন ছেলে, রুবেল সবার বড়। আমার ছেলে এমন ছিলো না। সমাজের আট-দশ জনের মতো সেও সুস্থ্-সবল ছিলো। একটি দুর্ঘটনায় ছেলের দুই হাত শেষ হয়ে গেছে। ২০০৭ সাল রুবেল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। ছেলে ছাগল চরাতে মাঠে যায়। মাঠে বিদ্যুতের তার পড়ে ছিলো। বর্ষাকাল। রুবেল বুঝতে পারেনি। তারের উপড় সে পড়ে যায় এবং বিদ্যুতের তারে রুবেলের দুই হাত পুড়ে যায়। আমার যা সম্বল ছিলো তা ব্যয় করে ছেলেকে সুস্থ করি। তার দুই হাত রক্ষা করতে পারিনি। হাতবিহীন ছেলে আমার চলাফেরা করছে।

স্থানীয় পানের দোকারনী আকরাম হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, রুবেল খুব ভাল ছেলে। অসহায় রুবেলকে আমরা গ্রামবাসী খুব স্নেহের চোখে দেখি। তার বাবা দর্জির কাজ করে। সারা দিন রুবেল মাঠে তার ছাগল চরায়। যখন কোন কাজ থাকে না, তখন আমার দোকানে এসে রুবেল সময় কাটায়।

এবিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত রাইজিংবিডিকে জানান, জালালপুরের প্রতিবন্ধি রুবেলকে আমি চিনি। সে একজন অসহায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি মহোদের পক্ষ থেকে পৌর এলাকায় এই সব প্রতিবন্ধিদের ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। রুবেলকেও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারপরও সরকারি এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে সার্বিক তাকে সহযোগিতা তাকে করে আসছি।


হিলি/মোসলেম উদ্দিন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়