ঢাকা     মঙ্গলবার   ০১ এপ্রিল ২০২৫ ||  চৈত্র ১৮ ১৪৩১

দেখে আসুন দেশের প্রথম বিমান জাদুঘর

মহিউল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেখে আসুন দেশের প্রথম বিমান জাদুঘর

বিমান জাদুঘরের কিছু ছবি

মহিউল ইসলাম : রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দরের পশ্চিম রানওয়েতে (আইডিবি ভবনের বিপরীত পাশে) স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম বিমান জাদুঘর। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রসারে এই জাদুঘর উন্মু্ক্ত করা হয়েছে।

 

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাদুঘর’ নামক দেশের প্রথম এই বিমান জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন এয়ার মার্শাল এনামুল বারী।

 

বিমান বাহিনীর বিভিন্ন পুরানো বিমান এবং হেলিকাপ্টারে সাজানো হয়েছে এই জাদুঘরটি। প্রতিদিন বিকালে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকা এই বিমান বাহিনী জাদুঘর নিয়ে থাকছে আমাদের আজকের আয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক নতুন এ জাদুঘর বৃত্তান্ত।

 

ঢাকার আগারগাও এ আইডিবি ভবনের ঠিক বিপরীত পাশে অবস্থিত এই জাদুঘরটিতে ঢুকতে খরচ হবে মাত্র বিশ টাকা। টিকিট কাউন্টার অতিক্রম করলেই চোখে পড়বে `নীলাদ্রি`। এই দোকানে পাওয়া যাবে বিমানবাহিনীর স্মারক সহ আরও অনেক কিছু। এরপরে একটু সামনেই চোখে পড়বে একটি মানচিত্র। সমগ্র জাদুঘরের কোথায় কী আছে, এক নজর মানচিত্রে চোখ বুলালেই ধারণা হয়ে যাবে আপনার।

 

ঈগল চত্বর অতিক্রম করে আরেকটু এগিয়ে গেলেই বিশাল এক যন্ত্রের দেখা পাবেন আপনি। ভয় পেলে চলবে না। এটিই চীন থেকে বাংলাদেশ কে দেওয়া জিসিএ-৭১১ রাডার। প্রতিকূল আবহাওয়াতে বিমানকে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া পুরাতন এই রাডারটিকে খুব কাছে থেকে দেখে নিতে পারবেন আপনি। অতঃপর হাতের ডান দিকে গেলেই পেয়ে যাবেন বিশাল এমআই-৮ হেলিকাপ্টার। মাত্র ত্রিশ টাকায় টিকিট কিনে উঠতে পারবেন এই হেলিকাপ্টারে। নিজের চোখেই পরিদর্শন করে আসতে পারবেন ভেতরের অবস্থা। রাশিয়ার তৈরি এই হেলিকাপ্টারটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে। হেলিকাপ্টার ছাড়াও বিভিন্ন রকমের বিমান রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে:

 

বলাকা: বাংলাদেশের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান বলাকা। রাশিয়ার তৈরি এই বিমানটি বাংলাদেশে আসে প্রথম ১৯৫৮ সালে। বর্তমানে এটা জাদুঘরে রাখা হয়েছে।

 

এয়ার টুওরার: নিউজিল্যান্ডের এই বিমানটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে। ট্রেইনিংয়ে জন্য ব্যবহার করা এই বিমানটি রাখা হয়েছে এখানে।

 

পিটি-৬: চিনের তৈরি এই বিমানটি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। ঘুরতে ঘুরতে দেখা পেয়ে যেতে পারেন লাল সাদা এই বিমানটির।

 

ফুগাসি এম-১৭০: ম্যাজিস্টার সূত্র ফলো করে ফ্রান্সে ১৯৬০ সালে তৈরি করা হয় এই বিমানটি। অতঃপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যুক্ত হয় ১৯৯৭ সালে।

 

গ্লাইডার: বিমান বাহিনীর আকাশ অভিজ্ঞতার জন্য জার্মানির দেওয়া এই বিমানটি ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে আনা হয়।

 

এয়ারটেক কানাডিয়ান ডিএইচ ৩/১০০০: কানাডার তৈরি এই বোমারু বিমানটি ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম সুমদ্র বন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করে । এখন অবশ্য পুরাতন হয়ে যাওয়ায় এটিকে রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে।

 

এফটি-৫: চিনের তৈরি এই প্রশিক্ষণ বিমানটি বাংলাদেশে আসে ১৯৮৬ সালে।

 

এফ-৮৬: স্বাধীনতার বিপক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই বিমানটি ব্যবহার করে।

 

হান্টার বিমান: মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে ভূমি শত্রু  থেকে রক্ষা করতে এই বিমানটি ব্যবহার করে । মিত্র বাহিনীর এই বিমানটিকেও রাখা হয়েছে বিমান বাহিনীর জাদুঘরে ।

 

মিগ-২১: রাশিয়া ১৯৭৩ সালে উপহার স্বরূপ এই বড়সড় প্রশিক্ষণ বিমানটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে উপহার দেয়।

 

এছাড়া জি নাট, এফ৬, এ৫-১১১ এর মতো তৎকালীন সময়ে আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো বিভিন্ন রকমের বিমানগুলোকে রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। সব ধরনের মানুষের জন্য সহজেই সুযোগ মিলছে আসল এই বিমানগুলোকে খুব কাছে থেকে দেখবার। 

 

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর শহীদদের স্মরণ করতে তৈরি করা হয়েছে শহীদ কর্নার। সেখানে গিয়ে একটু দেখে আসতে পারেন শহীদদের মূর্তি।

 

জাদুঘরে ঢুকতেই ডানদিকে করা হয়েছে চাইল্ড কর্নার। বিভিন্ন রকমের খেলার জিনিসে সজ্জিত এটি। জাদুঘরের ওআইসি উইং কমান্ডার মিজানুর রহমান এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুব শিগগিরি এখানে যুক্ত করা হবে দোলনা, চরকা, মিনি ট্রেন এর মত দারুন দারুন সব মজার জিনিস। দর্শনার্থীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন ভিন্নধর্মী এই জাদুঘরকে সাদরে গ্রহণ করেছে ঢাকাবাসী। ছুটির দিনগুলোতে ভিড় হয় দেখার মত।

 

এছাড়া সাময়িক হাল্কা খাবারের জন্য স্কাই মেন্যু নামে করা হয়েছে একটি স্নাক্সের দোকান। একটু খানি বিশ্রাম এবং পিজা বার্গারসহ বিভিন্ন রকমের হাল্কা খাবার পেতে পারেন এখানে।

 

আসল যুদ্ধ বিমানকে কাছে থেকে দেখা এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত হেলিকাপ্টার এর ভেতর গিয়ে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাদুঘর’ ।

 

সময়সুচি:

শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা।
সোম থেকে বৃহস্পতি দুপুর ২টা রাত ৮টা।
রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ডিসেম্বর ২০১৪/ফিরোজ/রাশেদ শাওন

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়