ঢাকা     রোববার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৭ ১৪৩১

কুমিল্লা শহরের যে বাড়িটি আজো শচীনকে মনে করিয়ে দেয়

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ১ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুমিল্লা শহরের যে বাড়িটি আজো শচীনকে মনে করিয়ে দেয়

কুমিল্লা প্রতিনিধি: অসাধারণ গানের শিল্পী শচীন দেববর্মন বাংলাদেশেরই সন্তান। প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ’র ১১২তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর তিনি কুমিল্লা শহরের পূর্ব চর্থায় জন্মগ্রহণ করেন। তখন কুমিল্লা ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের অধীন।

তার পিতার নাম নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ,  মায়ের নাম নিরুপমা দেবী। তার দাদা ঈশান চন্দ্র দেববর্মন ১৮৩০ থেকে ১৮৪৯ পর্যন্ত ত্রিপুরার রাজা ছিলেন। দাদার মৃত্যুর পর তার পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র দেব বর্মণ ত্রিপুরার সিংহাসনে বসার কথাছিলো। কিন্তু দাদার ভাই বীর চন্দ্র মানিক্য ত্রিপুরার সিংহাসন দখল করে নেন।

সে সময় শচীন দেব বর্মণের পিতা রাজবাড়ির কর্মকর্তা শ্রী কৈলাস সিংহের পরামর্শে ১৮৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সপরিবারে কুমিল্লায় চলে আসেন এবং কুমিল্লায় স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। সেই সঙ্গে সিংহাসনের দাবি ছেড়ে দেন। (রাজবাড়ীর কর্মকর্তা এই কৈলাস সিংহই ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ ‘রাজমালার’ রচয়িতা।)

বীরচন্দ্র মাণিক্যের অর্থানুকূল্যে কুমিল্লার চর্থায় ৬০ একর জমি নিয়ে প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন কুমার বাহাদুর নবদ্বীপ চন্দ্র। এই প্রাসাদেই জন্ম শচীন দেববর্মণের।

রাজ পরিবারে জন্ম হলেও বাল্যকালেই সঙ্গীতের প্রতি অনুরক্ত হন শচীন। পিতার অনুপ্রেরণায় ধ্রুপদি শিল্পী এবং সেতারবাদকের কাছে সঙ্গীতে তালিম নেন। পড়ালেখাও কুমিল্লায়। এখানে বিএ শেষ করে এমএ পড়েন কলকাতায়। এ সময় কলকাতার বেতারে যোগ দেন। এরপর বোম্বে চলে যান। এরপর একের পর এক পসার ছড়িয়ে পড়ে এই মহান সংগীতজ্ঞ’র।

এই গুণী শিল্পী ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর বোম্বেতে (মুম্বাই) প্রয়াত হন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

কুমিল্লা শহরের চর্থার স্মৃতিবিজড়িত পৈত্রিক বাড়িটি আজো তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। শচীন ভারতে চলে গেলে পরবর্তীকালে কুমিল্লার এই বাড়িটি পরিণত হয় সরকারি হাঁস মুরগীর খামারে।

তবে বর্তমান সরকারের আমলে শচীনের স্মৃতিবাহী এই বাড়িটির কিছু অংশ দখলে নিয়ে সাবেক জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটিকে সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তারপরও বাড়ির একটা বড় অংশ এখন পরিত্যক্ত। একটা বিরাট অংশ জুড়ে এখনো সরকারী হাঁস মুরগীর খামার রয়ে গেছে। যেখানে শচীনের সাথে সংগীতের আসর বসাতেন জাতীয় কবি কাজী নজরুলসহ দেশের খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞরা।
 


উদিচি, কুমিল্লার সভাপতি শেখ মো: ফরিদ উদ্দিন জানান, দেশ বিভাগের পর শচীনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি কিছুদিন মিলিটারি গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তারপর এ বাড়িটিতে স্থাপিত হয় পশু চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে বাড়ির খালি জায়গায় স্থাপিত হয়েছে সরকারি হাঁস-মুরগির খামার। অযত্ন অবহেলায় পরিণত হয় ভুতুড়ে বাড়িতে। দিনের পর দিন এ বাড়িটি ইট বালু ঘসে পড়ছে। সৃষ্টি হয়েছে ঝোপ জঙ্গল। এতে চরম ভাবে ক্ষুদ্ধ কুমিল্লার সংস্কৃতি কর্মীরা।


কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোট এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুর রায়হান জানান, বহুবার নানা কর্মসূচীও পালন করেছেন তাতেও কেউ এই স্মৃতিটুকু রক্ষা এগিয়ে আসেনি।

নজরুল গবেষক প্রফেসর আলী হেসেন চৌধুরী বলেন,  ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লা শহরের পূর্ব চর্থায় শচীন দেববর্মনের পৈত্রিক বাড়িতে সঙ্গীত চর্চা করতেন। বাড়িটির কিছু অংশ দখলে নিয়ে মূল বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে মাত্র।’

চমৎকার নির্মাণ শৈলীতে ও রাজবাড়ির আদলে নির্মিত এ বাড়িটি যথাযথ সংরক্ষণের পাশাপাশি বাড়িটিকে ঘিরে একটি জাদুঘর ও সঙ্গীত গবেষণাগার স্থাপনসহ একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি কুমিল্লার সংস্কৃতি কর্মীদের।





রাইজিংবিডি/কুমিল্লা/১ অক্টোবর ২০১৮/জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়