সীমান্তে অপেক্ষায় হাজার ট্রাক, লোকসানের শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
সাকিরুল কবীর || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ফটো
বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে উভয় সীমান্তে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক। দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা এসব পণ্যের অধিকাংশই গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প-প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল। তবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যে নানাভাবে চেষ্টা চলছে।
করোনা সংক্রমণ এড়াতে গত ২২ মার্চ থেকে পেট্রাপোল থেকে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোলে প্রবেশ করেনি। বেনাপোল থেকেও পেট্রাপোলে যায়নি। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাকভর্তি ভারতীয় মালামাল পেট্রাপোল দিয়ে বেনাপোলে আমদানি হয়। ভারতে রপ্তানি হয় দেড়শ থেকে ২০০ ট্রাক বাংলাদেশি পণ্য। প্রতি বছর এ বন্দর থেকে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আমদানি পণ্য থেকে ও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব পায়।
গত ৩০ মার্চ এক আদেশে আমদানি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য সেবা সামগ্রী, শিল্পের কাঁচামাল এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার আমদানিকৃত পণ্য খালাসের জন্য কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনগুলোকে নির্দেশ দেয় এনবিআর। সেই হিসেবে বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দরে কাজ চলছে।
এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেশকিছু পণ্য বেনাপোল কাস্টম থেকে খালাস করলেও অধিকাংশ আমদানিকারক পণ্য খালাসে আগ্রহী নন।
তবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও খালাসের সঙ্গে ভারতীয় কাস্টম, বন্দর, বেনাপোল বন্দর, ব্যাংক, ট্রান্সপোর্ট, উভয় দেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর শ্রমিকরা জড়িত রয়েছেন। সবার সঙ্গে সমন্বয় না হলে কার্যত পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও খালাস প্রক্রিয়া কতটুকু সফলতা পাবে সেটিও ভাবার বিষয়।
পেট্রাপোল বন্দর সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দরে আটকে থাকা ভারতীয় আটটি খালি ট্রাকসহ চালক এবং সহকারীরা কয়েক দিন আগে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তবে পেট্রাপোল বন্দরে ফিরে যাওয়া ট্রাকচালক এবং সহকারীদের ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। প্রত্যেকের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব চালকরা ভারতের উওর প্রদেশ ও বিহারের বাসিন্দা।
পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে নানাভাবে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পণ্য নিয়ে যাওয়া-আসা ট্রাকচালক ও চালকের সহকারীদের ফেরার পথে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করায় পণ্য পরিবহনে অনীহা প্রকাশ করেছেন তারা।
‘ভারতে দফায় দফায় লকডাউন ঘোষণা করায় সব ধরনের আমদানি-রপ্তানিসহ সীমান্ত-বাণিজ্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে করোনা আতঙ্কের জেরে স্থলবন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। পণ্য বোঝাই কয়েক হাজার ট্রাক বেনাপোল বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। সেগুলোকে সঠিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশে পাঠিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা চলছে।’’
ভারতীয় সীমান্তে বাণিজ্যে জড়িত ব্যবসায়ী প্রদীপ দে বলেন, ‘আগে মানুষের জীবন। তারপর ব্যবসা। গত ২৩ মার্চ থেকে আমাদের কয়েকটি পাটবীজ বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে পেট্রাপোল বন্দরে। লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মধ্যে পড়ে আছি। তবু আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত হিসেবে নিয়েছি। কারণ কোনোভাবেই কোনো দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক আমরা তা চাই না।’
বেনাপোল আমদানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব ব্যবসা বাণিজ্যেও পড়েছে। এখনই ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করেছে ভারত-বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানিকারকরা। ক্ষতি কাটিয়ে নিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়তে হবে। সেই সঙ্গে সীমান্ত এলাকার হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ বিকল্প সঠিক পথ না পেয়ে বিপথে পা বাড়াবে। তাতেই সমস্যার সম্মুখীন হবে দেশের ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা।’
বেনাপোল কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমরা কাস্টম হাউজ খোলা রেখে কাজ করছি। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা পণ্য নিতে চাইলে আমরা দ্রুত সেটা শুল্কায়ন শেষে খালাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমাদের সব কর্মকর্তা প্রস্তুত আছেন।’
রিটন/সনি
রাইজিংবিডি.কম