ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১১ ১৪৩১

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাখিমারা বাঁধ সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১১, ১৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাখিমারা বাঁধ সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কপোতাক্ষ অববাহিকার পাখিমারা বিলের টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) প্রকল্প বাঁধ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় থেকে পাখিমারা বিলের প্রকল্প বাঁধের ৬টি পয়েন্ট ভেঙে প্রায় দুইশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছেন।

শনিবার (১৩ জুন) সকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার করা সম্ভব না হলে কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ৫০ লাখ জনগোষ্ঠী আবারও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হতে পারেন বলে আশংকা করছেন সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর অনীহার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার না করায় এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়েছে এই এলাকার মানুষের। তাই ঠিকাদার নয়, জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহীনির তত্ত্বাবধানে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খননের পর ২০১৭ সালে জুন মাসে ১৬শ একর জমি নিয়ে তালার পাখিমারা বিলে চালু করা হয় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প)। ফলে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সরাসরি উপকৃত হন। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা না হওয়ায় মানুষের জীবন জীবিকা ছিল নিরাপদ।

শনিবার (১৩ জুন) সকালে তালা উপজেলার পাখিমারার টিআরএম প্রকল্পের মাদরার ভেঙে যাওয়া বেড়িবাধ এলাকায় স্থানীয় শাহিনুর ইসলাম, রবিউল ইসলাম, ইউনুস মোড়ল, আব্দুল জলিল ও সুকুমার মণ্ডল জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে পাখিমারা বিলের ৫টি পয়েন্টের (টিআরএম) বাঁধ ভেঙে মাদরা এলাকার গুচ্ছগ্রামে প্রায় দুইশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ভেসে গেছে চিংড়ি ঘের। ফলে হুমকির মধ্যে পড়েছে-সাতপাকিয়া, গৌতমকাটি, দোহার, শ্রীমন্তকাটি, আটুলিয়া, কলাগাছি ও মাদরাসহ ৮ গ্রামের বাসিন্দরা।

তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সরদার রবিউল ইসলাম মুক্তি জানান, সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই মানবেতর জীবন যাপন করছেন স্থানীয়রা। তিনি অভিযোগ করে আরও জানান, পাখিমারা বিলের টিআরএম অন্তর্ভূক্ত জমির মালিকরা বিগত ৮ বছররেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।
 


সাতক্ষীরা জেলা কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য ও তালা শহিদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ মো. মহিবুল্লাহ মোড়ল জানান, টিআরএম বাঁধ ভেঙে মাদরা এলাকার গুচ্ছগ্রামে প্রায় দুইশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী এসব মানুষের দুঃখ আর দুর্দশার দেখেও প্রশাসন যেন নির্বিকার। ফলে হুমকির মধ্যে পড়েছে-সাতপাকিয়া, গৌতমকাটি, দোহার, শ্রীমন্তকাটি, আটুলিয়া, কলাগাছি ও মাদরাসহ ৮ গ্রামের বাসিন্দারা।

তিনি আরোও জানান, আম্পানের তাণ্ডবে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধটি জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্ববধানে পূনঃনির্মান করায় দাবি তাদের।

এদিকে, কেন্দ্রীয় পানি কমিটির নেতা অধ্যাপক হাসেম আলী ফকির জানান, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কপোতাক্ষ অববাহিকার পাখিমারা (টিআরএম) বিলের ভেঙে যাওয়া পেরিফেরিয়াল বাঁধ পুনঃস্থাপন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কপোতাক্ষ জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ইতোমধ্যে ৩ বৎসর অতিক্রান্ত হলেও দ্বিতীয় পর্যায়ের কোন কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শুরু করা হয়নি। যার ফলে পলি জমে নদী আবারও যেমন ভরাট হতে শুরু করেছে, তেমনি বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধও নড়বড়ে ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিসহ বিল ব্যবস্থাপনায় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরণের চরম বিশৃঙ্খলা।

অধ্যাপক হাসেম আলী ফকির আরোও জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের’ কার্যক্রম ২০১৭ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্বারা বিশেষ করে তালা উপজেলায় পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়িত হওয়ার দরুণ বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ২০ লাখ অধিবাসী সরাসরি উপকৃত হয়েছে। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা দূরীভূত হওয়ায় মানুষের জীবন জীবিকা এখন নিরাপদে আছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, তিনি ইতোমধ্যে ঐ এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং সরকার ইতোমধ্যে বাঁধ সংস্কারের বরাদ্ধ দিয়েছে। অতিদ্রুত বাঁধ সংস্কার কাজ শুরু হবে।

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানান, এলাকার পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি কমিয়ে আনতে ক্ষয়-ক্ষতির তালিকায় টিআরএম এর নাম উল্লেখ না করার কারণেই এখনও পর্যন্ত এই বাঁধ সংস্কার করা সম্ভব হয়নি ।

তিনি আরও জানান,জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার করা সম্ভব না হলে কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ৫০ লাখ জনগোষ্ঠী আবারও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হতে পারে বলে আশংকা করছেন তিনি।


সাতক্ষীরা/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়