ঢাকা     সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৭ ১৪৩১

ছড়ারপারে সবই আছে, নেই শুধু কামরান (ভিডিও)

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৫ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ছড়ারপারে সবই আছে, নেই শুধু কামরান (ভিডিও)

সুরমা নদীর তীরের ছড়ারপার এলাকা। সিলেটের সাবেক নগরপিতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের এখানেই বসবাস।

সুরমার তীরের এই বাড়িতে চার ভাইদের নিয়ে একান্নবর্তী পরিবারে বাস করতেন কামরান। সাধারণ জনতার জন্য কামরানের বাসার প্রধান ফটক ২৪ ঘন্টাই থাকতো খোলা।

বাড়িতে প্রবেশের পরই প্রথম ঘরটিতেই বসতেন কামরান। শুনতেন জনসাধারণ আর নেতাকর্মীদের দুঃখ সুখের কথা। এই ঘরের চার দেয়ালে টানানো আছে তার অনেক দুর্লভ ছবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সিলেটে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের ছবিও শোভা পাচ্ছে দেয়ালে। আছে বিভিন্ন সংগঠনের প্রদানকৃত সম্মাননা ক্রেস্টও।

এসব কিছুই আজ স্মৃতি। নেই শুধু কামরান। তার শেষ যাত্রার প্রস্তুতি চলছে। উঠোনের কোনে রাখা হয়েছে খাটিয়া। এক পাশে তৈরি করে রাখা হয়েছে গোসল করানোর স্থানও। এসব দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন একনজর দেখতে আসা শোকাহত জনতা। বেলা যত গড়াচ্ছে ততই শোকাহত মানুষের ভিড় বাড়ছে ছড়ারপারের এই বাড়িটিতে।

আগতদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। সোমবার (১৫ জুন) সকাল ৯টার দিকে মাছিমপুরের ছড়ারপারে ছুটে যান তিনি। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এখনও কামরানের মৃত্যুর খবর তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন।

মেয়র আরিফ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে পারি নাই। কামরান ভাইর এ সংবাদ শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। গতকালকেও তার সাথে কথা হয়েছে। সকালে যখন মোবাইল ফোনে আমাকে জানানো হয় আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। যিনি আমাকে ফোন দিয়েছেন তাকে আমি গালমন্দ করে বলেছি-সবকিছু নিয়ে ঢং করবানা। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি।’
 


তিনি আরও বলেন, ‘আমার সঙ্গে কামরান ভাইয়ের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। কাউন্সিলর থেকে মেয়র হয়েছি। আমার স্ত্রী করোনা পজিটিভ আসার পর তিনি বলেছিলেন, ভাই আপনি বাহিরে বের হবেন না। তিনি একজন ভালো মানুষ, সদালাপি ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’

তিনি জনসাধারণের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসককে ছড়ারপার মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি জানাযা আয়োজনের অনুমতি প্রদানের অনুরোধ করেছেন। একই সাথে সিটি কর্পোরেশনে এক মিনিটের জন্য হলেও কামরানের মরদেহ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রদানের জন্যও অনুরোধ করেছেন বলেও জানান। একই সাথে তিনি কামরানের জন্য নগরের পাড়া-মহল্লার মসজিদে দোয়া করার জন্য নগরবাসীকে আহ্বানও জানান।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ঘনিষ্ঠজন মেহেদি হাসান কাবুল বলেন, ‘সিলেটবাসীর জন্য দিনটি খুব কষ্টের। আমরা এই সংবাদ প্রত্যাশা করিনি। তিনি ঢাকায় সিএমএইচে যাওয়ার পর প্লাজমা দেওয়া হয়। তখন তার শারীরিক অবস্থান উন্নতি হয়। খাবারও খেয়েছিলেন। তখনও তিনি সিলেটের মানুষের কথা জানতে চেয়েছেন। গতকাল রাত ১২ টার পর বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। রাতেই তিনি মারা যান। এই সংবাদটি আমাদের বিশ্বাস হচ্ছিল না। দেশে-বিদেশে মানুষ জানতে চাইছিল সত্যিই কি তিনি চলে গেছেন?’

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছোটভাই আখতার আহমদ ইছমত বলেন,  ‘আমাদের মা-বাবা নেই। কিন্তু কোনদিনও তিনি বুঝতে দেননি তাদের শূন্যতা। আমার ভাই এভাবে চলে যাবেন, তা ভাবতেও পারছিনা। কাল দিনেও কথা হয়েছে। রাতে এভাবে চলে যাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সবার বড় কামরান ভাই। আমাদের বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। খুব সৎ ছিলেন। বেতনের টাকায় পরিবার চালাতেন। তখন ভাই ক্লাস সেভেনে থাকাকালিন সময় টিউশনি করে পরিবার চালাতেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি আমাদের সেভাবেই আগলে রেখেছিলেন। তিনি জনগণকেও খুব ভালো বাসতেন। এসব স্মৃতি ভুলার নয়।’
 


গত ৫ জুন করোনা আক্রান্ত হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। পরদিন তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। ৭ জুন হাসপাতালে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার শরীরে প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়েছিল।

তবে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সোমবার ভোররাত ৩টার দিকে তিনি মারা যান। এরপর হাসপাতালে প্রক্রিয়া শেষ করে তার মরদেহ নিয়ে সকাল ৭টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তাঁর ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু ও ছোট ভাই এনাম আহমদ।

সিলেট পৌঁছার পর মরদেহ ছড়ারপারের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। দাফন সম্পন্ন হবে মানিকপীর (রহ.) সিটি কবরস্থানে। জানাযার স্থান নির্ধারণসহ সার্বিক সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসেছেন সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

 

সিলেট/ নোমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়