‘কামাল লোহানী শেষ দিন পর্যন্ত পাবনাকে ভোলেননি’
কামাল লোহানীর সঙ্গে অধ্যাপক শিবজিত নাগ (বায়ে সাদা জামা পরিহিত)
আজীবন সংগ্রামী কামাল লোহানীর বেড়ে ওঠা, লেখাপড়ার অনেকটা সময় কেটেছে পাবনা শহরে। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে জেলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অঙ্গনে। তাকে স্মরণ করে ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পাবনার মানুষের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখেছেন। পাবনাকে কখনো ভোলেননি।
পাবনার সাংস্কৃতিক সংগঠক ও প্রবীণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চাশের দশকে চাচার বাড়িতে থেকে পাবনা জিলা স্কুলে পড়ার সময়ই ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন কামাল লোহানী। তিনি স্কুল জীবনে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ায় চাচার বিরাগভাজন হন। এরপর পাবনা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে যান। তার রাজনীতির হাতেখড়ি পাবনা থেকেই।
প্রথমে কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে পড়াশুনা শুরু করেন কামাল লোহানী। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে পাবনায় চলে আসে তার পরিববার। তাকে ভর্তি করা হয় পাবনা জিলা স্কুলে। ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। পরে ঢাকায় চলে যান।
জিলা স্কুলে থাকতে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন কামাল লোহানী। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের এ সময়টাতে তিনি পাবনা জিলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুল থেকেই চলে যেতেন ভাষার মিছিলে। বয়সে কম হলেও বায়ান্নর আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত থাকায় ৫২ পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় গ্রেপ্তার হতে হলেও দমে যাননি তিনি। ১৯৫২ সালে ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত হওয়ার পর পাবনায় ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি।
তার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত পাবনার প্রবীণ সাংবাদিক ও ভাষাসৈনিক রণেশ মৈত্র বলেন, স্কুল জীবনে কামাল লোহানী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হন। পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে ভাষা আন্দোলন, মুসলিমলীগবিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। এ জন্য তিনি বার বার গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
রনেশ মৈত্র বলেন, তৎকালীন বৃহত্তর পাবনা জেলার বর্তমানে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার খান সোনাতলা গ্রামে ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন কামাল লোহানী। পাবনায় এসে বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়েপড়া নিয়ে তার পরিবারের আপত্তি ছিল। এই অবস্থায় ১৯৫৪ সালে কলেজ জীবন শেষ না করেই চাচার বাড়ি থেকে মাত্র ২০ টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান।
কামাল লোহানীর স্নেহধন্য ও ঘনিষ্ঠজন পাবনা কালেক্টরেক্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, ঢাকাতে থাকলেও কামাল লোহানী কখনো পাবনাকে ভুলে যাননি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি পাবনার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘তাকে হারিয়ে আমার মধ্যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। এই শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না।’’
শিবজিত নাগ বলেন, কামাল লোহানী ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতার যুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে জড়িয়ে আছেন। নিজেকে ইতিহাসের অংশ করে গেছেন তিনি।
ঢাকা/বকুল
রাইজিংবিডি.কম