রক্তাক্ত তিমির বাচ্চাকে ফেরানো হলো সাগরে
কক্সবাজার সৈকতে এবার দেখা মিলল বিরল প্রজাতির তিমির বাচ্চা।
শনিবার (২০ জুন) বিকেলে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সৈকতে এই তিমির বাচ্চার দেখা মিলে।
তবে তিমির শাবকটি ব্লকে আঘাত পেয়ে রক্তাক্তও হয়। পরে জোয়ারের পানিতে বারবার ব্লকে আটকা পড়লে স্থানীয় যুবক ও জেলেরা এটিকে সাগরে ফিরে যেতে সহায়তা করে।
তিমির বাচ্চাটিকে সাগরে ফিরে যেতে সহায়তাকারি শাহপরীর দ্বীপের যুবক জসিম মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ এলাকায় হঠাৎ একটি জলজপ্রাণী ভেসে আসে। আমরা সবাই প্রথমে মনে করেছিলাম ডলফিন। কিন্তু পরবর্তী জানতে পারি এটি তিমি মাছের বাচ্চা। এরপর ১০-১২ মিনিট বার বার বেড়িবাঁধের ব্লকে সাগরে জোয়ারের পানিতে ধাক্কা লেগে আটকে যাচ্ছিল মাছটি। বার বার ধাক্কা লেগে মাছটি যখন পেটে আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হয়; তখন বেশ কয়েকজন যুবক ও জেলেরা মাছটিকে ব্লক থেকে সরিয়ে পুনরায় সাগরে ফিরে যেতে সহায়তা করে। ওই তিমির মাছের বাচ্চাটির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করি।’
এদিকে, ওই জলজ প্রাণীর ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এই বড় মাছটি তিমি শাবক বলে ধারণা করছেন প্রাণী গবেষকরা। এটি ব্রিডস হোয়েল প্রজাতির তিমির বাচ্চা বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন।
এব্যাপারে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মোস্তফা ফিরোজ এটি ব্রিডস হোয়েল প্রজাতির তিমির বাচ্চা বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ছবি দেখে ব্রিডস হোয়েলই মনে হচ্ছে। তবে সরাসরি দেখলে নিশ্চিত করে বলা যেত।’
ধারণা সঠিক হয়ে থাকলে স্বভাব অনুযায়ী মা তিমিও আশপাশেই রয়েছে বলে ধারণা প্রকাশ করেন আরেক বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ।
সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ‘ব্রিডস হোয়েল প্রজাতির তিমির বাচ্চাটি আহত হয়ে বা খেলার ছলে টেকনাফ সাগর তীরে আটকা পড়লে স্থানীয় যুবক ও জেলেরা তাকে উদ্ধার করে পুনরায় সাগরে ফেরত পাঠায়, যা সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় জেলেদের এই মানবিক সহযোগিতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গোপসাগের সুন্দরবনের নিকটে অবস্তিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড অঞ্চলে সাধারণত সামুদ্রিক এই বৃহৎ প্রাণীদের উপস্থিতি আছে বলে আমরা জানি। যা এখান থেকে প্রায় ২৪০-২৬০ কিলোমিটার। তাই সেখান থেকে কোন মা তিমির সঙ্গে বা খেলতে খেলতে তিমিটি এখানে চলে আসতে পারে। তবে যেহেতু বাচ্চার দেখা মিলেছে তাই মা তিমির অবস্থান ও এখানে থাকতে পারে তা অবিশ্বাস্য নয়। তাই কোস্টা গার্ড ও উপকূলীয় বন বিভাগ এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানীয়দের এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত বলে মনে করছি। এবং এই বিষয়ে পরবর্তী আপডেট জনসাধারণ কে জানানো প্রয়োজন মনে করছি।’
রুবেল/বুলাকী
রাইজিংবিডি.কম