সিলেটে ধীরগতিতে নামছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
সিলেটে ধীর গতিতে বন্যার পানি কমছে। সুরমার কানাইঘাট পয়েন্ট ছাড়া সবকটি পয়েন্টেই বিদৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমেছে কুশিয়ারা আর সারিসহ সবকটি নদ-নদীতেও। তবে নিম্নাঞ্চলগুলো এখনও প্লাবিত রয়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে সোমবার (২৯ জুন) বেলা ১২টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে রোববার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। সেই হিসেবে দুপুর পর্যন্ত এ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ২৩ সেন্টিমিটার কমেছে।
একই সময়ে সিলেটে সুরমা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেখানে রাতে এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাশাপাশি কুশিয়ারার আমলশীদ, শেওলা, শেরপুর, ফেঞ্চুগঞ্জেও পানি প্রবাহ রাতের চেয়ে কয়েক সেন্টিমিটার কমেছে। পানি কমেছে লোভাছড়া, সারি এবং ধলাই নদেও।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বলছে, সিলেটে বৃষ্টিপাত কম হলেও সীমান্তের ওপারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর প্রভাবে সিলেট অঞ্চলের পানি ধীরগতিতে নামছে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটের কানাইঘাটে ৭০ মিলিমিটার এবং সিলেট সদরে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও সিলেটের পাঁচটি উপজেলার প্লাবিত নিম্নাঞ্চলের পানি নামছে না। করোনা সংকটের মাঝে আকস্মিক বন্যার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের। গ্রামীণ সড়কগুলো তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে বীজতলা এবং শতাধিক মাছের খামার।
সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সাথে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সুরমা পানি তীর উপচে প্রবেশ করেছে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায়ও।
বন্যা কবলিত এলাকার নলকূপগুলোও পানির নিচে। এ কারণে এসব এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে খাবারের সংকটও। অবশ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইনও বিতরণ করা হচ্ছে। শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন কয়েক সহস্রাধিক মানুষ।
সরকারি ত্রাণ হিসেবে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৩৫ মেট্রিক টন চাল এবং এক লাখ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ করেছে জেলা প্রশাসন। একই সাথে পাশ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জন্য ২০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৯২ হাজার টাকা এবং জৈন্তাপুর উপজেলার জন্য ২৬ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বন্যা দুর্গত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, বন্যা দুর্গতদের প্রয়োজনীয় শুকনো খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতের সিলেটের পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উপজেলাগুলো হলো- গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সিলেট সদর উপজেলার একাংশ। এর বাইরে নদী তীরের অন্য উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে।
সিলেট/সনি
রাইজিংবিডি.কম