ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ৩০ ১৪৩১

বেড়িবাঁধ নেই, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আজও তারা আতঙ্কে

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৯:০০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০
বেড়িবাঁধ নেই, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আজও তারা আতঙ্কে

বেড়িবাঁধ না থাকায় বাগেরহাটের তিন উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছেন। মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ও জিউধরা, মোংলা উপজেলার চিলা, বুড়ির ডাঙ্গা ও সুন্দরবন এবং রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া, পেড়িখালি, হুড়কা ও রামপাল সদর ইউনিয়ন নদীসংলগ্ন হলেও এসব এলাকার বাসিন্দাদের জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য নেই কোনো বেড়িবাঁধ। এসব ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষকে চলতে হয় জোয়ার-ভাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে।

এসব ইউনিয়নের মানুষকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ত পানি থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ে। বলেশ্বর, পানগুছি, কেওড়া, ঘষিয়াখালী নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা জনপদের মধ্যে বহরবুনিয়া, জিউধরা, চিলা, বুড়ির ডাঙ্গা, সুন্দরবন, ভোজপাতিয়া, পেড়িখালি, হুড়কা ও রামপাল সদর ইউনিয়নে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। এসব এলাকায় সড়কও তেমন উন্নত নয়। 

বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ওষুধ ব্যবসায়ী সোহাগ বলেন, ‘আমরা দ্বীপ ইউনিয়নে বাস করি। এই ইউনিয়নের চার পাশেই নদী। অথচ কোনো বেড়িবাঁধ নেই।‘ 

একই ইউনিয়নের মো. মাসুদ শিকদার বলেন, ‘বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে একসময় এ ইউনিয়ন ছেড়ে বেশিরভাগ মানুষ অন্যত্র পাড়ি জমাবেন।’ 

বহরবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার রিপন হোসেন বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে জোয়ার-ভাটার সাথে তাল মিলিয়ে জীবন চলছে আমাদের। এ এলাকার ৩৬ হাজার মানুষ সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। নদী ও খালে একটু পানি বাড়লেই ঘরের সামনের জায়গা তলিয়ে যায়। লবণাক্ত পানি আসায় ধান ও সবজি তেমন হয় না। জীবিকার প্রধান উৎস মাছের ঘেরও প্রতি বছর কয়েক বার ভেসে যায় জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে। উপজেলা ও জেলা শহরের সঙ্গে এ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ট্রলার ও নৌকা। চিকিৎসার জন্য যেতে হয় উপজেলা বা জেলা সদরের হাসপাতালে। যোগাযোগ ব‌্যবস্থা না থাকায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।‘ 

তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আমাদের এই ইউনিয়নে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা এ এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাই। তাহলে লবণাক্ত পানির কুপ্রভাব ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে আমরা রক্ষা পাব।’ 

রামপাল উপজেলার ভোজপাতি ইউনিয়নের নুরুল আমিন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ না থাকায় নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। স্থানীয়রা সব সময় আতঙ্কে থাকে, কখন যেন পানি এসে তলিয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাস হলে রাস্তা-ঘাট ভেঙে যায়, মাছের ঘের ভেসে যায়। যদি বেড়িবাঁধ থাকত তাহলে এ ধরনের সমস্যা হতো না।’ 

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘মোরেলগঞ্জের সন্ন‌্যাসী থেকে রামপাল হয়ে মোংলার জয়মনির ঘোল পর্যন্ত প্রায় ৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে ওই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।'

টুটুল/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়