ঢাকা     শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩১

হাত বদলে সবজির দাম বাড়ছে দ্বিগুণ 

গাজী হানিফ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৮:৩৩, ১ অক্টোবর ২০২০
হাত বদলে সবজির দাম বাড়ছে দ্বিগুণ 

নরসিংদীতে বাড়ছে সবজির দাম। হাত বদলে সবজির দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ছে। তবে ন‌্যায‌্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক।

বিক্রেতারা বলছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি ক্ষেত। ফলে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সবজির দাম বাড়ছে।

কৃষক বলছেন, পাইকারি বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে জিম্মি হওয়ার ফলে বাজারে সবজির ন্যায্যমূল্য পাওয়া হচ্ছে না। তবে ভোক্তাদের কিন্তু ঠিকই চড়া দামে সবজি কিনতে হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পেঁপে ও পুঁইশাক ছাড়া ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩০০ টাকায়। অথচ এক থেকে দেড় মাস আগেও ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে প্রায় সব ধরনের সবজি পাওয়া যেত।

নরসিংদীর সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলায়। এ সব উপজেলায় মৌসুমী সবজিসহ বেগুন, করলা, শসা, বরবটি, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, মরিচ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, কচু, আলু, ঢেঁড়স, পেঁপে, মূলা, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ হয়। এসব সবজি বেলাব উপজেলার বারৈচা ও নারায়ণপুর, রায়পুরা উপজেলার শিবপুর, মরজাল, শিবপুর, পালপাড়া, সৃষ্টিগড় কোন্দারপাড়া পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়।

পাইকারি ক্রেতারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজার থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০ ট্রাক শাক-সবজি কিনে রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় পাঠাচ্ছেন। নরসিংদীর শাক-সবজি এসব জেলার মানুষের চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগই পূরণ করে। 

বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর পাইকারি সবজি বাজার থেকে সবজি চাষি মরজাল গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, ‘পাইকারি ক্রেতারা স্থানীয় দালালদের সঙ্গে হাট বসার আগেই আলোচনা করে একটা দাম ঠিক করে নেন। সেই দামেই পাইকারি ব‌্যবসায়ীরা বাজার থেকে সবজি কেনেন। সিন্ডিকেটের কারণে শেষ পর্যন্ত কম দামে আমরা সবজি বিক্রি করতে বাধ‌্য হয়। আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্ট করে সবজি উৎপাদন করি ঠিকই কিন্তু বাজারে সঠিক দাম পাই না।’
বেলাব উপজেলার হোসেন নগর গ্রামের কৃষক আবু হোসেন বলেন, ‘সার ও কীটনাশকের দাম অনকে বেশি। সবজি চাষে এখন খরচ বেশি। কিন্তু বাজারে গিয়ে ঠিক মতো আমরা দাম পাই না। ভোক্তাদের কিন্তু ঠিকই চড়া দামে সবজি কিনতে হচ্ছে।’

সরজমিনে নরসিংদীর শিবপুর, বারৈচা ও পালপাড়া পাইকারি সবজির বাজারে দেখা গেছে, ১০০ মাঝারি আকারের লাউ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায়, প্রতি পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। নরসিংদী বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। পেঁপে পাইকারি প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়, প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকায়। খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। করলা প্রতিমণ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায়, প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। চাল কুমড়া ১০০ পিস পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকায়, প্রতি পিস থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

বরবটি প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায়, প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। কচুর লতি পাইকারি প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায়, প্রতি কেজি ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায়। খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা দরে। কাঁকরল পাইকারি প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকায়, প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায়, খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা দরে।

এছাড়া, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, ঢেঁড়স ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নরসিংদীর বটতলা বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন মনিরুজ্জমান নামে এক সরকারি চাকরিজীবী। সবজির দাম বাড়তি দেখে বিরক্ত প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে সবজির দাম বাড়ছে। বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী শাক-সবজির মূল্য বাড়িয়েছেন। এতে ক্রেতাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। স্থির বেতন দিয়ে বাজারে খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
একই বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘আমি ৫ বছর ধরে এই বাজারে সবজি ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সবজির সংকট একটু বেশি। কেননা এ নরসিংদীর উৎপাদিত সবজিই স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হতো। কিন্তু খরা আর টানা বর্ষণে অনেক সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাজারে সবজির সংকট দেখা দিয়েছে।’

ভেলানগর বাজারে সবজি ক্রেতা রিকশাচালক রব মিয়া বলেন, ‘সারা দিন রিকশা চালিয়ে যে আয় করি তা দিয়ে চাল কিনবো না সবজি কিনবো। সব কিছুর দাম বেশি। আয় কম, খরচ বেশি। বিপদে আছি।’

নরসিংদী/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়