হেফাজতের তাণ্ডব আর লকডাউনে অর্ধাহার-অনাহারে তারা
মাইনুদ্দীন রুবেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || রাইজিংবিডি.কম
কাঠের বাক্সটি কাঁধে ঝুলিয়ে সকাল ৬টায় বাসা থেকে বের হন অভিরাম ঋষি। দুই মাইল হেঁটে পৌঁছান ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে। এরপর সেখানে বসে জুতা সেলাই ও পালিশের কাজ করেন রাত পর্যন্ত। এতে ৫০০-৭০০ টাকা আয় হয় তার। এই উপার্জন দিয়ে সংসার চলে।
রোববার (১৮ এপ্রিল) সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্টেশনে বসে এক টাকাও রোজগার হয়নি তার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে লকডাউন চলছে। এতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ। আবার হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার পর এই স্টেশনে সকল আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে স্টেশনে লোকজনের আনাগোনা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ২৬ মার্চ বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাদ্রাসার ছাত্ররা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে। তারা রেলস্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়। এরপর থেকে স্টেশনে সব আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়। রেলমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন পরিদর্শন করে জানান, এখানে ট্রেন থামাতে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগতে পারে।
এ কারণে আয় হারিয়ে দুরবস্থার মধ্যে পড়েছেন অভিরাম ঋষি। তবে তিনি এক নন, রেলস্টেশনে জুতা সেলাই-পালিশের কাজ করা সবার একই অবস্থা।
অভিরাম জেলা শহরের ভাদুঘর ঋষিপাড়ার বাসিন্দা। মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানসহ তার পরিবারের সদস্য আটজন। অভিরাম ঋষি বলেন, খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে তার। অন্য সময় প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু এখন কাজ নেই। আয়ও নেই।
রেলস্টেশনে থাকা রতন মনো বলেন, ছয়/সাতদিন পার কাজে বের হয়েছেন। সকাল থেকে বসে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৬০ টাকা রোজগার করেছেন। লকডাউন না থাকলে ও ট্রেন এখানে থামলে দিনে ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। পরিবারে মা, বোন, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কষ্টে আছেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের এখন অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হয়। তার পাশে থাকা স্বপন বলেন, এখন খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। কী করোনা এলো। এখন না খেয়ে মরতে হচ্ছে।
সুমন বলেন, করোনার এই সময়ে কেউ একটু সহায়তাও করে না। পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।
/বকুল