বাঙ্গির বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চকপুকুরিয়া গ্রামের মালতি হালদার। স্বামী স্বপন হালাদার পেশায় একজন কৃষক। ঘরে রয়েছে নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছেলে ও ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া এক মেয়ে। এ বছর নিজ হাতে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে করেছেন বাঙ্গি চাষ। ফলনও হয়েছে ভাল। তবে দাম নিয়ে সংশয়ে থাকলেও এবছর ভাল দাম পাওয়ায় মুখে ফুটেছে হাসি।
কৃষাণী মালতি হালদার বলেন, ‘গত বছর করোনা ও লকডাউনের কারণে বাঙ্গি বিক্রি করতে পারিনি। এতে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছিল। তবে এবছর আগাম চাষ করার পাশাপশি ভাল দামে বিক্রি করতে পারায় গত বছরের লোকসান কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি লাভ ভাল হয়েছে।’
তার মতই এবছর লাভবান হয়েছেন কোটালীপাড়া উপজেলার কয়েক হাজার বাঙ্গি চাষি।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জে ৬’শ হেক্টর জমিতে ফুটি বা বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। সময় মত বীজ-সার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। আগাম চাষ করায় লাকডাউনের আগে বিক্রি করতে পারায় এবং ভাল দাম পেয়ে লাভবান হওয়ায় গত বছরের লোকসান কাটিয়ে ওঠায় হাসি ফুটেছে কয়েক হাজার কৃষকের মুখে।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কোটালীপাড়া উপজেলার তেঁতুল বাড়ি, মাছপাড়া, নলুয়া, বুরুয়া, কুমুরিয়া, চকপুকুরিয়া ও হিজল বাড়িসহ বিভিন্ন গ্রামে বাঙ্গির চাষ করেছেন এ এলাকার কয়েক হাজার কৃষক। এসব গ্রামের কৃষকদের একমাত্র আয়ের উৎস বাঙ্গি চাষ। গত বছর লকডাউনের কারণে বিক্রি করতে না পাড়ায় এ বছর আগাম বাঙ্গির চাষ করে এসব এলাকার কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি সময়মত বীজ-সার পওয়ায় ক্ষেতে ফলনও হয়েছে ভাল।
প্রকার ভেদে একটি বাঙ্গি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এব এক’শ পিস বাঙ্গি সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষে কৃষকদের খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদে বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে লাভ করছেন কৃষক।
বাঙ্গির মৌসুমকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় গড়ে ওঠেছে আড়ত। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল আড়তে নিয়ে আসেন। পরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে এখানকার বাঙ্গি কিনে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। এছাড়া অনেক পাইকররা সরাসরি কৃষিকদের কাছ থেকে জমি থেকেই বাঙ্গি কিনছেন। এ মৌসুমে অন্তত: কয়েকশো কোটি টাকার বাঙ্গি বিক্রি হবে এ এলাকায়।
কৃষক অমৃত হালদার, ক্ষিতিশ পান্ডে, বাশার কাজী বলেন, ‘গত বছর বাঙ্গি বিক্রির সময় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। ফলে ফসলই বিক্রি করতে না পারাতে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে। এতে আমাদের লোকসান হয়েছিল। এবছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে আগাম বাঙ্গির চাষ করেছি। এতে ভাল ফলন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গি বিক্রি করে লাভ করেছি। এতে গত বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।’
কৃষক শংকর হাজরা, দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘এবছর ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। এতে গাছ মারা না যাওয়া ফলন ভাল পেয়েছি। দেশের বিভিন্ন পাইকরা এসে বাঙ্গি কিনে নিয়ে যচ্ছে। দাম ভাল পাওয়ায় আমাদের লাভও ভাল হচ্ছে।’
বরিশাল জেলার বানরীপাড়ার পাইকার বাদশা মিয়া বলেন, ‘এখনকার উৎপাদিত বাঙ্গি সুস্বাদু ও ভাল হওয়াতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানে থেকে আমরা পিস হিসাবে বাঙ্গি কিনে থাকি। পরে এগুলো ট্রাকে করে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকি।’
কালিগঞ্জের আড়তদার প্রদীপ বনিক বলেন, ‘এ বছর ভাল ফলন হবার পাশপাশি ভালো দামে বিক্রি করতে পারায় পরিস্থিতি এবার ভিন্ন। এবছর কালিগঞ্জে অর্ধশতাধিক আড়ত বসেছে। কৃষকরা তাদের বাঙ্গি জমি থেকে তুলে আড়তে নিয়ে আসছেন। সেখান থেকে পাইকররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এবছর কৃষকরা লাভবান হয়েছেন।’
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় জানান, এ বছর গোপালগঞ্জে ফুটির বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য এবছর কৃষকদের আগাম বাঙ্গির চাষ ও আগাম বিক্রির জন্য পরামর্শ দিয়েছিল কৃষি বিভাগ। প্রথম দিকে পাইকারা এখানে এসে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বা আড়ত থেকে বাঙ্গি কিনেছেন। তবে আবারও লকডাউন ঘোষণা করায় অ্যাপসের মাধ্যমে কৃষক তার উৎপাদিত ফসল বিক্রি ও পাইকাররা কিনতে পারছেন। এবছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ/বুলাকী