ঢাকা     শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার ৬ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ২৭ মে ২০২১   আপডেট: ১৩:৫৮, ২৭ মে ২০২১
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার ৬ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার সাত উপজেলার ৬টির শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে এসব গ্রাম। এছাড়া পানিতে ভেসে গেছে সাড়ে চার হাজার মাছের ঘের। এতে সর্বস্বান্ত হয়েছেন মাছচাষিরা। 

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বিষয়টি জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

সরেজমিনে দেখা যায়, জলোচ্ছ্বাসে জেলার উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরাসহ কয়েকটি ইউনিয়ন ও উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রিউলা ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এসব এলাকার পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়াও লক্ষাধিক একর জমির চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।

এর আগে (২৬ মে)বুধবার জোয়ারের চাপে শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাপা গ্রামে বেড়িবাঁধের চারটি পয়েন্ট, পাতাখালির দুটি পয়েন্ট, রমজাননগরের দুটি পয়েন্ট, গাবুরার তিনটি পয়েন্ট, কৈখালির দুটি পয়েন্ট, ভেটখালি জামে মসজিদের সামনে একটি পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনীর তিনটি পয়েন্ট ও নূরনগর ইউনিয়নের একটি পয়েন্টসহ অন্তত: ১৭টি স্থানে পানি বেড়িবাঁধ উপচে গ্রামে ঢুকে পড়েছে।

এদিকে, দেবহাটা উপজেলার ইছামতী নদীর কোমরপুর নামকস্থানে বেড়িবাঁধ উপচে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়দ্দহ মসজিদের পাশে ও তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআর এম এর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানির আঁধার পুকুরগুলো। পানির তোড়ে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে না উঠলেও গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়ে বহু মানুষ বাড়ির নিকটবর্তী উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

স্থানীয়রা এ ভয়াবহ অবস্থার জন্য অর্ধশত বছর আগের সেই জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধকে দায়ী করছেন । তাদের অভিযোগ, দিন আসে, দিন যায়, বদলায় অনেক কিছু। শুধু বদলায় উপকূলের বেড়িবাঁধের চেহারা। প্রতিবছর দুর্যোগ আসে, কিন্তু বাঁধগুলো সংস্কার করা হয় না। ঠিক দুর্যোগ মুহূর্তে কিছু বালির বস্তা নিয়ে হাজির হয় কর্তৃপক্ষ।

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কোথাও ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, উপকূলীয় বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৪০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে ভাটার সময় পানি সরে গেছে। বর্তমানে ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি আছেন।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের পর উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে উপকূলীয় বাঁধ উপচে ও বাঁধ ভেঙে ৪ হাজার ৫৬০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার।

জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, তার কাছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে শ্যামনগরের ১২টি পয়েন্টে ভাঙন ও বাঁধ উপচে এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কিছু মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।

জেলায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ পানি নেমে যাওয়ার পরে নিরূপণ করা সম্ভব হবে এবং ক্ষত দৃশ্যমান হবে বলে জানান। 

শাহীন/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়