ঢাকা     রোববার   ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২১ ১৪৩১

‘বিনা পয়সায় সিজার করাতি পারবো স্বপ্নেও ভাবিনেই’

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৩ জুন ২০২১   আপডেট: ১২:২১, ৩ জুন ২০২১
‘বিনা পয়সায় সিজার করাতি পারবো স্বপ্নেও ভাবিনেই’

‘পয়সা ছাড়া সিজার হয় জীবনের প্রথম শুনলাম।  গরিব মানুষ কাজ করে খাই। বিনা পয়সায় সিজার করাতি পারবো স্বপ্নেও ভাবিনেই। কুড়িডে হাজার টাহা বাঁচে গিলো। গরীব মানসির জন্যি সরকার এতো বড় ব্যবস্থা করে রাখছে আগে জানতাম তা। আল্লাহ ডাক্তার স্যার গেরে বাঁচায় রাহুক।’  

বলছিলেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের পাচুড়িয়া গ্রামের তোফায়েল বিশ্বাস।

দরিদ্র কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করেন তোফায়েল বিশ্বাস। স্ত্রী মাসুরা সন্তান সম্ভবা। যেকোনো সময় সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে। স্থানীয় কয়েকটি ক্লিনিকে গেছেন। সবার কথা প্রায় এক- কমছে কম বিশ হাজার টাকা লাগবে প্রসূতিদের সিজার করতে।

ধার করে গবাদিপশু বিক্রি করে টাকা যোগাড় করেছেন। ক্লিনিকে যাবেন। এ সময় একজনের পরামর্শে যোগাযোগ করেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মকসেদুল মোমিনের সঙ্গে। তিনি বিনা খরচে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতির সিজার করিয়ে দেন।

বুধবার (২ জুন) দরিদ্র গৃহবধু মাসুরার অস্ত্রোপচার করলেন মাগুরার সিভিল সার্জন শহীদুল্লাহ দেওয়ান ও মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মকসেদুল মোমিন। অস্ত্রোপচারের মধ্যদিয়ে ৬ বছর বন্ধ থাকার পর মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার অপারেশন চালু হলো। এখন থেকে এই প্রসূতিসেবা চালু থাকবে বলে তারা জানান।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সব রকম ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে শুধু একজন বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিৎসক, একজন অবেদনবিদ (অ্যানেসথেসিওলজিস্ট) ও দু’জন সেবিকার অভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকার এ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছিল। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছিলেন দরিদ্র পরিবারের প্রসূতিরা।

সিভিল সার্জন কার্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে প্রত্যন্ত এলাকার প্রসূতি ও শিশুদের সঠিক এবং উন্নত সেবা দিতে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনে আধুনিক সুবিধাসহ প্রসূতি অস্ত্রোপচারকক্ষ স্থাপন করা হয়। অস্ত্রোপচারের স্বার্থে অবেদনবিদ ও শল্যচিকিৎসকও (সার্জন) নিয়োগ দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি অস্ত্রোপচার শুরু হয়। বেশকিছু অস্ত্রোপচার হওয়ার পর ২০১৪ সালে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচারকারী শল্যচিকিৎসক বদলি হয়ে চলে যান। এরপর এ পদে আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে বন্ধ হয়ে যায় প্রসূতি অস্ত্রোপচার।

৬ বছর পর মাগুরার সিভিল সার্জন বিশিষ্ট শল্যচিকিৎসক শহীদুল্লাহ দেওয়ানের নেতৃত্বে ডা. মকসেদুলু মোমিন, সৌমেন সাহা, ডা. সাইমুন নিছা, ওটি নার্সসহ অন্যান্য সবাই মিলে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি অস্ত্রোপচার করলেন।

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মা মাসুরা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। অস্ত্রোপচারের যন্ত্রণার পরেও মুখে হাসি মাসুরার। তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালে চারদিক সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিনা খরচে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পেরে তিনি দারুণ খুশি।

মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মকসেদুল মোমিন জানান, অস্ত্রোপচার চালুর জন্য লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহু আগেই জানানোর পর সমাধান হলো। চেষ্টা করব সেবা প্রদান অব্যাহত রাখার।

সিভিল সার্জন শহীদুল্লাহ দেওয়ান  বলেন,  ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চালুর জন্য চিকিৎসক ও সেবিকা নিয়োগ দিয়েছেন। নিজ হাতে একটি সিজার করে আবার চালু করলাম। এখন সেবাটা গতিশীল করাই লক্ষ্য।

শাহীন/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়