‘প্রধানমন্ত্রী আমারে ঘর দিছে আর কষ্ট কইরা থাকতে হইবো না’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ঘরের চাবি ও দলিল নিচ্ছেন কুলসুম বেগম
‘স্বামী মইরা গেছে অনেক আগেই। স্বামী মরার পর দুই ছেলে এখন আর খবর নেয় না। দুই মাইয়া মাইরা গেলেও অন্য মাইয়াটা এক ছেলে আর তিন মাইয়া লইয়া আমার লাগে থাকে। মাইয়াটা বাজারের হোটেলে আর তিন নাতনিই বাসা বাড়িতে কাজ করে। যা পাই তাই দিয়াই কোনো রকম চইল্যা যায়। শহরের থানাপাড়ার ৫’শ ট্যাহায় ভাড়া থাকতাম। তিন বেলা খাইতে পারি না সেহানে ভাড়া দিমু ক্যামনে। তবে অহন প্রধানমন্ত্রী আমারে ঘর দিছে আর আমাগো কষ্ট কইরা থাকতে হইবো না। মাথা গোঁজার ঠাই পাইছি। প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তারে যেন দীর্ঘজীবী করে।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ঘর পাওয়া কুলসুম বেগম।
কুলসুম বেগম জানান, তার বয়স এখন ৯৫। স্বামী জব্বার মাতুব্বর মারা গেছেন অনেক আগেই। বয়সের ভারে ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না তিনি। তার রয়েছে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। দুই ছেলে আলাদা থাকলেও তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে মারা গেছে। অপর মেয়ের বিয়ে হলেও স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় এখন আর খোঁজ খবর নেয় না। মেয়ে আর চার নাতী-নাতনী নিয়ে বসবাস করেন কুলসুম বেগম।
তারই মত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পাওয়া ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে জেলার চার উপজেলার ৫৫৫টি পরিবারের।
রোববার (২০ জুন) সকালে গোপালগঞ্জে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেওয়া ৫৫৫টি ঘর ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের মত গোপালগঞ্জেও এসব ঘর বিতরণ উদ্বোধন করেন।
সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ঘর বিতরণ অনুষ্ঠান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওসমান গনি, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুর রহমান, পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকুসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সুবিধাভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর বিতরণের উদ্বোধনের পর অতিথিবৃন্দ ভূমি ও গৃহহীন চারটি পরিবারের হাতে ঘরের চাবি ও জমির দলিল তুলে দিয়ে এসব ঘর বিতরণ করেন। এছাড়া জেলার কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী, মুকসুদপুরেও ঘর বিতরণ করা হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের ৫ উপজেলায় ২য় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার ৮০৭টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫৫৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন পরোপুরি হয়েছে। এতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৮১টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ১৩০টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ১১০টি, কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩৪টি ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৫০টি ঘর রয়েছে। এসব ঘরে রয়েছে দু’টি কক্ষ, একটি রান্না ঘর, একটি বারান্দা ও একটি বাথরুম। প্রতিটি ঘরের জন্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বাকী ২৫২টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
ঘর পাওয়া হেদায়েত সিকদার (২২) জানান, মা-বাবা মারা যাওয়ার পর পরের জমিতে কৃষি কাজ করতেন। প্রতিদিন ৩’শ টাকা আয় করেন তিনি। সামান্য আয় দিয়ে স্ত্রী ও দুই বোন নিয়ে চারজনের সংসার চালাতে হিমশিহ খাচ্ছিলেন তিনি। সেখানে ভাড়া বাসায় থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়েছেন আর তাকে কষ্ট করে থাকতে হবে না। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
উপকারভোগী আবতাব বিশ্বাস ও মো. টিক্কা শেখ বলেন, ‘দিন মজুর করে জীবিকা নির্বাহ করি। ঘরে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক প্রতিবন্ধী মেয়ে রয়েছে। দিন মজুরি করে সারা মাসে মাত্র তিন থেকে চার হাজার টাকা রোজগার করি। তা দিয়ে ঘর ভাড়া তো দূরের কথা সংসার চালানোই কষ্টকর। তবে এবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়েছি। মাথা গোঁজার ঠাঁয় পেয়ে এখন নিশ্চিন্ত। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওসমান গনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘর বিতরণ উদ্বোধনের পর জেলার চার উপজেলায় ৫৫৫টি ঘরের চাবি ও জমির দলিল বিতরণ করা হয়। এর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার ৮৪৮টি পরিবার নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন। প্রকল্প-২ এ পাচ্ছে আরও ৮০৭টি ঘর। যারা বাকী আছেন তাদেরও পর্যায়ক্রমে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে। এ জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
গোপালগঞ্জ/বুলাকী