রেকর্ড উৎপাদনেও হতাশ চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
নায্যমূল্য না-পাওয়ায় একজন আমচাষি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। গত ১৬ জুন জেলার শিবগঞ্জের নয়ালাভাঙ্গা এলাকার লালচাঁন আত্মহত্যা করেন।
‘আমের রাজধানী’তে আমের বাজারে ছন্দপতন। জেলায় আমের উৎপাদন ভালো হলেও কপাল পুড়েছে অনেক আমচাষির। কঠোর লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার না-আসায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে আমের নায্যমূল্য না-পাওয়ায় একজন আমচাষি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। গত ১৬ জুন জেলার শিবগঞ্জের নয়ালাভাঙ্গা এলাকার লালচাঁন আত্মহত্যা করেন। পরিবারের দাবি আমের ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
রোজার ঈদের পর করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এ কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আম ব্যবসায়ী আসতে পারেন নি। কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে বাজারেও। ফলে মৌসুমের শুরুতেই আম বিপণনে দেখা দেয় গভীর শঙ্কা। বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিওসার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দাবি চলতি বছর জেলার আম ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে।
এদিকে আম-বাগান ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত ক্রেতা না-থাকায় গাছেই পাকছে আম। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পাকা আম ঝরে পড়ছে। আমচাষিরা বলছেন, ১৪ দিনের লকডাউন শেষে আম ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে কঠোর লকডাউন শিথিল করলেও বাইরের ব্যবসায়ীরা আসে নি। এই সুযোগে স্থানীয় আড়তদাররা আম বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষি বাদশা বলেন, ‘বাধ্য হয়েই আমাদের স্থানীয় আড়তদারকে আম দিতে হচ্ছে। ফলে আমের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম।’
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে আম। গত বছর খিরসাপাত বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা মণ। এ বছর বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। গত বছর ল্যাংড়া আম বিক্রি হয়েছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ। এবার বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। ক্রেতা না থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ৫৫ কেজিতে এক মণ হিসেবেও আম বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য বৈদেশিক বাজার সৃষ্টির বিকল্প নেই। এ জন্য আম রপ্তানি ব্যয় ও প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। এখন আম রপ্তানি হলেও তা খুব কম। এ দিকে নজর দিলে আমচাষিরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে বলে তারা মনে করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন আড়াই লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিউসার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, জেলায় দেড় হাজার কোটি টাকার আম উৎপাদন হলেও ১০০০ কেটি টাকা আসতে পারে। এর প্রধান কারণ করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন এবং চলমান বিধিনিষেধ। এমন চলতে থাকলে আগামী বছর জেলার আমচাষিরা আম চাষে নিরুৎসাহিত হবেন।
শিয়াম/তারা