১২ কি.মি. সড়ক গাজীপুরবাসীর গলার কাঁটা
রফিক সরকার, গাজীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৬ সালে। কয়েক দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে ২০১৮ সালে আনা দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা এবং সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক থেকে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও স্বল্প সময়ে যাতায়াত সুবিধার জন্য এই প্রকল্প। তবে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি, সড়কের সিংহভাগ দখল করে নির্মাণযজ্ঞ এবং বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করেই গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গাজীপুরবাসী। বর্ষায় দুর্ভোগ বর্ণনাতীত ভোগান্তিতে রূপ নিয়েছে।
গাজীপুরের জৈনাবাজার থেকে রাজধানীর গুলিস্তানে প্রতিদিন তিনবার যাওয়া-আসা করতেন প্রভাতী পরিবহনের চালক বিল্লাল হোসেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে যানজটের কারণে একবারের বেশি তিনি যেতে পারেন না। বিল্লাল বলেন, জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার যেতে লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। বৃষ্টি হলে ভোগান্তি চরমে ওঠে। তখন লাগে প্রায় ৫ ঘণ্টা। ২০ মিনিটের এই পথ এখন আমাদের গলার কাঁটা।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার সাবেক কর আদায়কারী মোবারক হোসেন গত ১৫ জুন সন্ধ্যায় গাজীপুর থেকে উত্তরায় যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন। এক কিলোমিটার না যেতেই ভোগড়ায় তিনি যানজটের কবলে পড়েন। প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি বাধ্য হয়ে হেঁটে রওনা দেন। ‘অবশেষে রাত আড়াইটাই বাসায় পৌঁছেছি!’, চরম বিরক্তি নিয়ে বলেন মোবারক হোসেন।
শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক জানান, এলাকার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রোগী আগে ঢাকায় পাঠানো হতো। জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয় রোগীদের। তাই জরুরি রোগীদের এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরুর পরেই মূলত দুর্ভোগের সৃষ্টি। এই সড়কে এমনিতেই গাড়ির চাপ বেশি। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুরবাসীও এই রুটে ঢাকা আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গাজীপুর চৌরাস্তায় আসার পর। এখান থেকেই শুরু হয়েছে বিআরটি’র কাজ। যানজট কমানোর কোনো পদক্ষেপ বা বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা না করেই প্রকল্পের কাজ করায় কয়েক বছর ধরেই ভুগছেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন অংশে যানবাহন আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বৃষ্টির পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জলজট সৃষ্টি হচ্ছে। টঙ্গী থেকে চেরাগ আলী, সাতাইশ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর স্টেশন রোড, চৌধুরী বাড়ী, তারগাছ, ঢাকা বাইপাস মোড় ও ভোগড়া এলাকায় সড়কে খানাখন্দ বেশি। বিশেষ করে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে ড্রেন তৈরির কাজ চলমান হওয়ায় ভোগান্তি আরো বেড়েছে।
ধীরগতির উন্নয়ন কাজ, সিংহভাগ সড়ক দখল করে নির্মাণযজ্ঞ, সড়কের মধ্যেই নির্মাণ সামগ্রী রাখা, কয়েক স্থানে এক লেনের সড়কে অধিক যানবাহনের চাপেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অসহনীয় যানজটে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় সময়মতো পণ্য পরিবহনেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গাজীপুর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক খানাখন্দে ভরা। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেই, সেইসঙ্গে উন্নয়ন কাজ চলমান। অধিকাংশ স্থানে সড়ক বিভাজন নেই। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে যানবাহন আটকে পড়ছে। আমরা সীমিত জনবল দিয়ে কোনোভাবেই সড়কের এই অংশে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছি না। তবে এই সড়কে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা নেই বলেও জানান তিনি।
বিআরটি প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ বলেন, ‘প্রকল্প শুরুর আগে বিকল্প সড়ক নির্মাণের সুযোগ না থাকায় ডাইভারশন সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। তবে নানা প্রতিবন্ধকতা ও করোনা মহামারির মধ্যেও আমরা প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। কোনো অঘটন না ঘটলে নির্ধারিত সময়ে আগামী এক বৎসরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।’
উল্লেখ্য যে, ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ২০১২ সালে বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৬ সালে। কয়েক দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে ২০১৮ সালে আনা দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা এবং সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
ঢাকা/তারা