ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১০ ১৪৩১

পানছড়ি আশ্রয়ণে তীব্র পানি সংকট

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৪ জুন ২০২১   আপডেট: ০৯:৪০, ২৪ জুন ২০২১
পানছড়ি আশ্রয়ণে তীব্র পানি সংকট

হবিগঞ্জের পানছড়ি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সিংগভাগ বসতঘরের টিনের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে। ফলে একটু বৃষ্টি আসলেই এইসব ঘরের চাল দিয়ে  পানি পড়ে। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে আছেন এখানকার বাসিন্দারা।

বুধবার (২৩ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়,  পানছড়ি আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি জেলার চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের রঘুনন্দন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। ২০০০ সালে এখানে প্রায় ৫০ একর পাহাড়ি জমি নিয়ে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। সে সময় ৫০টি ব্যারাকে বিভিন্ন স্থানের দরিদ্র ৫০০ ভূমিহীন পরিবারকে এখানে পুনর্বাসন করা হয়েছিল।

বর্তমানে এখানে থাকা পরিবারগুলো তীব্র পানি সংকটে আছেন। এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে গভীর পুকুর ও নলকূপ নাই। এগুলো বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আবার অনেকগুলো দিয়ে পানি আসছে না। আর যে কয়েকটি আছে,তা দিয়ে হচ্ছে না সংকুলান। এ অবস্থায় অনেক দূর থেকে তাদেরকে পানির সংগ্রহ করতে হয়। একই সঙ্গে তাদের বসতঘরের টিনের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে। এতে অল্প বৃষ্টি হলেই ঘরগুলোতে পানি পড়ে। তখন তদের ভোগান্তির সীমা থাকে না।  রাতে বৃষ্টি হলে তাদেরকে নির্ঘুম কাটাতে হয়।

আরো পড়ুন:

এদিকে, অভাবি এই মানুষগুলোর বসবাসের ঘর মেরামত করা টাকা পয়সা নেই। যাদের নুন আনতে পানতা ফুরোয় তাদের কাছে ঘর মেরামত করাটা যেন এক ধরনের বিলাসিতা।

আশ্রয়ণের বাসিন্দা নিবাস বণিক জানান, এই আশ্রয়ণের বাসিন্দারা  জ্বালানি কাঠ (লাকড়ি), সবজি চাষ, গাড়ি চালানোসহ বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন।  এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে তারা খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে। তাদের অনেকেই তিনবেলা পেটভরে খেতেও পারে না। এখানে তারা কিভাবে ঘর মেরামত করবে?’

আশ্রয়ণের বাসিন্দা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ আমরা যারা এখানে থাকি, তারা খুব দরিদ্র। এক বেলা খেলে, পরের বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। বর্তমানে এই ঘরগুলো ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। টাকার অভাবে ঘরগুলো মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারিভাবেও মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় বৃষ্টি এলে টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে ঘরের বিভিন্ন স্থানে পানি পড়ে। বিশেষ করে রাতে বৃষ্টি হলে ঘুমানো কঠিন হয়ে যায়। বৃষ্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।’

আশ্রয়ণের বাসিন্দা রুপচরণ দেবনাথ, সুরন্দ দেবনাথ, অর্পনা পালরা বলেন,  ‘এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই সুপেয় পানি। আমরা  পুকুর খনন তো দূরের কথা গভীর নলকূপই বসাতে পারি না। গোসলের জন্যও যেতে হয় অনেক দূরে। না হলে পানি নিয়ে এসে বাড়িতে গোসল করতে হয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যদিও সরকারিভাবে অগভীর নলকূপ স্থাপন করে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই আমরা।’

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার তাউস মিয়া বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নলকূপ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া ঘর মেরামত করে দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসেনর কাছে দাবি জানানো হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সত্যজিত রায় দাশ জানান, আশ্রয়ণের ঘরগুলোর টিনের চাল মেরামত করে দেওয়ার জন্য বাসিন্দারা দাবি জানিয়েছেন। বরাদ্দ সাপেক্ষে দ্রুত মেরামত করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যবহারের জন্য পানির সংকট দূর করতে নলকূপ ও পুনরায় পুকুর খননের জন্য আলোচনা করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়