ঢাকা     সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১০ ১৪৩১

কার্ড আমেনার, ভাতা পায় অন্যজন

নেত্রকোনা সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৫, ১৫ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১১:৩০, ১৫ জুলাই ২০২১
কার্ড আমেনার, ভাতা পায় অন্যজন

ভুক্তভোগী আমেনা আক্তার (৭৪)

‘স্বামী-সন্তান কেউ নেই। একলা একলা দুঃখেই দিন যায় আমার। সরকার আমারে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিছে। ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলছি। এহন সাত মাস ধরে টাকা নাই। ঈদ আইছে সামনে। এহানে (সমাজসেবা কার্যালয়ে) দুদিন ধরে আইতাছি টাকার লাগি। এহন কয় আমার টাকা কেডা নিয়ে গেছে। কেডা নিয়ে গেল আমার টাকা?’

বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে মদন উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সামনে বসে কথাগুলো বলছিলেন স্ত্রী আমেনা আক্তার (৭৪)। আমেনা নেত্রকোনার মদন উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নায়েকপুর গ্রামের মৃত কেনু খানের স্ত্রী।

তার কথা শুনে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘরে বসে ভাতার টাকা উত্তোলন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শুরু হয়েছে। মোবাইল নম্বরে নগদ অ্যাকাউন্টে ভাতাভোগীদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। আমেনা আক্তারের ভাতার টাকা ০১৩১৪-৯৪৪২৬৮ নম্বর নগদ অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। ওই নম্বরে ফোন করলে উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের মাখনা গ্রামের হুমায়ূন মিয়া নামের একজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। এ সময় আমেনা আক্তারের বয়স্ক ভাতার তিন হাজার টাকা তার নগদ অ্যাকাউন্টে গিয়েছে বলে স্বীকার করেন। টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে নম্বরটি বন্ধ করে দেন। পরে একাধিকবার ফোন করলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এমন আরও অনেক অভিযোগ নিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রতিদিনেই উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ঘুরছেন। 

আরো পড়ুন:

বুধবার দুপুরে দেখা যায় অর্ধশতাধিক লোকজন তাদের নম্বরে ভাতা টাকা না পেয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমিয়েছে। এ সময় উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের বাসিন্দা বিধবা ভাতাভোগী রহিমা খাতুন বলেন, ‘আগে ব্যাংক থেকে ভাতা নিয়েছি। এখন মোবাইল নম্বরে ভাতা যাবে বলেছে। ০১৯১৫০৯৯৮৮২ এই নম্বরে নগদ অ্যাকাউন্ট খুলেছি। কিন্তু দুই মাস ধরে কোনো টাকা আসেনি।’

মদন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৯০৩ জন। তার মধ্যে বিধবা তিন হাজার ২৮২ জন, প্রতিবন্ধী এক হাজার ৭২৭ ও বয়স্ক ভাতাভোগী পাঁচ হাজার ৮৯৪ জন। তাদের প্রত্যেককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ১২০ জন ভাতাভোগীর টাকা নিয়ে সমস্যা রয়েছে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ জামাল আহম্মেদ ভাতাভোগীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘টাকা পায়নি ১২০ জন ভাতাভোগীর তালিকা পেয়েছি। তবে নগদে যারা কাজ করছেন তাদের জালিয়াতিতে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ সব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি । আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।’

দেবল/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়